|
|
|
|
কৃষিঋণে কোপ, ক্ষোভে ফুঁসছেন কৃষকরা |
গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় • চুঁচুড়া |
সরকারি নির্দেশিকা ছাড়াই চাষিদের দেয় কৃষিঋণ থেকে ২৫ শতাংশ কেটে নেওয়ার নির্দেশ দিল হুগলি কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ক। ওই ব্যাঙ্কের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার (সিইও) সেই মর্মে জেলার প্রতিটি শাখায় নোটিস পাঠিয়েছেন। এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ চাষিরা সমবায় ব্যাঙ্কের বিভিন্ন শাখায় বিক্ষোভ শুরু করেছেন।
কিন্তু কেন এই সিদ্ধান্ত?
কৃষিবিমার খাতে চাষিদের ঋণ থেকে ৪.৮৫ শতাংশ হারে কেটে নেয় সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ক। কিন্তু এ বার সেই হার আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের। হুগলি জেলা কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের সিইও সুজন সরকার বলেন, “অ্যাগ্রিকালচার ইনসিওরেন্স কোম্পানি অফ ইন্ডিয়া চাষিদের কৃষি বিমার বিষয়ে নির্দিষ্ট কিছু জানায়নি। জানা গিয়েছে, বিমার টাকার অঙ্ক বাড়তে পারে। তাই ২৫ শতাংশ টাকা কেটে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিমার অঙ্ক জানার পরে বাকি টাকা চাষিদের ফেরত দেওয়া হবে।”
সমবায় ব্যাঙ্ক জেলায় চাষের মরসুমে অন্তত দেড় লক্ষ চাষিকে কৃষিঋণ দিয়ে থাকে। ওই নোটিসের (মেমো নাম্বার-১৯৩৯/৩১) বিষয়টি জানাজানি হতেই চাষিদের মাথায় হাত। প্রতিবাদে জাঙ্গিপাড়ায় ব্যাঙ্কের একটি শাখায় ধর্মঘট শুরু হয়েছে। তারকেশ্বরে ব্যাঙ্কের একটি শাখায় বিক্ষোভ দেখান চাষিরা। পরিস্থিতি এমন যে, নোটিস কার্যকর না করার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দিতে বাধ্য হন ব্যাঙ্কের কর্তারা। সুজনবাবুও বলেছেন, “বিষয়টি নিয়ে আমরা নতুন করে চিন্তাভাবনা করছি।”
আলু চাষের ভরা মরসুমে সার ও চাষের আনুষঙ্গিক জিনিসপত্রের দাম লাগামছাড়া। তার উপর ব্যাঙ্কের ঋণ থেকে ২৫ শতাংশ কর্তৃপক্ষ কেটে রাখলে চাষের টাকা কোথা থেকে আসবে, চিন্তায় ঘুম ছুটেছে চাষিদের।
হুগলি রাজ্যের অন্যতম প্রধান আলু উৎপাদক জেলা। চাষের মরসুমে টাকার জন্য চাষিরা মূলত কৃষি সমবায় ব্যাঙ্কগুলির উপরই নির্ভর করেন। অল্প সুদে সহজ কিস্তিতে এই টাকা শোধ করা যায়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা অতি ফলনে চাষে বিপর্যয় হলে অনেক সময় সরকার চাষিদের ঋণ মকুব করে। অনেক সময় ঋণ শোধের শর্ত শিথিল করে দেয় সরকার। তাই চাষিরা এখন ঋণের জন্য মহাজন ছেড়ে অনেকটাই ব্যাঙ্ক মুখাপেক্ষী। কিন্তু ব্যাঙ্ক এখন ওই নোটিস দেওয়ায় এখন বিপদে পড়েছেন চাষিরা।
প্রশ্ন উঠেছে, সরকারের সিদ্ধান্ত ছাড়া ব্যাঙ্ক-কর্তৃপক্ষ ওই নোটিস জারি করতে পারেন কি না। চাষিদের সার্বিক মঙ্গলের জন্য একসময় এই কৃষি ঋণদান সমবায়গুলি গড়ে উঠেছিল। সেই সমবায় ব্যাঙ্কের এই সিদ্ধান্তে চাষিরা হতাশ। রাজ্যের সমবায়মন্ত্রী হায়দার আজিজ সফি অবশ্য বলেন, “সমবায় ব্যাঙ্ক সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে নাবার্ড থেকে অনুমতি নেওয়া জরুরি। এই ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ক ঠিক কী করেছিল, খোঁজ নেব। এ ছাড়াও চাষিরা যদি নির্দিষ্ট অভিযোগ জানান বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।”
বিষয়টি জানাজানি হতেই আরামবাগের তৃণমূল নেতা তথা কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের অন্যতম ডিরেক্টর সমীর ভাণ্ডারি রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যকে জানান। কৃষি দফতর সূত্রের খবর, মন্ত্রী এর পরই সিদ্ধান্ত নেন, উৎসবের মরসুম শেষ হলেই সমস্ত সমবায় ও সরকারি ব্যাঙ্কে নোটিস দিয়ে জানানো হবে, কখনওই বিমার খাতে ৪.৮৫ শতাংশের ঊর্ধ্বে টাকা কাটা যাবে না।
হুগলিতে কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের ১৬টি সমবায় শাখা আছে। সেগুলির আওতায় ৪৯৯টি শাখা রয়েছে জেলার চার মহকুমায়। ওই সব শাখা থেকে কৃষির মরসুমে অন্তত দেড় লক্ষ চাষিকে ঋণ দেওয়া হয়। ঋণের পরিমাণ কম করে অন্তত দেড় কোটি। এই পরিস্থিতিতে ব্যাঙ্ক-কর্তৃপক্ষ এই নজিরবিহীন সিদ্ধান্তে বিপাকে চাষিরা। |
|
|
|
|
|