স্মৃতির কদর বোঝে ছিঁচকে চোরও!
কালীপুজোর রাতে ঢুকে ঘর সাফ করে দিয়ে গিয়েছিল চোরেরা। জানত না, বাসনকোসনের মধ্যে আছে বাড়ির ছোট্ট মেয়ের অন্নপ্রাশনের ক’টি থালা বাটি। চুরি যাওয়া মোবাইলেই সেই থালাবাটি ফেরত চেয়েছিলেন মা। রাত ভোর হতে দেখা যায়, দোরগোড়ায় বাসন রাখা।
পুরুলিয়া শহরের উপকণ্ঠে দুলমিতে বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত এই টানাপোড়েন চলে। বাড়ির কর্তা দীনবন্ধু মাহাতো জেলা পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের কর্মী। বাঁদনা পরবে তাঁরা সপরিবার বলরামপুরের হাঁসপুরে পৈতৃক বাড়িতে গিয়েছিলেন। দুলমির বাড়িতে ছিলেন তাঁর সম্পর্কিত ভাই বাবু মাহাতো। তিনি জানান, বুধবার রাতে দরজায় তালা দিয়ে তিনি পাড়ার পুজো মণ্ডপে গিয়েছিলেন। ফিরে দেখেন, দরজা হাট করে খোলা। তালা ভাঙা। ঘরের জিনিসপত্র ছড়ানো। তাঁর কথায়, “বুঝলাম, চোর এসেছিল।” |
রাতে বাবুর কাছ থেকেই চুরির খবর পান দীনবন্ধুবাবু। শোনেন টাকা, গয়না ও গৃহস্থালির আরও কিছু জিনিসের সঙ্গে মেয়ের মুখেভাতের থালা-বাটিও চুরি গিয়েছে। ঘরে থাকত একটি মোবাইল ফোন। খোওয়া গিয়েছে সেটিও। স্বামী-স্ত্রী মুষড়ে পড়েন। ঠিক এই সময়ে দীনবন্ধুবাবুর মোবাইলে একটি ফোন আসে।
দীনবন্ধুবাবুর কথায়, “দেখি, চুরি যাওয়া মোবাইলের নম্বর থেকেই ফোনটা এসেছে। কিন্তু ও পাশ থেকে কেউ সাড়া দিচ্ছিল না। আমার স্ত্রী চৈতালি ফোন ধরে বলে, ‘তোমরা সব নিয়ে গেলে! মেয়ের অন্নপ্রাশনের বাসনগুলোর সঙ্গে আমাদের অনেক স্মৃতি জড়িয়ে। ওগুলো অন্তত দিয়ে যাও।” এ কথার জবাব মেলেনি। কিন্তু চিঁড়ে যে ভিজেছে, তা ঠাহর হয় বৃহস্পতিবার ভোরে। রাতে ওই বাড়িতেই ছিলেন বাবু। তাঁর কথায়, “ভোরে দরজা খুলে দেখি, গলিতে একটা ব্যাগে অন্নপ্রাশনের সেই থালা-বাটি কারা যেন রেখে গিয়েছে।” ঘটনার কথা জেনে অবাক পড়শিরা। তবে, মাহাতো দম্পতির মতো তাঁদেরও অনেকের ধারণা, স্থানীয় কিছু যুবকই এই চুরিতে যুক্ত। চৈতালিদেবী ফোনে তাদের বলেওছেন, “বুঝতেই পারছি, তোমরা এলাকারই ছেলে। চুরি-চামারি করে কি জীবনে কিছু করা যায়? আমাদের জিনিসগুলো ফেরত দাও। কাউকে কিছু বলব না। বরং তোমাদের পুরস্কার দেব।”
ততটা অবশ্য চোরেরা করেনি। এ দিন সকালের পর তারা মোবাইল ফোনটিও বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে, তাদের সঙ্গে আর যোগাযোগও করা যাচ্ছে না। রাত পর্যন্ত পুলিশও কোনও হদিস পায়নি। |