|
|
|
|
হুগলিতে সংখ্যায় বাড়ছে স্বনির্ভর গোষ্ঠী, প্রকল্প রূপায়ণ নিয়ে প্রশ্ন |
পীযূষ নন্দী • আরামবাগ |
খাতায়-কলমে হুগলি জেলার পঞ্চায়েতগুলিতে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সংখ্যা বেড়েছে। কিন্তু তাতে কী সুবিধা হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন গ্রামবাসীরা। তাঁদের অভিযোগ, অধিকাংশ গোষ্ঠী রয়েছে নামেই। তাদের কাজ চোখে পড়ছে না। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যদের অভিযোগ, প্রকল্প রূপায়ণে সরকারি দফতরগুলির মধ্যে সমন্বয়ের অভাব আছে। সে কারণেই সব প্রকল্প ঠিকমতো রূপায়ণ হচ্ছে না।
কেন্দ্রীয় পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের ‘স্বর্ণজয়ন্তী গ্রাম স্বরোজগার যোজনা’ (এসজিএসওয়াই) প্রকল্পটি চালু হয় ১৯৯৯ সালে। এই দারিদ্র দূরীকরণ কর্মসূচিটির লক্ষ্য, স্বনির্ভর দল গঠন করে গরিব মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতি। তাঁদের সক্ষমতা বাড়ানো এবং তাঁদের কাছে ঋণ ও অনুদানের সুযোগ পৌঁছে দেওয়া। যাতে দারিদ্রসীমার নীচে (বিপিএল) থাকা গ্রামবাসীদের দারিদ্রসীমার উপরে (এপিএল) আনা যায়।
জেলায় এই প্রকল্পে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির জন্য প্রশিক্ষণ, পরিকাঠামো তৈরি, বিমা, ঋণ এবং উৎপাদিত জিনিসপত্র বিপণনের সহায়তা দেওয়ার ব্যবস্থা থাকলেও তা কার্যকর হচ্ছে না বলে অভিযোগ গ্রামবাসীদের। ফলে, বিপিএল থেকে এপিএলে উত্তরণের নমুনা নামমাত্র বলে তাঁদের দাবি। যেটা এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। এই প্রকল্পে জেলায় গত মার্চে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সংখ্যা ছিল ১০ হাজার ৭৭২টি। সেপ্টেম্বরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৬৮৪-তে। বিভিন্ন স্বনির্ভর গোষ্ঠী প্রকল্প রূপায়ণের জন্য আবেদন জানালেও মাত্র ১২৮টি গোষ্ঠীকে ব্যাঙ্ক ঋণ দিয়েছে। প্রশাসনের মতে, ওই গোষ্ঠীগুলি সঠিক পথে এগোচ্ছে। তাই ঋণ পাওয়া সহজ হয়েছে।
কিন্তু অন্যান্য গোষ্ঠী সেই কাজ করতে পারছে না কেন?
