|
|
|
|
|
|
|
মনোরঞ্জন ১... |
|
নোবেল চোর-কে হারিয়ে দিলেন রবীন্দ্রনাথ |
মিঠুন চক্রবর্তীর ভানু আর কবির ভানুসিংহ একাকার হয়ে গেল। লিখছেন সুদীপ ঘোষ |
আবার নোবেল চুরি!
আবার তোলপাড়বোলপুর থেকে দিল্লি পর্যন্ত।
তাই নিয়ে আবার চ্যানেলে, চ্যানেলে মানুষের ক্ষোভ।
আবার আলোচনা। বুসান থেকে লন্ডন হয়ে মুম্বই। এর প্রত্যেকটাই সত্যি এবং সত্যি নয়।
সত্যি নয়, কারণ বিশ্বভারতীকে দেওয়া নোবেল কমিটির প্রতিরূপটি যদি আবার খোয়া যেত, তা হলে খবরটা পত্রিকার পাতার বদলে বেরোত আনন্দরাজার পত্রিকার প্রথম পাতায়।
সত্যি, কারণ ওপরের প্রত্যেকটি ঘটনাই ঘটছে একটা ছবিকে কেন্দ্র করে। যার নাম ‘নোবেল চোর’। পরিচালক সুমন ঘোষের তৃতীয় ছবি।
কিন্তু নোবেল চুরির মধ্যে কী এমন পেলেন তিনি, যে একটা কিনারা না হওয়া রহস্যকে নিয়ে ছবি করতে গেলেন?
“এ ছবির মধ্যে তো কোনও রহস্য নেই,” বলছেন সুমন। “নোবেল চুরিটা উপলক্ষ মাত্র। আমি তো আসলে দেখাতে চেয়েছি সাধারণ মানুষ কী চোখে রবীন্দ্রনাথকে, তাঁর স্মৃতিকে দেখে।”
তা হলে ‘নোবেল চোর’ নাম কেন? “কারণ আমার মনে হয়েছিল এ রকম একটা বিশ্ব কাঁপানো ঘটনা থেকে শুরু করলে ছবিটা সম্বন্ধে সঙ্গে সঙ্গে একটা ঔৎসুক্য তৈরি হবে,” সুমনের উত্তর।
তাঁর ছবি সম্বন্ধে ঔৎসুক্য তৈরি হওয়াটা যে খুব দরকারি, সেটা সুমন বোঝেন। প্রথম ছবি ‘পদক্ষেপ’-এর জন্য সেরা অভিনেতার জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু সে ছবি কবে মুক্তি পেয়েছিল, আর কবে চলে গিয়েছিল, সে খবর অর্ধেক টালিগঞ্জই রাখেনি। দ্বিতীয় ছবি ‘দ্বন্দ্ব’ নিয়ে সমালোচকরা খানিক মাতামাতি করেছিলেন ঠিকই, কিন্তু তার বক্স-অফিস ভাগ্যও প্রথম ছবির মতোই ছিল। |
|
তৃতীয় ছবির জন্য প্রযোজক পেতে সমস্যা হয়নি?
“না। চিত্রনাট্যটা গোয়া ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের একটা প্রতিযোগিতায় মনোনীত হয়। সেখান থেকে মরাঠি প্রযোজক অশ্বিন শর্মা তোলেন স্ক্রিপ্টটা। চিত্রনাট্যটা পড়ে ওঁর মনে হয়েছিল ছবিটার একটা গ্লোবাল অ্যাপিল তৈরি হতে পারে। ওই যে নোবেল চুরি। ওই ব্যাপারটা তো বিশ্বে সবাই জানে,” জানাচ্ছেন সুমন।
সেই মরাঠি প্রযোজকের এটাই প্রথম বাংলা ছবি। তিনি ঝুঁকিটা নিলেন কেন?
“কারণ ছোট বাজেটে ‘শার্প’ ছবি বানাতে চেয়েছিলাম,” বলছেন অশ্বিন। “মনে হয়েছিল স্ক্রিপ্টটায় জোর আছে।”
একই কথা বলছেন ‘নোবেল চোর’-এর প্রধান তারকা মিঠুন চক্রবর্তীও। “এত সহজ, সুন্দর একটা চিত্রনাট্য যে আমি মাত হয়ে গিয়েছিলাম। অনেক দিন পর এমন নরম, মর্মস্পর্শী একটা চিত্রনাট্য পেলাম,” বলছেন মিঠুন।
তবু প্রথম দু’টো ছবির তারকাহীন ভবিতব্য কি কোনও ভাবে সুমনকে প্রভাবিত করেছিল? সে কারণেই কি মিঠুন চক্রবর্তীর তারকা-চুম্বকের দরকার পড়ল সুমনের? হাজার হোক, ‘নোবেল চোর’ তো আসলে মিঠুন চক্রবর্তীর ছবি। “তারকা শক্তি নয়। প্রধান চরিত্রটায় মিঠুনদা ছাড়া অন্য কাউকে ভাবতেই পারিনি। উনি যদি করতে রাজি না হতেন, তা হলে ছবিটাই করতাম না। আসলে ‘শুকনো লঙ্কা’য় মিঠুনদাকে দেখেই জেদ চেপে গিয়েছিল,” সোজা জবাব সুমনের।
সেই মিঠুন চক্রবর্তী এখানে ভানু কুমার গুছাইত। বোলপুরের কাছাকাছি এক গ্রামের গরিব চাষি।
কিন্তু মিঠুন চক্রবর্তী কী এমন পেলেন ‘নোবেল চোর’-এ? ‘শুকনো লঙ্কা’র চিনু নন্দীর মধ্যে তো না হয় তাঁর জীবনের একটা সময়ের ছায়া কিছু কিছু হলেও ছিল। ভানুর মধ্যে কী পেলেন যে এত ব্যস্ততার মধ্যেও ঠিক সময় বার করে নিলেন বোলপুর আর কলকাতা মিলিয়ে লম্বা সিডিউলের জন্য?
