একটা সময় ছিল, যখন বিশাল ১৪ হাত বা ২২ ফুটের ‘বড় মা’-র বিসর্জনের জন্য গ্রামের সব বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে হত। পুজোর পরেই অন্ধকারে ডুবে থাকত ভাতারের বড়বেলুন গ্রাম। এখন গ্রামের বিদ্যুতের হাইটেনশন লাইন বড়মাকে সম্মান জানাতে উঁচু করে দেওয়া হয়েছে। শুধু ছিন্ন করতে হয় মন্দির সংলগ্ন কিছু বাড়ির বিদ্যুতের সংযোগ। কিন্তু সেই মন খারাপের অন্ধকার আজও রয়ে গিয়েছে।
আজ, শুক্রবার বড় মায়ের বিসর্জন। এসেছে ঢাক-ঢোল, সানাই। মন্দির থেকে ওই বিশাল মূর্তিকে পুকুর পর্যন্ত নিয়ে যেতে দরকার হয় একটা লোহার রথ। সেই রথের নাটবল্টু টাইট করা হচ্ছে। দেওয়া হচ্ছে তেল ও মোবিল। মন্দির থেকে এই রথ তাঁকে নিয়ে যাবে পুকুর পর্যন্ত। তার জন্য পাতা হবে রেললাইন। সেই লাইন ধরে টানতে টানতে রথ নিয়ে যাওয়া হবে। লাইনের উপর দিয়ে চাকা গড়াবে। এগিয়ে যাবেন ‘বড় মা’। মন্দির থেকে পুকুরগাটে পর্যন্ত যেতে সময় লাগে কমপক্ষে দু-আড়াই ঘন্টা।
এই পুজো প্রায় সাতশো বছরের পুরনো, দাবি গ্রামের প্রবীণদের। পুজো শুরুর প্রচলিত গল্প শোনালেন মন্দিরের সেবাইত অজয়কুমার ভট্টাচার্য। |
একদা স্বপ্নাদেশ পেয়ে শক্তি সাধক ভৃগুরাম ভট্টাচার্য কেতুগ্রামের বহুলা থেকে চলে আসেন বড়বেলুনে, তৎকালীন যে গ্রামের নাম বিল্বপত্তন। সেখানে তখন মহাশ্মশান। জঙ্গলের মাঝে শ্মশানে তখন ঠ্যাঙাড়েদের আস্তানা। তারা সাধককে সরিয়ে দিতে তাঁর উপর অত্যাচার শুরু করল। কিন্তু সেই অত্যাচার হাসিমুখে সহ্য করে প্রতিদিনই তিনি কালীর সোয়া এক হাতের মুর্তি তৈরি করে পুজো করতে শুরু করলেন। এক দিন মূর্তি তৈরি করে স্নান সেরে এসে দেখেন, তাঁর তালপাতার কুটিরের ছাদ ভেদ করে মাথা চাড়া দিয়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাতের কালী। তাঁকে দেবী অভয় দিলেন। অভয় পেয়ে দেবীর আরাধনা করতে লাগলেন তিনি। বৃদ্ধ বয়সে মায়ের নির্দেশে সর্পাঘাতে মৃতা এক ব্রাক্ষণকন্যাকে প্রাণ দান করে তাঁকে বিবাহ করেন তিনি। তিন পুত্র হয় দম্পতির। তাঁদের বংশধরেরাই এখন এই পুজোর দায়িত্বে রয়েছেন।
মন্দিরের সেবাইত সঙ্ঘের সভাপতি নীলমণি ভট্টাচার্য ও সম্পাদক অসিতকুমার ভট্টাচার্য জানান, বড়বেলুনের বড় মায়ের জিভ তৈরি হয় কুলো দিয়ে। হাতগুলি বাঁশ দিয়ে। গোটা শরীর কাঠের পাটা কেটে তৈরি করে তার উপরে খড়ের আঁটি দিয়ে মোড়া হয়। সেই খড়ের উপরে মাটির প্রলেপ দিয়ে পুজোর দিনই মূতির রং করা হয়। রং শেষ হলে দেবীর সর্বাঙ্গ গয়নায় মুড়ে পুজো শুরু হয় অমাবস্যার নিশিতে। তিন দিন ধরে চলে এই পুজো। শেষে ভাইফোঁটার পর্ব শেষ করে বড় মা চলেন বিসর্জিতা হতে। গ্রামের বাসিন্দা মদনমোহন গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “পুজোর তিন দিন গ্রামে মানুষের ঢল নামে। বিসজর্নের মিছিলেই যোগ দেন প্রায় লক্ষাধিক মানুষ।” |