ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা বলে চাপ বাড়াল কংগ্রেস
‘আফস্পা’ প্রত্যাহার নিয়ে আপাতত সংযত ওমর
মর আবদুল্লা কংগ্রেসের চাপে দু’পা এগিয়ে এখন এক পা পিছোচ্ছেন জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ।
কাশ্মীরের কিছু এলাকা থেকে সেনাবাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন বা ‘আফস্পা’ প্রত্যাহার করা নিয়ে ওমর ও কংগ্রেসের মধ্যে প্রকাশ্য মতবিরোধের পর এখন কিছুটা ‘সংযত’ থাকারই চেষ্টা করছেন জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী। এ নিয়ে বিতর্ক চরমে ওঠার পর দিল্লির কংগ্রেস নেতৃত্বও ওমরকে ধীরে-চলার পরামর্শ দিয়েছেন। আজ শ্রীনগরে মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হলেও, ‘আফস্পা’ প্রত্যাহার করা নিয়ে কোনও প্রস্তাব গৃহীত হয়নি। মন্ত্রিসভার পরবর্তী বৈঠক জম্মুতে পরের মাসে হওয়ার কথা। ফলে তার আগে এই নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও নেই।
ওমর সরকারের মন্ত্রী তাজ মহি-উদ-দিন জানান, “আজ ‘আফস্পা’ নিয়ে শুধু আলোচনা হয়েছে। তবে আজ এটি ‘এজেন্ডায়’ ছিল না। পরের বৈঠকে এটি এজেন্ডায় সামিল হতে পারে। মুখ্যমন্ত্রী সেনাবাহিনী ও বিভিন্ন নিরাপত্তা সংস্থার থেকে মতামত চাইবেন। তারপর সেটি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছে পাঠানো হবে ঐকমত্যের জন্য।”
এ দিকে দিল্লিতে কংগ্রেস নেতারা জানান, রাজ্য সরকারের প্রস্তাব কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে এলেও, এ বিষয়ে শেষ সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকারী কেন্দ্রই। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক এই আইন প্রত্যাহারের ঘোরতর বিরোধিতা করছে। আজ সিআরপিএফের ডিজি কে বিজয়কুমারও পরোক্ষে এই আইন বলবত রাখার পক্ষে সওয়াল করেছেন। কিন্তু সমস্যা হল, ওমর কারও সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই একতরফা আইন প্রত্যাহারের ঘোষণা করে ফেলেছেন। কংগ্রেস ছাড়া তার যে গতি নেই, সেটি তিনিও ভাল জানেন। ফলে এখন তাঁকেই গোটা বিষয়টি নিয়ে ঢোঁক গিলতে হবে। সেই কারণে নিজের ঘোষণার পর বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মোড়কে একদিকে যেমন বিষয়টিকে জিইয়ে রাখতে চাইছেন, অন্যদিকে বিষয়টি নিয়ে কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তও নিতে পারছেন না।
এদিকে সেনাবাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন প্রত্যাহার নিয়ে ওমর ও কংগ্রেসের বিবাদের ঘোলা জলে মাছ ধরতে আসরে নেমে পড়েছে বিজেপিও। দলের শীর্ষ নেতা অরুণ জেটলি আজ কংগ্রেসের সুরেই কড়া আক্রমণ করেছেন ওমরকে। তিনি বলেন, নিরাপত্তার বিষয়টি খতিয়ে না দেখেই শুধু রাজনৈতিক কারণে এই আইন প্রত্যাহার করার কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। উপত্যকার এখন যা পরিস্থিতি, তাতে সেনাবাহিনীর সাহায্য না পেলে শুধু পুলিশ দিয়ে রাজ্য সরকারের পক্ষে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব নয়। ফলে এই আইন প্রত্যাহার করলে একদিকে সেনাবাহিনীর মনোবল যেমন ভেঙ্গে যাবে, তেমনই বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তির বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করার প্রক্রিয়াও মাঝপথে স্তব্ধ হবে।
কংগ্রেস ও বিজেপি উভয় দলের নেতৃত্বই মনে করছেন, নিছক নিজের ক্ষয় হতে থাকা জনপ্রিয়তা বজায় রাখতেই ওমর একতরফা ঘোষণা করে ফেলেছেন। সেনাবাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা নিয়ে উপত্যকার বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলির বহুদিনের আপত্তি রয়েছে। তার উপর মানবাধিকার সংগঠনগুলিও সোচ্চার। এসবের মধ্যেই ওমরকে তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের টানাপোড়েন, নিজের দলের নেতার জেলে মৃত্যুর রাজনৈতিক খেসারত দিতে হচ্ছে। রাজ্যে তাঁর প্রবল প্রতিপক্ষ মেহবুবা মুফতি নিরন্তর ঘাড়ের কাছে নিশ্বাস ফেলছেন। এই পরিস্থিতিতে যাবতীয় বিতর্ক থেকে দৃষ্টি ঘোরাতে স্থানীয় আবেগকে পুঁজি করে কিছু এলাকা থেকে সেনাবাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা লোপের তাস খেলতে চেয়েছেন। কিন্তু এখন সেটাই আবার ব্যুমেরাং হচ্ছে তাঁর দিকে। ওমরের এই ঘোষণা দিল্লিতে কংগ্রেস নেতৃত্বকেও নতুন করে বিড়ম্বনায় ফেলেছেন।
কংগ্রেস নেতৃত্ব এখন ওমরকে নরমে-গরমে রাখারই কৌশল নিয়েছেন। মুফতির থেকে ওমরকে কংগ্রেস অনেক বেশি জাতীয়তবাদী মনে করে। সে কারণে ওমরকে খুব বেশি চটানোরও পক্ষপাতী নয় কংগ্রেস। বরং তাঁর গদি সুরক্ষিত রেখেই, তাঁকে রাজনৈতিক ঢাল হিসাবে ব্যবহার করার কৌশল নিচ্ছে কংগ্রেস। যাতে যাবতীয় আক্রমণ সইতে হয় ওমরকেই। আবার অন্য দিকে ওমরের উপরে চাপ বজায় রাখার জন্য এখন ক্ষমতা হস্তান্তরের বিতর্কও সুকৌশলে উস্কে দিচ্ছে কংগ্রেস। কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতা আজ বলেন, “সরকারের তিন বছর হয়ে গিয়েছে। এর পর কংগ্রেসের কোনও নেতা মুখ্যমন্ত্রী হবে না, এমন কথাও তো কখনও বলা হয়নি।”
এই কথা বলে আসলে এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চাইছে কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব। একদিকে রাজ্য কংগ্রেসের প্রত্যাশার সুরে সুর মেলানো হচ্ছে। অন্য দিকে, ওমরের থেকে নিজেদের হাতে ক্ষমতা নেওয়ার ব্যাপারে কোনও ‘সদিচ্ছা’ না থাকলেও মুখ্যমন্ত্রীর উপরে কিছুটা চাপ বজায় রাখা সম্ভব হবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.