|
|
|
|
সম্পাদকীয় ১... |
সুসমাচার |
শ্যাম ও কুল-এর দ্বন্দ্বে কেবল শ্রীমতী নহেন, রিজার্ভ ব্যাঙ্কও বিদ্ধ। তাহাকে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণও করিতে হয়, আবার বৃদ্ধির হারের গায়ে যাতে বিপজ্জনক আঁচড় না পড়ে, তাহাও খেয়াল রাখিতে হয়। কাজটি কঠিন, নিঃসন্দেহে। বর্তমান পরিস্থিতিতে আরও কঠিন, কেননা বিবিধ কারণে বৃদ্ধির হার শ্লথ হইয়া পড়িতেছে, আরও শ্লথ হইবার সম্ভাবনা। মূল্যস্ফীতির হার নিম্নগামী হইবার নাম করিতেছে না। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যাঙ্ক একটি কাজই করিতে পারে কঠোরতর আর্থিক নীতি অবলম্বন। দীপাবলির পূর্বাহ্ণে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর দুব্বুরি সুব্বারাও জানাইলেন, ব্যাঙ্ক আরও এক দফা সুদের হার বাড়াইল। এই লইয়া গত কুড়ি মাসে ত্রয়োদশ বার। রেপো রেট এখন সাড়ে আট শতাংশ। তবে তিনি বাজারকে একেবারে হতাশ করেন নাই। জানাইয়াছেন, মূল্যস্ফীতি যদি নিতান্ত লাগামছাড়া না হয়, তবে সুদের হার আপাতত আর বাড়িবে না। বহুপ্রত্যাশিত এই খবরটি বাজারের উদ্বেগকে খানিক হইলেও প্রশমিত করিবে। তাহাতে বিনিয়োগের হার বাড়িতে পারে।
লক্ষণীয়, সুব্বারাও কিন্তু অদূর ভবিষ্যতে সুদ বৃদ্ধির সম্ভাবনাকে একেবারে উড়াইয়া দেন নাই। ব্যাঙ্কের নিজস্ব সাবধানতার অংশটুকু বাদ দিলেও তাহাতে একটি আশঙ্কা অবশিষ্ট থাকে বর্তমান কঠোর আর্থিক নীতি সত্ত্বেও মূল্যস্ফীতির হার ঊর্ধ্বগামী হইতে পারে। কেন, তাহার কয়েকটি জরুরি কারণ রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রকাশিত বার্তায় আছে। কারণগুলি এই রূপ: ভারতীয় কৃষির কাঠামোগত অসমতা, অপ্রতুল পরিকাঠামো, বেশ কয়েকটি তাৎপর্যপূর্ণ পণ্যের বাজারের সহিত সঙ্গতিহীন সরকারি দাম এবং দেশের বেহাল রাজস্ব পরিস্থিতি। প্রতিটি কারণই বিশদ মনোযোগ দাবি করে। ভারতীয় কৃষিক্ষেত্রের আমূল সংস্কার বহু বৎসর বকেয়া পড়িয়া আছে। সেই কাজটি করিবার জন্য যে রাজনৈতিক সাহসের প্রয়োজন, বর্তমান ইউ পি এ সরকার সেই সাহস জোগাড় করিতে পারিবে, এমন আশা কম। পরিকাঠামোগত উন্নয়নের কাজটিও স্বল্পমেয়াদে হইবার নহে। কাজটি এখনই জরুরি ভিত্তিতে আরম্ভ করিতে হইবে বইকী, কিন্তু তাহার সুফল মিলিতে সময় লাগিবে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে অর্থমন্ত্রক আপাতত একটি বড় সাহায্য করিতে পারে রাজস্ব পরিস্থিতির কিছু উন্নতি ঘটানো মন্ত্রকের সাধ্যাতীত নহে। অর্থমন্ত্রী দিনকয়েক পূর্বেই জানাইয়া দিয়াছেন, বাজেটে রাজকোষ ঘাটতির পরিমাণের যে অনুমান করা হইয়াছিল, প্রকৃত ঘাটতি তাহা অপেক্ষা বেশি হইবে। সরকার যে ভাবে বাজারে ঋণ করিবার পরিকল্পনা করিয়াছে, তাহাতে ঘাটতি বৃদ্ধি অনিবার্য। সরকারের অর্থ প্রয়োজন। তাহার জন্য বিলগ্নিকরণের কথা গুরুত্ব সহকারে ভাবিতে হইবে। সরকার ঘাটতির জালে জড়াইয়া পড়িলে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কঠোর আর্থিক নীতিও লক্ষ্যচ্যুত হইতে বাধ্য।
সাধারণ মানুষের জন্যও ব্যাঙ্ক একটি উপহার পেশ করিয়াছে। এত দিন পর্যন্ত বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কে সেভিংস অ্যাকাউন্টে সুদের হার রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বাঁধিয়া দিত। হারটি চার শতাংশে বাঁধা ছিল। ব্যাঙ্ক জানাইয়াছে, এই নিয়ন্ত্রণটিও উঠাইয়া লওয়া হইল। অতঃপর প্রতিটি ব্যাঙ্ক নিজের মতো করিয়া সুদের হার স্থির করিতে পারিবে। এবং, অ্যাকাউন্টে এক লক্ষ টাকার কম যে পরিমাণই অর্থ থাকুক না কেন, সব আমানতকারীর জন্য সুদের হার সমান হইবে। জোড়া সুখবর। প্রথমত, বাজারে প্রতিযোগিতার কারণে নিশ্চিত ভাবেই সুদের হার বাড়িবে। সেই সংকেত ইতিমধ্যেই মিলিয়াছে। দ্বিতীয়ত, জমা টাকার পরিমাণ নির্বিশেষে সুদের হার সমান হওয়ায় অপেক্ষাকৃত কম বিত্তের মানুষদের স্বার্থ সুরক্ষিত থাকিবে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ না করিতে পারায় ব্যাঙ্ক যদিবা মানুষের কাছে দোষী হইয়া থাকে, এই সিদ্ধান্তে সেই দোষ খানিক লাঘব হইল। |
|
|
|
|
|