উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনের এখনও ছ’মাস বাকি। তার অনেক আগে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকেই রাজ্যে ‘রোড শো’ শুরু করতে চলেছেন রাহুল গাঁধী। আর তার ক্ষেত্র পুরোদমে তৈরি করছে কেন্দ্র তথা কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব।
উত্তরপ্রদেশ সরকারের বিরুদ্ধে রাহুলের প্রচারের মূল বিষয় মোটামুটি দু’টি। প্রথমত আইনশৃঙ্খলার অবনতি এবং অনুন্নয়ন, দ্বিতীয়ত দুর্নীতি। সেই পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক রিপোর্ট প্রকাশ করে জানিয়েছে, দেশে মোট অপরাধের ঘটনার ৩৩ শতাংশেরও বেশি ঘটেছে উত্তরপ্রদেশে। আবার দু’দিন আগে ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পের তহবিল তছরূপ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি পাঠিয়েছেন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী জয়রাম রমেশ। জয়রামের চিঠি ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে নালিশ করে আজ আবার প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন মায়াবতী।
ওয়াকিবহাল মহলের মতে, রাহুলের উত্তরপ্রদেশ সফরের আগে কেন্দ্রের এই তৎপরতা নির্দিষ্ট পরিকল্পনা অনুযায়ী চলছে। কংগ্রেস শীর্ষ সূত্রে খবর, গোটা চিত্রনাট্য রচনা করেছেন রাহুল নিজেই। তাঁকে যোগ্য সঙ্গত দিচ্ছেন মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা কংগ্রেস সাধারণ সম্পাদক দিগ্বিজয় সিংহ। রাহুল-ঘনিষ্ঠ কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, বরাবরের মতো উত্তরপ্রদেশে জাতপাতের সমীকরণে ভোট হলে মায়াবতীর এগিয়ে থাকার সম্ভাবনাই বেশি। কংগ্রেসও যে একেবারে জাতপাতের সমীকরণ এবং সংখ্যালঘুদের কথা মাথায় রাখছে না, তা-ও নয়।
কিন্তু রাহুলের মূল কৌশলই হল অনুন্নয়ন, অপশাসন ও দুর্নীতির বিষয়কে যতটা সম্ভব বিতর্কের কেন্দ্র করে তোলা। যাতে এগুলোকেই ভোটের নির্ণায়ক বিষয় করে তুলে জাতপাতকে লঘু করা যায়। ভাট্টা পারসলে কৃষকদের প্রতি মায়া-সরকারের বঞ্চনা নিয়ে রাহুল সরব হওয়ার নেপথ্যে এই কৌশলই ছিল। এ বার উত্তরপ্রদেশে অপরাধের ঘটনা নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের রিপোর্ট এবং ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পের দুর্নীতি নিয়ে জয়রামের চিঠি তাঁর প্রচারের অন্যতম হাতিয়ার হবে।
জয়রামের চিঠি নিয়ে আজ স্বাভাবিক ভাবেই পাল্টা আক্রমণাত্মক হয়েছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর অভিযোগ, রমেশের চিঠি স্রেফ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। রাজ্য সরকার কী ব্যবস্থা নিয়েছে, তা না জেনেই রমেশ ওই চিঠি লেখেন এবং তাঁকে পাঠানোর আগেই তা সংবাদমাধ্যমে ফাঁস করে দেন। এ দিন লখনউতে সাংবাদিকদের ডেকে প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠির বিষয়বস্তু জানান ক্যাবিনেট সচিব শশাঙ্ক শেখর সিংহ। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, “জয়রামের মনে রাখা উচিত, রাজ্যে ৭৫টি জেলা রয়েছে। এবং দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে মাত্র সাতটিতে। কিন্তু কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এমন ভাবে অভিযোগ করেছেন, যেন গোটা রাজ্যেই দুর্নীতি হয়েছে।” এই দুর্নীতির ঘটনায় সিবিআই তদন্তের দাবিকে আমল না দিয়ে মায়াবতী জয়রামের প্রায় প্রতিটি বক্তব্য ধরে ধরে তীব্র আক্রমণ করেছেন।
মায়াবতী যে জবাব দেবেন তা কংগ্রেসের কাছেও প্রত্যাশিত ছিল। তবে কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, মায়াবতী এ ব্যাপারে যতই প্রতিক্রিয়া দেবেন, ততই বিতর্ক বাড়বে। কংগ্রেসও চাইছে উত্তরপ্রদেশের দুর্নীতি ও আইন শৃঙ্খলার অবনতি নিয়ে আরও বেশি বিতর্ক হোক। পরে কংগ্রেস মুখপাত্র অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি আজ বলেন, “মায়াবতী প্রকৃত প্রশ্নের জবাব দিচ্ছেন না। জয়রামের চিঠি কী ভাবে সংবাদমাধ্যমের কাছে ফাঁস হল সে কথা বলছেন মাত্র। কিন্তু ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পের টাকা কেন জেলায় জেলায় ক্যালেন্ডার আর খেলনা কিনতে খরচ করা হল, তার জবাব মুখ্যমন্ত্রীকেই দিতে হবে।”
সরকারি সূত্রে বলা হচ্ছে, উত্তরপ্রদেশের সংখ্যালঘুদের আর্থ সামাজিক পরিস্থিতি নিয়েও কেন্দ্র এ বার রিপোর্ট প্রকাশ করতে পারে। গত লোকসভা ভোটের সময় থেকেই উত্তরপ্রদেশে মুসলিম ভোট ব্যাঙ্ক মজবুত করতে তৎপর কংগ্রেস। সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশের ভোট নিয়ে দলের এক বৈঠকে রাহুলও সংখ্যালঘু এলাকার অনুন্নয়ন নিয়ে প্রচারে আরও বেশি জোর দেওয়ার কথা বলেছেন। |