তিস্তা জল বণ্টন সমস্যার এখনও মীমাংসা না হলেও অন্য বহু ক্ষেত্রে ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন ঢাকায় বিদায়ী ভারতীয় হাইকমিশনার রজিত মিটার। ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের সঙ্গে দেখা করে আনুষ্ঠানিক বিদায় পর্ব সেরেছেন মিটার। আজ এখানে তিনি
শেষ বারের মতো সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন।
মিটার বলেন, তাঁর আমলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেমন দিল্লি সফরে গিয়েছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহও ঢাকায় এসেছেন। দু’দেশের মধ্যে সম্পর্ক এক নতুন মাত্রায় উন্নীত হয়েছে। বিদায়ী হাইকমিশনার বলেন, “আওয়ামি লিগ সরকারের ইতিবাচক মনোভাবের ফলেই এই সম্পর্ক উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে।” তিস্তা চুক্তি না হওয়াটাকে তেমন গুরুত্ব না দিয়ে মিটার বলেন, “বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের হতাশ হওয়ার কারণ আছে। কিন্তু অন্য সব বিষয়কে সেটা ছাপিয়ে যেতে পারে না। সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আজ না হোক কাল তিস্তা চুক্তি হবেই। কিন্তু নিরাপত্তায় সহযোগিতা, সন্ত্রাসবাদ নিয়ন্ত্রণের মতো বহু ক্ষেত্রে দু’দেশের বোঝাপড়া ইতিমধ্যেই দারুণ কাজে লেগেছে।বাংলাদেশ থেকে আলফার ডেরা কার্যত উচ্ছেদ হয়েছে। ইসলামি জঙ্গিদেরও কোণঠাসা করা গিয়েছে।” মিটার বলেন, ১৯৪৭ সাল থেকে চলা সীমান্ত সমস্যা অনেকটাই মিটিয়ে ফেলা গিয়েছে, সীমান্ত চিহ্নিতকরণ নিয়েও দু’দেশ সহমতে পৌঁছেছে। তিনবিঘা করিডর দিয়ে বাংলাদেশের দুই ছিটমহলের বাসিন্দারা ২৪ ঘণ্টা চলাচল করতে পারছে। তিস্তা চুক্তি না হওয়ার বিষয়টিকে তুলে ধরে এই সাফল্যকে খাটো করে দেখানো যাবে না।
|
রজিত মিটার |
ভারত, নেপাল ও ভুটানকে ট্রানজিট দেওয়ার বিনিময়ে কী হারে মাসুল নেওয়া হবে, বাংলাদেশ সরকার ইতিমধ্যেই তা ঠিক করে ফেলেছে বলে ঢাকার কয়েকটি সংবাদপত্র খবর দিয়েছে। তা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে বিদায়ী হাইকমিশনার বলেন, আন্তর্জাতিক নিয়মনীতি মেনে মাসুল দেওয়ার কথা ভারত বরাবরই বলে এসেছে। তবে মাসুল নির্ধারণের সময়ে সব পক্ষের লাভ-ক্ষতির বিষয়টি বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের মনে রাখা উচিত। আদতে ভারতের ব্যবসায়ীরাই এই ট্রানজিট বা ট্রানশিপমেন্টের সুবিধা ব্যবহার করবেন। তাঁরা যদি মনে করেন, এই মাসুল বেশি, তাঁরা তা ব্যবহার করবেন না। এর ফলে বাংলাদেশই আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মিটার বলেন, ছ’মাস অন্তর মাসুলের হার বদল করাটাও কোনও কাজের কথা নয়।
ভবিষ্যতে দু’দেশে সরকার পরিবর্তন হলে কি ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক আবার আগের শীতল অবস্থায় ফিরতে পারে? এ প্রশ্নের সরাসরি কোনও উত্তর অবশ্য দেননি মিটার। তিনি বলেন, “ভবিষ্যতেও দু’দেশের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে আমি আশাবাদী।” |