পশ্চিমে ভোটার তালিকা সংশোধন
বুথ এজেন্টও পাচ্ছে না সিপিএম
ক’মাস আগে পর্যন্তও যা ছিল ‘লালদুর্গ’, সেই পশ্চিম মেদিনীপুরে ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজে বুথ এজেন্টই খুঁজে পাচ্ছে না সিপিএম! পালাবদলের পরে জেলায় এতটাই কোণঠাসা ৩৫ বছর ধরে একচ্ছত্র শাসনক্ষমতায় থাকা দল। অবস্থা এমনই যে জেলা সিপিএমের একদা ‘দোর্দণ্ডপ্রতাপ’ সম্পাদক দীপক সরকারকে জেলাশাসকের কাছে চিঠি লিখে বর্তমান শাসকদের ‘সন্ত্রাস’ নিয়ে অনুযোগ জানাতে হচ্ছে! শাসকদল তৃণমূলের সন্ত্রাসের কারণেই কেশপুর, গড়বেতা, পিংলা, নয়াগ্রাম, গোপীবল্লভপুর, শালবনি, ঝাড়গ্রাম, মেদিনীপুরজেলার ১৯টির মধ্যে অন্তত এই ৮টি বিধানসভা এলাকায় বুথ এজেন্ট খুঁজে পেতে তাঁদের হিমসিম খেতে হয়েছে বলে সিপিএম নেতৃত্বের দাবি।
দলীয়স্তরে সম্মেলনের আগে বিষয়টি সিপিএম নেতৃত্বের কাছে আরওই উদ্বেগের। যেখানে ভোটার তালিকা সংশোধনের সময়ে বুথ এজেন্ট খুঁজতেই কালঘাম ছুটেছে, সেখানে আদৌ লোকাল কমিটিস্তরেও সম্মেলন সম্ভব কি না, সে সংশয় বেড়েছে দলের অন্দরেই। ভোটার তালিকা সংশোধনের সময়ে প্রতিটি স্বীকৃত রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে বুথ এজেন্টদের নামের তালিকা চায় নির্বাচন কমিশন। ওই এজেন্টরা বিএলওদের (বুথ লেভেল অফিসার) সহযোগিতা করেন। রাজনৈতিক দলগুলির পক্ষ থেকে এজেন্ট মনোনীত করে কমিশনে নাম পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কেশপুর, গড়বেতা, পিংলা, নয়াগ্রাম, গোপীবল্লভপুর, শালবনি, ঝাড়গ্রাম, মেদিনীপুর বিধানসভা কেন্দ্রের হাতেগোনা কয়েকটি মাত্র বুথে এজেন্টদের নাম পাঠাতে পেরেছে সিপিএম।
এই অবস্থায় জেলা নির্বাচনী আধিকারিক তথা জেলাশাসক সুরেন্দ্র গুপ্তকে লেখা চিঠিতে সিপিএমের জেলা সম্পাদক দীপক সরকারের অভিযোগ, ‘‘সন্ত্রাসের রাজত্বের কথা (রেন্ অফ টেরর) আপনার অজানা নয়। শাসকদলের অত্যাচারে জেলায় স্বাভাবিক রাজনৈতিক কর্মসূচি সংগঠিত করা যাচ্ছে না। শাসকদলের গুন্ডাবাহিনী জেলা জুড়ে সন্ত্রাস চালাচ্ছে। সন্ত্রাসের জন্যই শত শত পার্টি কর্মী-সমর্থক, হাজার হাজার পরিবার ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। এই সুযোগে শাসকদল চাইছে আমাদের কর্মী-সমর্থকদের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দিতে। এলাকায় এমন অনেক নতুন ভোটার রয়েছেন, যাঁরাও শাসকদলের ‘গুড বুকে’ নেই। তাঁরাও হয়তো ভোটার তালিকায় নাম তোলার অনুমতি পাবে না।” দীপকবাবুর তাই দাবি, “এলাকায় না-থাকলেও যেন কারও নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ না পড়ে, সে দিকে কড়া নজর রাখা প্রয়োজন। দ্বিতীয়ত, ‘সন্ত্রাস কবলিত’ এলাকার নতুন ভোটাররা যেন তাঁদের প্রতিনিধি মারফৎ সরাসরি ইআরও-র (ইলেক্ট্ররাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার) কাছে আবেদনপত্র পাঠাতে পারেন।’’ সিপিএম সম্পাদকের ‘অভিযোগপত্র’ পেয়েছেন জানিয়ে জেলাশাসকের বক্তব্য, “নির্বাচন কমিশনের বিধি মাফিকই যা হবার হবে।”
