মেয়েটি নগাঁও থেকে গুয়াহাটি পড়তে গিয়েছিল। নিখোঁজ ছিল হপ্তাখানেক। ২৫ অক্টোবর, ধুবুরিতে মিলল তার গলিত শব। বাবা-মা চোখের জলে, গত কাল মেয়েকে দাহ করলেন। এর পরেই চমক!
আজ সকালে তেজপুর পুলিশের
কাছে হাজির ‘মৃত’ ইন্দ্রাণী বরা। সঙ্গে
প্রেমিক মুকুট আলি। ঘটনার জেরে তেজপুর, নগাঁও ও ধুবুরি পুলিশ নাজেহাল। পরিবারের দাবি, তারা ইন্দ্রাণীকেই শনাক্ত করে দাহ করেছেন। আর ইন্দ্রাণী বলছেন, তিনি প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়ে গিয়েছিলেন।
যে শবটি দাহ করা হল, পুলিশ জানতে পারছে না সেই শবটি কার? এর উপর ‘দাহ করা মেয়েকে’ ঘরে ফেরাতেও রাজি নয় ইন্দ্রাণীর পরিবার।
নগাঁও জেলার হয়বরগাঁও কাওইমারি গ্রামের বাসিন্দা, ১৯ বছরের ইন্দ্রাণী গুয়াহাটির ভাঙাগড়ে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছিলেন। ১৭ অক্টোবর থেকে বাড়ির লোক তাঁর খোঁজ পাচ্ছিলেন না। মোবাইল ফোন বন্ধ। কোনও বন্ধুও ইন্দ্রাণীর সন্ধান দিতে পারেনি। মেয়েটির
খোঁজ পায়নি পুলিশও। ২৫ অক্টোবর রাতে ধুবুরির বিলাসিপাড়ায় কাঠালদি গ্রামে এক যুবতীর মৃতদেহ পাওয়া যায়। খবর পেয়ে ২৬ অক্টোবর বিলাসিপাড়া হাসপাতালের মর্গে হাজির হন ইন্দ্রাণীর বাবা, নবকমল বরা। |
মুকুট আলির সঙ্গে ইন্দ্রাণী। ছবি: উজ্জ্বল দেব |
মৃতার মুখ ক্ষতবিক্ষত ছিল। পোষাক ও ঘাড়ের চিহ্ন দেখে মেয়েকে শনাক্ত করেন তিনি। নিয়ে আসেন মৃতদেহ। ২৭ অক্টোবর
কাওয়াইমারিতে ইন্দ্রাণীকে দাহ করা হয়। পুলিশ ইন্দ্রাণীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর রহস্য নিয়ে তদন্ত শুরু করে।
আজ সকালে তেজপুর থানায় আসেন এক যুবক ও যুবতী। মুকুট আলি নামে ওই যুবক পুলিশের কাছে দাবি করেন, তিনি প্রেমিকা ইন্দ্রাণীর সঙ্গে পালিয়ে গিয়েছিলেন। তাঁরা প্রথমে ধুবুরি যান। পরে যান শিলিগুড়িতে। তবে পরিবারের ভয়ে ইন্দ্রাণী মুকুটকে লুকিয়ে বিয়ে করতে রাজি না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত তাঁরা তেজপুরেই ফেরত আসেন। গত কাল রাতে মুকুটের ত্রিবেণী পয়েন্টের বাড়িতে কাটিয়ে আজ সকালে থানায় আসেন তাঁরা।
ইন্দ্রাণী সাবালিকা হওয়ায় এবং স্বেচ্ছায় মুকুটের সঙ্গে যাওয়ায় এই ক্ষেত্রে পুলিশের তেমন কিছু করার ছিল না। তবে মুকুটকে দেখে কয়েকজন পুলিশ কর্মীর সন্দেহ হয়। তাঁরা রেকর্ড ঘেঁটে দেখেন, মুকুটের নামে বেশ কিছু অভিযোগ রয়েছে।
সম্প্রতি নোট ও স্ট্যাম্প পেপার জাল করার ঘটনায় ধরা পড়ে জেলও হয়েছিল তার। পুলিশ মুকুটকে গ্রেফতার করে। তবে আসল ইন্দ্রাণী ফেরত আসায়, বিলাসিপাড়া পুলিশ দাহ হওয়া মেয়েটির শব কার, তা জানতে নতুন করে তদন্ত শুরু করেছে। পুলিশ জানায়, মেয়েটির শব নবকমল বরাকে দেওয়ার আগে মৃতার রক্তের নমুনা নিয়ে ডিএনএ পরীক্ষায় পাঠানো হয়েছিল। সেই পরীক্ষার ফলাফলই এখন পুলিশের ভরসা। তবে মেয়ে ফিরে এলেও, বাবা মত পালটাবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। মৃত মেয়ে জ্যান্ত হয়ে ফিরে এলেও পরিবারের মন গলেনি। তাঁরা জানিয়ে দেন, মুকুটের সঙ্গে এই সম্পর্কে তাঁদের মত নেই। ইন্দ্রাণী তো তাঁদের কাছে মৃতই। তাঁরা তাঁকে ঘরে নেবেন না। ফলে প্রেমিক হাজতে গেলেও তাঁর বাড়িতেই উঠেছেন ইন্দ্রাণী। |