স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে পরিচালনার মূল দায়িত্ব পঞ্চায়েতের। পঞ্চায়েতগুলি এ জন্য ‘সম্পদ কর্মী’ নিয়োগ করে। যাঁদের কাজ, স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে উপযুক্ত পরামর্শ দেওয়া এবং প্রকল্প রূপায়ণে সহায়তা করা। জেলার অনেক বিডিও-ই স্বীকার করেছেন, “প্রকল্পটিকে কেন্দ্র করে স্বপ্ন পূরণ হয়নি। পঞ্চায়েতগুলির অবহেলা এবং উদাসীনতা আছে। গোষ্ঠীগুলিকে যাঁরা তদারকি করেন, সেই সম্পদ কর্মীরা সক্রিয় নন।” আরামবাগ মহকুমার ৬টি ব্লকের মধ্যে গোঘাট-২ ব্লক ছাড়া সর্বত্রই মহিলা উন্নয়ন আধিকারিক পদটি ফাঁকা। মহিলা উন্নয়ন আধিকারিকই প্রকল্পটির ব্লক স্তরের নোডাল অফিসার। গোঘাট-১ ব্লকের বিডিও জয়ন্ত মণ্ডল এবং খানাকুল-১ এর বিডিও সুপ্রভাত চট্টোপাধ্যায় বলেন, “মহিলা উন্নয়ন আধিকারিক পদটি ফাঁকা থাকায় গোষ্ঠী সংক্রান্ত তদারকি ঠিকমতো সম্ভব হচ্ছে না। যে অফিসারকে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে, তিনি নিজের কাজ সামলে বিশেষ সময় দিতে পারছেন না।”
তৃণমূল অবশ্য জেলার অধিকাংশ স্বনির্ভর গোষ্ঠীর গতিহীন হয়ে পড়ার পিছনে সিপিএমকেই দুষছে। বিভিন্ন এলাকার তৃণমূল নেতৃত্বের অভিযোগ, এসজিএসওয়াই প্রকল্পে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর পিছনে সিপিএমের লোকজনই লুঠেপুটে খাওয়ার ব্যবস্থা করেছে। বেশির ভাগ সম্পদ-কর্মী সিপিএমের লোক। এ ভাবে প্রকল্পটি নষ্ট হতে দেওয়া হবে না। তা ঢেলে সাজতে হবে। মৃতপ্রায় দলগুলিকে পুনরুজ্জীবিত করতে হবে।
সিপিএম অবশ্য এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। আরামবাগের তিরোল পঞ্চায়েতের প্রধান সিপিএমের সান্ত্বনা বাগ বলেন, “গোষ্ঠী গঠনে রাজনৈতিক দল দেখার কোনও প্রশ্ন নেই। গ্রামবাসীদের উদ্যোগ অনুযায়ী ব্যবস্থা করা হয়েছে। আবেদনের ভিত্তিতে সম্পদ-কর্মী নিয়োগ হয়েছে।” একই বক্তব্য পুড়শুড়ার শ্রীরামপুর পঞ্চায়েতের প্রধান সিপিএমের দীনবন্ধু পাকিরা বা খানাকুল-১ ব্লকের ঘোষপুর পঞ্চায়েতের শুকদেব জানারও। হরিপাল ব্লকের চন্দনপুর পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান জয়শ্রী মণ্ডল বলেন, “আমাদের এখানে ৪০টি গোষ্ঠী রয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে সমস্যা রয়েছে।”
সম্পদ-কর্মীদের তরফে গোঘাট ব্লকের কামারপুকুর পঞ্চায়েতের মোহর আহমেদ বলেন, “প্রশাসনিক গাফিলতিতে গোষ্ঠীগুলি গতিহীন হয়ে পড়ছে। আমরা একটি দলকে যদি দুর্বল বলে চিহ্নিত করি, প্রশাসন দলের সংখ্যা বাড়াতে খাতায়-কলমে তাদের উত্তীর্ণ ঘোষণা করে।” খানাকুলের মাড়োখানা পঞ্চায়েতের এক সম্পদ-কর্মী বলেন, “আমাদের গুরুত্ব দেওয়া হয় না। পঞ্চায়েত ইচ্ছামতো গোষ্ঠীগুলিকে পরিচালনা করে। তাই এই অবস্থা।”
প্রকল্প রূপায়ণে সমস্যা মেনে নিয়েছেন স্বনির্ভর গোষ্ঠী ও স্বনিযুুক্তি প্রকল্পের বিভাগীয় মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো। তিনি বলেন, “প্রতিবন্ধকতা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পিছিয়ে পড়া মানুষের উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ শীঘ্রই করা হবে।” জেলা পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের প্রকল্প অধিকর্তা শিউকুমার রাম বলেন, “প্রকল্পটিকে আরও উন্নততর করতে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। যে সব সম্পদ-কর্মী কাজ করেন না, তাঁদের ছাঁটাই করা হচ্ছে। পঞ্চায়েতপিছু দু’জন করে সম্পদ-কর্মীর বদলে আরও বেশি নিয়োগ করার চিন্তাভাবনা চলছে।” |
|
|
|
|
|