তামিলনাড়ুতে যে পথ দিয়ে লালকৃষ্ণ আডবাণীর রথ যাওয়ার কথা ছিল, সেই পথেই উদ্ধার হল শক্তিশালী বোমা। মাদুরাই থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে আলামপট্টির একটি কালভার্টের নীচে বোমাটি পাওয়া যায়। ৫০ মিটার লম্বা একটি তারের সঙ্গে জোড়া ছিল বোমাটি। চারটি ডিটোনেটর এবং বেশ কয়েকটি ব্যাটারিও মিলেছে। যে সময় বোমাটির খোঁজ মিলেছে, তার ঘণ্টাখানেক বাদেই ওই পথ দিয়ে যাওয়ার কথা ছিল বিজেপির এই প্রবীণ নেতার। ফলে শেষ মুহূর্তে তাঁর রথের যাত্রাপথ কিছুটা পরিবর্তন করতে হয়।
তেরো বছর আগে এই তামিলনাড়ুতেই লালকৃষ্ণ আডবাণীর সভার আগে এক ধারাবাহিক বোমা বিস্ফোরণে অন্তত ৫৮ জনের মৃত্যু হয়েছিল। সে বার কোয়ম্বত্তূরে ওই বিস্ফোরণে আহত হয়েছিলেন দু’শোরও বেশি। বিজেপি নেতৃত্ব তো বটেই, গোয়েন্দাদেরও সন্দেহ ছিল, সেই হামলার নিশানায় ছিলেন আডবাণীই। |
মাদুরাইয়ের কাছে আলামপট্টির এই কালভার্টের নীচ থেকে উদ্ধার হয়
বোমা। এই পথ দিয়েই যাওয়ার কথা ছিল আডবাণীর। ছবি: পিটিআই |
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের সন্দেহ, আডবাণীর যাত্রাপথে এই বোমা রাখা মাওবাদীদের কাজ। গ্রামবাসীরা কালভার্টের নীচে তার বেরিয়ে থাকতে দেখে পুলিশকে জানায়। ঠিক কী ধরনের বিস্ফোরক ছিল, তা এখনও স্পষ্ট না করলেও পুলিশ জানিয়েছে, সাত কিলো ওজনের বোমাটি ওই কালভার্টটি পুরোপুরি উড়িয়ে দেওয়ার মতো শক্তিশালী ছিল। তদন্তে নেমে নেহরু নামের এক ব্যক্তিকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। দিওয়ালির পরে তাঁর দুর্নীতি-বিরোধী যাত্রার দ্বিতীয় পর্ব মাদুরাই থেকেই আজ শুরু করেছেন আডবাণী। মাদুরাই থেকে শ্রীভিলিপুথুর হয়ে তাঁর কেরলে যাওয়ার কথা। যে জায়গায় বোমা মিলেছে, সেই আলমপট্টি শ্রীভিলিপুথুরেই। পুলিশের বক্তব্য, মাদুরাই এবং থেনি জেলায় মাওবাদীরা ঘাঁটি গেড়েছে। এটা তাদেরই কাজ।
স্বাভাবিক ভাবেই এই ঘটনাকে সহজে ছেড়ে দিতে নারাজ বিজেপি। দলের নেতারা গোড়ায় অবস্থান নিয়েছিলেন, এই ঘটনার জন্য কাউকে দোষারোপ করা হবে না। কিন্তু পরে রাজনাথ সিংহ থেকে শুরু করে মোক্তার আব্বাস নকভি সকলেই কেন্দ্রীয় সরকারের দিকে আঙুল তোলেন। তাঁদের অভিযোগ, আডবাণীর মতো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের নিরাপত্তা নিয়ে যখন আশঙ্কা রয়েছে, তখন গোটা যাত্রাপথে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও আটোসাঁটো করা উচিত। এমনিতেই আডবাণী ‘জেড-প্লাস’ নিরাপত্তা পান। তা ছাড়া, তাঁর যাত্রার আগে কেন্দ্রকেও গোটা বিষয়টি জানানো হয়েছে। বিজেপি নেতাদের অভিযোগ, আডবাণীর রথ যখন যে রাজ্য দিয়ে যাবে, সেই মতো তাদের যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পরামর্শ দেওয়া দরকার কেন্দ্রের।
কংগ্রেস অবশ্য গোটা ঘটনার দায় তামিলনাড়ু সরকারের ঘাড়েই ঠেলে দিয়েছে। দলের মুখপাত্র অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেন, “আশা করি, রাজ্য সরকার এই বিষয়টি তদন্ত করে দেখবে।” কংগ্রেস নেতাদের বক্তব্য, যে রাজ্য দিয়ে রথ যাচ্ছে, নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার দায় তাদেরই। তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতার সঙ্গে বিজেপি নেতৃত্বের এখন ঘনিষ্ঠতা দেখা যাচ্ছে। বিজেপি নেতাদের উচিত, অভিযোগের আঙুল সে দিকেই রাখা।
তবে এই ঘটনার পরেই জয়ললিতা সরকার যেমন তড়িঘড়ি ব্যবস্থা নিয়েছে, তেমনই দিল্লিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, “আডবাণীর রথযাত্রায় হামলার আশঙ্কার কথা মাথায় রেখে আমরা ইতিমধ্যেই সতর্কতা জারি করেছি। গোয়েন্দা সংস্থাকেও (আইবি) বলা হয়েছে, চোখ-কান আরও খোলা রাখতে। একই সঙ্গে বিজেপি নেতৃত্বের কাছেও অনুরোধ করা হয়েছে, সভার খুঁটিনাটির বিষয় কেন্দ্রকে জানাতে। কোথায় সভা হচ্ছে, সভা বা রুটের কোনও পরিবর্তন হচ্ছে কি না, সেই সব বিষয়ে কেন্দ্রকে সময় থাকতে জানানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। যাতে প্রয়োজন অনুসারে রাজ্যকে উপদেশ দেওয়া যায়।” এই ঘটনার পরে সিদ্ধান্ত হয়েছে, আইজি স্তরের এক পুলিশ অফিসার আডবাণীর তামিলনাড়ুর সফরের আগাগোড়া সঙ্গে থাকবেন। তামিলনাড়ু থেকে আডবাণীর রথ ঢুকবে কেরলে। সেখানেও একই ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যাত্রাপথে বোমা উদ্ধারের ঘটনা ঘটলেও আডবাণী অবশ্য স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, তার যাত্রার সূচি বদলাচ্ছে না। আডবাণীর সফরসঙ্গী তাঁর কন্যা প্রতিভা বলেছেন, “আমরা মাঝপথে বোমার খবর পেয়েছি। তবে সে ব্যাপারে আমরা কেউই উদ্বিগ্ন নই। যাত্রা পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি মেনেই চলবে।” |