জমি কার, বিতণ্ডায়
সঙ্কটে ক্যানসার হাসপাতাল
রকারি নথি বলছে জমিটি ক্যানসার হাসপাতালের। কিন্তু জেলা প্রশাসন তা মানতে নারাজ। তারা চায় সেখানে প্রশাসনিক ভবন তৈরি করতে। এই টানাপোড়েনে থমকে যেতে বসেছে বারাসতের ওই বেসরকারি ক্যানসার হাসপাতালটির সম্প্রসারণ।
জেলা প্রশাসন জমিটিতে ইতিমধ্যেই মাপজোক শুরু করায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ উদ্বিগ্ন। এ ব্যাপারে তাঁরা মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বারস্থ হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। জেলা প্রশাসন অবশ্য নিজস্ব সিদ্ধান্তে অনড়। তারা জানিয়ে দিয়েছে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আদালতে গিয়ে বলুন যে জমিটি তাঁদের। তার পর আদালত যা সিদ্ধান্ত নেবে জেলা প্রশাসন সেটাই মানবে। জেলা স্বাস্থ্য দফতর কিন্তু চায়, ক্যানসার হাসপাতালটির সম্প্রসারণ হোক। তাতে সাধারণ মানুষই উপকৃত হবেন।
উত্তর ২৪ পরগনার বারাসতে জেলা প্রশাসনের অফিসের কাছেই বনমালিপুরে রয়েছে ‘বারাসত ক্যানসার রিসার্চ অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার সেন্টার’ নামে ওই বেসরকারি ক্যানসার হাসপাতালটি। জেলা স্বাস্থ্য দফতরও মানছে যে, সেখানে খুব কম খরচে ক্যানসারের যাবতীয় চিকিৎসা করা যায়। বারাসত সরকারি হাসপাতালে ক্যানসারের চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। সেখানে ক্যানসারের চিকিৎসার জন্য যে সব রোগী আসেন, তাঁদের ওই বেসরকারি হাসপাতালেই পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কারণ, সেখানকার পরিষেবার মূল্য সরকারি হাসপাতালের মতোই। ওই হাসপাতালের পাশেই একটি জমিতে ৩০০ শয্যার নতুন হাসপাতাল ভবন এবং ক্যানসার গবেষণাকেন্দ্র তৈরি হওয়ার কথা। আর সেই জমিরই মালিকানা দাবি করে বসেছে জেলা প্রশাসন।
১৯৮৮ সালে বনমালিপুরে ১৭ শতক জমির উপর তৈরি হয় ক্যানসার হাসপাতালটি। সেখানে ৬৫টি শয্যা, ২৪ ঘণ্টা ব্লাড ব্যাঙ্ক-সহ বিভিন্ন পরীক্ষাকেন্দ্র রয়েছে। পরবর্তী পর্যায়ে রাজ্য সরকার তিনটি পর্যায়ে ৮১ শতক জমি লিজ দেয় ওই হাসপাতালকে। তার একটি অংশে ২০০৪ সালে বার্ক (ভাবা অ্যটমিক রিসার্চ সেন্টার)-এর তত্ত্বাবধানে তৈরি হয় ‘রেডিওথেরাপি অ্যান্ড নিউক্লিয়ার মেডিসিন’ বিভাগ। অন্য একটি অংশে ‘নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু ইন্সটিটিউট অব অঙ্কোলজি’-র শিলান্যাস হয়। সেখানে ৩০০ শয্যার ক্যানসার হাসপাতালের পাশাপাশি গবেষণাকেন্দ্র তৈরির অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় সরকার। এখন গোল বেধেছে ওই জমিটি নিয়েই। সেখানে প্রশাসনিক ভবন গড়তে চেয়ে জমি মাপার কাজ শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। হাসপাতালের সম্পাদক রবীন্দ্রনাথ রায় বলেন, “ওই জমিটির সমস্ত কাগজপত্র আমাদের রয়েছে। সেখানে অঙ্কোলজি ইন্সটিটিউট তৈরি হবে বলে হোর্ডিংও দেওয়া রয়েছে। শয্যা কম বলে অনেক রোগীকে আমরা ভর্তি নিতে পারি না। ওই ইউনিটটির কাজ শেষ হলে সাধারণ মানুষ উপকৃত হবেন।” রবীন্দ্রনাথবাবুর অভিযোগ, তাঁদের কিছু না জানিয়ে জেলা প্রশাসন সেখানে জমি মাপার কাজ শুরু করে দিয়েছে। অথচ রেডিওথেরাপি বিভাগ ও ক্যানসার হাসপাতালের মাঝের জমিতে কোনও অফিস তৈরি করা যাবে না বলে বছর তিনেক আগে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন প্রশাসনিক কর্তারাই।