অন্য দিকে, তাঁদের বিরুদ্ধে আগের জমানার শাসকদলের জেলা সম্পাদক যে-সব অভিযোগ করেছেন, তা মানতে নারাজ জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। দলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়ের বরং পাল্টা দাবি, “৩৫ বছর ধরে নিরবচ্ছিন্ন সন্ত্রাসের জন্যই ওরা জন-বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।” দীপকবাবু এবং দীনেনবাবুর দাবি-পাল্টা দাবির চাপানউতোরে অবশ্য একটা জিনিস পরিষ্কারশাসক ও বিরোধীদলের অবস্থানগত পরিবর্তনই হয়েছে মাত্র, এ জেলায় ‘সন্ত্রাসের তরজা’র বদল আসেনি।
গত ১৩ মে বিধানসভা ভোটের ফলপ্রকাশের আগে পর্যন্ত পশ্চিম মেদিনীপুরের বিস্তীর্ণ এলাকাই ছিল সিপিএমের নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু ‘পরিবর্তনের হাওয়া’ সবই এলোমেলো করে দিয়েছে। ১৯টির মধ্যে ১০টি বিধানসভা কেন্দ্রই দখল করেছে তৃণমূল-কংগ্রেস জোট। তার পরেই ভাঙন ধরেছে সিপিএমের সাজানো সংগঠনে। কঙ্কাল-কাণ্ডে জড়িয়েও বহু নেতা-কর্মী হয় জেলবন্দি নয়তো ‘ফেরার’ হয়েছেন। ভোটার তালিকা সংশোধনে বুথ এজেন্টও যদি মনোনীত করা না যায়তা হলে আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভরাডুবির ভয় এখন থেকেই চাপে রাখছে সিপিএম নেতৃত্বকে। এখনও জেলা পরিষদ, ২৯টির মধ্যে ২৭টি পঞ্চায়েত সমিতি এবং প্রায় ৯০ শতাংশ গ্রাম পঞ্চায়েত ‘কাগজে-কলমে’ সিপিএমেরই দখলে। কিন্তু কার্যত ত্রি-স্তর পঞ্চায়েতেও সেই কর্তৃত্ব আর নেই সিপিএমের। আগামী দিনে ‘ঘুরে দাঁড়ানো’র সম্ভাবনা নিয়েও সংশয় বাড়ছে।
জঙ্গলমহলে মাওবাদীদের কাছে হারানো জমি ফিরে পেতে দীপকবাবু, অধুনা জেলবন্দি সুশান্ত ঘোষরা বছর দেড়েক আগে যে ধাঁচে ‘ঘুরে দাঁড়ানো’র চেষ্টা শুরু করেছিলেন, সেটা কিন্তু ইতিমধ্যেই দলের অন্দরে সমালোচিত হতে শুরু করেছে। দলীয় সম্মেলনে সেই সমালোচনার আঁচ আরও বাড়ার সম্ভাবনা। ‘বাহিনী’ তৈরি করে সেই প্রতিরোধের লাইনের বদলে গরিব মানুষের প্রকৃতই পাশে দাঁড়িয়ে রাজনৈতিক লড়াইয়ের উপরেই এখন জোর দিতে চাইছেন জেলা সিপিএমে দীপকবাবুর বিরোধী শিবিরের নেতারা। সম্মেলনেই অবশ্য ঠিক হবে আগামী দিনে কোন পথে হাঁটবে সিপিএম।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.