পাকিস্তানি হ্যাকারের হাতে আলিপুর আবহাওয়া দফতরের ওয়েবসাইটের হাল।
ওয়েবসাইটে রোজই উপগ্রহ-চিত্র থেকে আবহাওয়ার মর্জিমেজাজ বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু বৃহস্পতিবার নিজের দফতরে গিয়ে কম্পিউটারে বিভাগীয় ওয়েবসাইটে আবহাওয়ার উপগ্রহ-চিত্র দেখতে গিয়ে চমকে উঠলেন আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ।
চমকালেন কেন? কী দেখলেন তিনি?
‘হোম পেজ’ খুলতেই প্রতিদিনের চেনা পৃষ্ঠার বদলে কালো রঙের উপরে ফুটে উঠল একটি ছবি। মুখের নয়, মুখোশের ছবি। মুখোশটায় হাসির সঙ্গে ফেটে পড়ছে দম্ভ। বাঁ হাত মুষ্টিবদ্ধ, শুধু অনামিকার উপরে একটি পাকিস্তানি ক্ষেপণাস্ত্রের প্রতিকৃতি। নীচে ইংরেজিতে সতর্কবার্তা ‘আপনার ওয়েবসাইট ‘হ্যাক’ করা হয়েছে’।
কে করল এই হ্যাক বা চুরি?
হ্যাকার নিজের পরিচয় জানিয়েছে ‘খানটাস্টিক’। বলেছে, সে পাকিস্তানি।
কেন এ কাজ করল সে? |
কয়েক সপ্তাহ আগে পাকিস্তানের কয়েকটি ওয়েবসাইট ‘হ্যাক’ করার অভিযোগ উঠেছিল ভারতীয়দের বিরুদ্ধে। ‘খানটাস্টিক’ জানিয়েছে, তার প্রতিশোধ নিতেই এই কাণ্ড ঘটিয়েছে সে। সেই সঙ্গেই সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, পাকিস্তানিরা হ্যাক-প্রযুক্তিতে ভারতের চেয়ে অনেক এগিয়ে। এ বার যা করা হল, সেটা হুঁশিয়ারি। ভবিষ্যতে ভারত যেন সাবধান থাকে।
গোকুলবাবু বলেন, “ভূতের মতো ওই ছবি দেখে আমাদের লোকেরা হতভম্ব হয়ে পড়েন। তবে তাঁরা বৃহস্পতিবারেই সাইট মেরামত করে ফেলেছেন।” কিন্তু আবহাওয়া অধিকর্তাকে ভাবিয়ে তুলেছে পাক হ্যাকারের সতর্কবার্তা।
শুধু আবহাওয়া বিভাগ নয়, স্বঘোষিত পাকিস্তানি ‘হ্যাকার’ এ বার বিএসএনএল, জুট কর্পোরেশনের ওয়েবসাইটও নষ্ট করে দিয়েছে। আর নষ্ট করা হয়েছে চেন্নাই মেট্রো রেলের ওয়েবসাইট। বিএসএনএলের পশ্চিমবঙ্গ সার্কেলের চিফ জেনারেল ম্যানেজার সৌম্য রায় বলেন, “ওয়েবসাইটের হোম পেজ নষ্ট করে দেওয়াটা তুলনায় কম ক্ষতিকর। কিন্তু ওই পৃষ্ঠায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ যোগসূত্র (‘ওয়েব-লিঙ্ক’) থাকে, যার মাধ্যমে আমাদের মতো সংস্থার গ্রাহকেরা অনলাইনে টাকা জমা দেন। হ্যাক করে সেই সূত্র নষ্ট করে দেওয়া হয়।” বিএসএনএলের একটি সূত্রে জানানো হয়, ইন্টারনেটে হ্যাকারেরা মাঝেমধ্যেই এ-সব করে হাত পাকায়। সব চেয়ে বিপজ্জনক হল, ওই সব যোগসূত্রের মাধ্যমে হ্যাকারেরা অনলাইনে টাকা হাতিয়ে নিতে পারে, সরিয়ে ফেলতে পারে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও।
এমন ঘটনা এই প্রথম নয়। গত কয়েক মাসে পাকিস্তান ও চিন থেকে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক, ‘র’ (রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইং), সিবিআই ইত্যাদির মতো গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ক্ষেত্রের ওয়েবসাইট ‘হ্যাক’ করা হয়েছে। এ কথা জানিয়েছে হ্যাকিং প্রতিরোধে গড়া কেন্দ্রীয় নজরদার দল। ওই দলে আছেন কেন্দ্রীয় টেলি যোগাযোগ মন্ত্রক, ন্যাশনাল ইনফর্মেটিক্স সেন্টার (এনআইসি), ন্যাশনাল টেকনিক্যাল রিসার্চ অর্গানাইজেশন এবং কম্পিউটার ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিমের প্রতিনিধিরা। দলটি বিশেষ করে সরকারি দফতরে ‘হ্যাকিং’ বা ওয়েবসাইট চুরির মোকাবিলা করে থাকে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সাইবার ক্রাইম বিভাগ দেখেছে, গত কয়েক মাসে সরকারি ওয়েবসাইটের উপরে আক্রমণ তিন-চার গুণ বেড়ে গিয়েছে। পাকিস্তান ও চিন থেকে ভারতের বিভিন্ন সরকারি মন্ত্রকের ওয়েবসাইটে গোপনে ঢুকে গুরুত্বপূর্ণ নথি চুরি তো চলছেই। সেই সঙ্গে বেড়ে গিয়েছে ‘নেটওয়ার্ক হ্যাকিং’-ও।
কী ভাবে হয় এই হ্যাকিং?
বিএসএনএলের পশ্চিমবঙ্গ শাখার অধিকর্তা সৌম্যবাবুর ব্যাখ্যা, চোরেরা হোম পেজে ঢুকে একের পর এক যোগসূত্র ধরে আইডি এবং পাসওয়ার্ড কব্জা করে এবং তার সাহায্যেই হাতিয়ে নেয় গুরুত্বপূর্ণ নথি ও টাকা। দিল্লির একটি সূত্র জানায়, কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বর্পূণ নথি হাতানোর চেষ্টা ইদানীং সব চেয়ে বেশি হচ্ছে চিন থেকে। |