“সারল্য। চরিত্রটায় এমন একটা সারল্য ছিল যে সেটাই আমার কাছে চ্যালেঞ্জ হয়ে গেল। এ রকম সরল চরিত্র আজকাল আর কেউ বিশেষ তৈরি করে না,” বলছেন মিঠুন।
কিন্তু সে সারল্য তো চিনু নন্দীর মধ্যেও ছিল। “সারল্য যেমন ছিল, তেমনই একটা শহুরে উচ্চাকাঙ্খাও ছিল। ভানুর মধ্যে সে সব কিছু নেই। ভানু হল সেই আয়না, যার মধ্যে দিয়ে শহুরে স্বার্থপরতা উলঙ্গ হয়। সেটাই ভানুর প্রধান আকর্ষণ,” বলছেন মিঠুন।
আসলে এ ছবিতে অন্য এক মোচড় দিতে চেয়েছেন সুমন। প্রথম দু’টো ছবির জটিলতার পর একেবারে অন্য পথে তিনি। সহজ ভাষায়, সহজ ভাবে গল্পটাকে বলার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সত্যিই কি এত সহজ, এত সাদা-কালো সব চরিত্রতে ভরে আছে জগৎটা? সে বিচার তো হবে ছবি মুক্তির পর ডিসেম্বর মাসে। তবে মুম্বই চলচ্চিত্র উৎসবে এ দেশে ছবির প্রথম স্ক্রিনিংয়ের পর এ কথা এখনই বলে দেওয়া যায় যে ভানুর সারল্য মিঠুন চক্রবর্তী ফুটিয়ে তুলেছেন প্রতিটা রোমকূপ দিয়ে। যে অভিনয়ের নামডাক শুনে একের পর এক চলচ্চিত্র উৎসব থেকে ডাক পড়েছে ‘নোবেল চোর’-এর। ঘোরা হয়ে গেছে দক্ষিণ কোরিয়ার বুসান চলচ্চিত্র উৎসব। লন্ডন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবও। দু’জায়গাতেই হাউসফুল গেছে ছবির দু’টি করে শো। লন্ডনে ছবি শেষের পর ভানুর জীবনে রবীন্দ্রনাথের প্রভাব নিয়ে দর্শকরা ঘিরে ধরেছেন পরিচালককে। জানতে চেয়েছেন ভানু নামের পেছনে কি ‘ভানু সিংহ’ লুকিয়ে আছেন? আসল প্রশ্নও তো ভানুকে নিয়েই। কী হয় ভানুর জীবনে শেষ পর্যন্ত? রবীন্দ্রনাথ কি ভানুর লোভবর্জিত সারল্যকে বাঁচিয়ে রাখতে পারেন? সে উত্তর দিচ্ছেন না কেউই। মিঠুন শুধু বলছেন, “মজাটা কোথায় জানেন? ‘শুকনো লঙ্কা’য় চিনু নন্দী শেষ পর্যন্ত জিতে যায়। ‘নোবেল চোর’-এ কিন্তু শেষ পর্যন্ত জেতেন রবীন্দ্রনাথ।”
কী ভাবে?
তার জন্য আর কয়েক সপ্তাহের অপেক্ষা। |
নোবেল ধামাচাপা |
২৫ মার্চ, ২০০৪
নোবেল-সহ ৫২টি জিনিস শান্তিনিকেতনের
রবীন্দ্রভবন থেকে চুরি গিয়েছে বলে জানাজানি হয়। |
২৭ মার্চ, ২০০৪
নোবেল চুরির
তদন্তভার নেয় সি আই ডি। |
২৮ মার্চ, ২০০৪
নোবেল চুরির তদন্তভার সি বি আই-য়ের
হাতে দেওয়া হোক, এই আবেদন নিয়ে কলকাতা
হাইকোর্টে তিনটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হয়। |
৩১ মার্চ, ২০০৪
সিবিআই নোবেল চুরির
তদন্তভার নেয়। |
৩০ অগস্ট, ২০০৭
বোলপুর এসিজেএম আদালতে সিবিআই
জানায় যে নোবেল চুরির তদন্তে
কোনও অগ্রগতি না হওয়ায় তারা সাময়িক
ভাবে তদন্ত বন্ধ রাখতে চায়। চিঠি দিয়ে
বিষয়টি বিশ্বভারতীকেও জানায় সিবিআই।২০০৭-এই
ফের সূত্র মিলেছে বলে ওই
এসিজেএম আদালতেই পুনর্তদন্তের আবেদন জানায় সিবিআই। তারপর আরও
সূত্রের অভাবে আবার নিজেরাই তদন্ত বন্ধ করে দেয় তারা। |
৩ ডিসেম্বর, ২০০৯
বিশ্বভারতীর আইনজীবী এসিজেএম আদালতে আবার তদন্ত শুরু করার
আবেদন জানান। বর্তমানে তদন্ত বন্ধই আছে। সবকিছু উপস্থিত ধামাচাপা। |
|
তথ্য: মহেন্দ্র জেনা |
|
|
|
|
|