|
|
|
|
নিয়োগের ছ’বছর পরে স্থায়ী হলেন ৫৬ পুরকর্মী |
নিজস্ব সংবাদদাতা • বনগাঁ |
দীর্ঘ জটিলতা কাটানোর পরে শেষপর্যন্ত স্থায়ী হলেন বনগাঁ পুরসভার ৫৬ জন পুরকর্মী।
সম্প্রতি পুর দফতরের অধীন ডিরেক্টর অব লোকাল বডিজ (ডিএসবি)-এর পক্ষ থেকে ওই ৫৬ জন কর্মীর স্থায়ীকরণের বিষয়টি অনুমোদন করা হয়। পুরসভার চেয়ারম্যান জ্যোৎস্না আঢ্যকে চিঠি মারফত তা জানিয়েও দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার পুরসভার বোর্ড মিটিংয়েও তা অনুমোদন করিয়ে নেওয়া হয়েছে। এ দিন এক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে ওই কর্মীদের হাতে ‘কনফারমেশন লেটার’ তুলে দেওয়া হয়। দীর্ঘদিনের লড়াইয়ের পরে দাবিপূরণে আনন্দে বাজি ফাটিয়ে দীপাবলির আনন্দে মেতে ওঠেন ওই কর্মীরা। তৃণমূলের পুরচেয়ারম্যান বলেন, “গত বছর পুরভোটে জেতার পরে ক্ষমতায় এসে আমরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম রাজ্যে ক্ষমতায় এলে এই ৫৬ জন কর্মীর স্থায়ীকরণের ব্যবস্থা করা হবে। এ জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং পুরমন্ত্রী ববি হাকিমের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ।”
পুরসভা সূত্রের খবর, ২০০৩ সালে পুরসভার তরফে ৭২টি স্থায়ীপদের জন্য কর্মসংস্থান কেন্দ্রের মাধ্যমে প্রার্থী তালিকা চেয়ে পাঠানো হয়। কর্মসংস্থান কেন্দ্র থেকে এক একটি পদের জন্য ২০ জনের নাম পাঠানো হয়েছিল। এর পরে সিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরে ২০০৫ সালে তদানীন্তন পুরপ্রধান কংগ্রেসের তাপস মুখোপাধ্যায় চাকরির নিয়োগপত্র তুলে দেন এই ৫৬ জন কর্মীর হাতে। কিন্তু স্থায়ী কর্মী হিসাবে তাঁদের কোনও স্বীকৃতি ছিল না। এ জন্য ওই কর্মীরা স্থায়ীকরণের দাবিতে প্রশাসনের বিভিন্ন মহলের দ্বারস্থ হন। এ নিয়ে আন্দোলনেও নামেন। ২০০৯ সালে লোকসভা নির্বাচনের পরে অগস্ট মাসে তিনদিনের অবস্থান বিক্ষোভ কর্মসূচী পালন করেন ওই কর্মীরা। পুরসভা এবং বনগাঁ মিউনিসিপ্যাল স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের তরফে প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যের সঙ্গে দেখা করে ওই ৫৬ জন কর্মীর স্থায়ীকরণের দাবি জানানো হয়। অশোকবাবু সেই সময় বিষয়টি সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করার আশ্বাস দেন। ইতিমধ্যে ওই ৫৬ জন কর্মীর নিয়োগ সম্পূর্ণ বেআইনি বলে দাবি করে পুরসভার বামপন্থীদের সংগঠন বনগাঁ পৌর কর্মচারী সমিতি বিরোধিতা শুরু করে। শুরু হয় রাজনৈতিক চাপানউতোর। বনগাঁ পৌর কর্মচারী সমিতির দাবি ছিল, ওই কর্মীদের নিয়োগের ব্যাপারে সরকাকরি অনুমোদন নেওয়া হয়নি। অনুমতি নেওয়া হয়নি তাদেরও। এ জন্য তারা পুরমন্ত্রীর কাছে প্যানেল বাতিলের দাবি জানান।
কর্মীদের নিয়োগপত্র দেওয়ার সময় পুরসভা ছিল কংগ্রেসের দখলে। পরবর্তী নির্বাচনে কংগ্রেস-তৃণমূল জোট ক্ষমতায় আসে। রাজ্যে তখন বাম সরকার থাকায় স্বাভাবিক ভাবেই ওই কর্মীদের স্থায়ীকরণের ব্যাপারে রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবের অভিযোগ ওঠে। স্থায়ী নয়োগ না হওয়ার জন্য ওই কর্মীরা শুধুমাত্র বেতনের ‘বেসিক’টুকু পেতেন। অন্যান্য সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিলেন। রাজ্যে পালাবদলের পরে ওই কর্মীদের স্থায়ীকরণের ব্যাপারে উদ্যোগী হয় পুরসভা। অবশেষে এদিন থেকে ওই কর্মীরা স্থায়ীকর্মীর স্বীকৃতি পেলেন। বনগাঁ মিউনিসিপ্যাল স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক সঞ্জীব বাগচী বলেন, “আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হওয়ায় আমরা খুশি। যাঁদের প্রচেষ্টায় এটা সম্ভব হল তাঁদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।”
সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে পুরসভার সিপিএম কাউন্সিলার স্বপন মুখোপাধ্যায় বলেন, “খুবই ভাল কাজ হয়েছে। তবে প্রাক্তন সিপিএম পুরপ্রধান সুকুমার দাসের আমলে নিযুক্ত ১৪ জন অস্থায়ী কর্মীকেও স্থায়ী করা হলে আরও ভাল হত।”
আর বনগাঁ পৌর পৌর কর্মচারী সমিতির বক্তব্য, আগের সরকার যাকে অবৈধ বলে ঘোষণা করেছিল, বর্তমান সরকার সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে ওই ৫৬ জন কর্মীকে স্থায়ী করেছে। ওই কর্মীচারীদের সঙ্গে আমাদের কোনও বিরোধ নেই। তবে একইসঙ্গে বাকি যে ১৪ জন অস্থায়ী কর্মী রয়েছেন, তাঁদেরও স্থায়ী করা হলে আমরা আরও খুশি হতাম।” |
|
|
|
|
|