ভূমি ও ভূমিরাজস্ব দফতরের রেকর্ডেও দেখা যাচ্ছে, এই জমিটি বনমালিপুর মৌজার ১৭৯ দাগ ও ৮০ খতিয়ানে রয়েছে। সেই জমির দলিল, রেজিস্ট্রি সব কিছুই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নামে লিজে দেওয়া। তৎকালীন প্রশাসনিক কর্তা থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য দফতরের অনেক কর্তার স্বাক্ষরও তাতে রয়েছে। শুধু তা-ই নয়, বর্তমান সময় পর্যন্ত ওই জমির খাজনাও দিয়ে চলেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
তা হলে কী ভাবে জমির মালিকানা দাবি করছে জেলা প্রশাসন? জেলাশাসক সঞ্জয় বনশল বলছেন, “ওই জমিটি সরকারের। সেখানে প্রশাসনিক ভবন তৈরি হবে। আমাদের বহু অফিস ভাড়া নিয়ে চলছে। কর্মীদের সেখানে কাজের অসুবিধা হয়। সমস্যায় পড়েন সাধারণ মানুষও। তাই ওই জমিতে জেলা প্রশাসনের নতুন কিছু অফিস তৈরি হবে।”
ক্যানসার হাসপাতালের সম্প্রসারণের কাজ তা হলে কি আটকে যাবে? অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) রণধীর কুমার বলেন, “আমরা জানি, জমি আমাদের। তাই সেখানে প্রশাসনিক ভবন তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছে। কারও কাছে কাগজপত্র থাকলে তাঁরা তো আদালতে গিয়েই তো নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আসতে পারেন।” ওই জমির মালিকানা দাবি করে জেলাশাসককে চিঠি দিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ। তবে আদালতে যাওয়ার আগে তাঁরা গোটা বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীর নজরে আনতে চাইছেন। এই টানাপোড়েন সম্পর্কে বারাসতের সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদারকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেছেন, “বিষয়টি আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি।”
জেলা প্রশাসন ওই ক্যানসার হাসপাতালের সম্প্রসারণকে অগ্রাধিকার দিতে না চাইলেও জেলা স্বাস্থ্য দফতর কিন্তু পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে তার ভূমিকা অস্বীকার করতে পারছে না। বারাসত সরকারি হাসপাতালের সুপার পুষ্পেন্দু সেনগুপ্ত বলেন, “জেলা হাসপাতালের আসা ক্যানসারের রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ ওই ক্যানসার হাসপাতালেই হয়। সরকার যে পরিষেবা দিতে পারে না, তা ওই ক্যানসার হাসপাতাল দেয়। হাসপাতালটির গুরুত্ব তাই অপরিসীম।” জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা জানাচ্ছেন, ওই হাসপাতালে রেডিওথেরাপির খরচ মাত্র ৬ হাজার টাকা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, এত কম খরচে রেডিওথেরাপি দেওয়ার ব্যবস্থা গোটা রাজ্যের আর কোনও ক্যানসার হাসপাতালে নেই। শল্যচিকিৎসার খরচ সরকারি হাসপাতালের চার ভাগের এক ভাগ। পরীক্ষার খরচও সরকারি হাসপাতালের প্রায় সমান। জেলা স্বাস্থ্য-কর্তাদের এই শংসাপত্র সম্বল করেই তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হবেন বলে ঠিক করেছেন ক্যানসার হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.