অচেনা জীবাণু থেকে শহরে জ্বরের প্রকোপ
ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গি, চিকুনগুনিয়া তো আছেই, পাশাপাশি রক্ত পরীক্ষায় কোনও জীবাণু না মেলা তিন ধরনের জ্বরও ভোগাচ্ছে শহরবাসীকে।
হঠাৎ করে জ্বর উঠে যাচ্ছে ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইটে। গাঁটে ব্যথা। চামড়ায় লালচে আভা। বাড়ির চিকিৎসক চটপট পাঠিয়ে দিচ্ছেন ক্লিনিকাল ল্যাবরেটরিতে। সন্দেহ, ডেঙ্গি কিংবা চিকুনগুনিয়া। এক বার রক্ত পরীক্ষা হল। কিছুই মিলল না। চিকিৎসক সতর্ক। ফের তিনি পাঠালেন রক্ত পরীক্ষার জন্য। এ বার অন্য ল্যাবরেটরিতে। ফল একই। এ বার সাধারণ অ্যান্টিবায়োটিক দিয়েই ছেড়ে দিচ্ছেন অধিকাংশ চিকিৎসক।
এই জ্বরে আক্রান্ত হয়ে একেবারে বিছানায় শুয়ে থাকার পরে এক সময়ে নিজেকে সুস্থ মনে হওয়ায় চিকিৎসকের অনুমতি নিয়ে রোগী কাজে যোগ দিলেন। কিংবা বাইরে বেরোলেন। শরীর সইল না। ফের এল জ্বর। তবে ১০৪-১০৫ ডিগ্রির নয়। ঘুসঘুসে জ্বর। গলায় ব্যথা। কারও কারও আবার জ্বর এল না। রয়ে গেল শরীর জুড়ে অস্বস্তি। ম্যাজম্যাজে ভাব। ফের চিকিৎসক সেই অ্যান্টিবায়োটিকই দিলেন। তবে এ বার কম মাত্রার।
আর এক ধরনের জ্বরও ভোগাচ্ছে শহরবাসীকে। প্রথম থেকেই জ্বর ঘোরাফেরা করছে ৯৯-১০০ ডিগ্রির মধ্যে। সঙ্গে গলা ব্যথা। প্রথমে রোগী বুঝতেই পারছেন না যে জ্বর। কিন্তু ভিতরে ভিতরে কাবু হয়ে পড়ছেন। জ্বর থাকছে দুই থেকে আড়াই সপ্তাহ পর্যন্ত। সাধারণ জ্বরের ট্যাবলেটে কাজ দিচ্ছে না। ভরসা সেই শরীর দুর্বল করানো অ্যান্টিবায়োটিকই।
আর এই তিন ধরনের জ্বর মানছে না কোনও লিঙ্গ বা বয়সের ভেদ। সকলকেই আক্রমণ করছে অপরিচিত এই সব জীবাণু।
চিকিৎসকেরা কী বলছেন? পরজীবী-বিশেষজ্ঞ অমিতাভ নন্দী বলেন, “যে সব উপসর্গ নিয়ে রোগীরা আসছেন, তাতে আমরা বিভ্রান্ত। প্রথমে মনে হচ্ছে ডেঙ্গি বা চিকুনগুনিয়া। চামড়ায় লাল দাগ হয়ে যাচ্ছে। আঙুলের চাপ পড়লেই জায়গাটা সাদা হয়ে যাচ্ছে। আঙুল তুললেই ফের বেরিয়ে পড়ছে লালচে ভাব। রক্ত পরীক্ষা করাচ্ছি। কিন্তু কোনও জীবাণুই মিলছে না।”
ম্যালেরিয়ার মতো ভাইরাল জ্বরও এখন ফিরে ফিরে হচ্ছে বলে জানালেন অমিতাভবাবু। তাঁর কথায়, “একটা সময়ে মনে হচ্ছে, জীবাণুটা শরীরের ভিতরে গিয়ে তার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে। রোগী নিজেকে সুস্থ মনে করে রাস্তায় বেরিয়েই বিপদ ডেকে আনছেন। কখনও এক বার জ্বর ছাড়ার তিন-চার দিন পরে ফের জ্বর আসছে। কখনও দ্বিতীয় বার জ্বর আসছে দুই-তিন সপ্তাহ পরে। কেন এমন হচ্ছে, তা বোঝা যাচ্ছে না। অমিতাভবাবু বলেন, “আমরা জীবাণুটাই ধরতে পারছি না। জীবাণুটা বাতাসের মাধ্যমে ঢুকছে, না কি সেটি পতঙ্গবাহিত, তা-ও বোঝা যাচ্ছে না। এখানে এ সব নিয়ে গবেষণার কাজ কম হয় বলেই বিষয়টি বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে।”
চিকিৎসক সুব্রত মৈত্র জানান, গত এক মাসে আজব এই জ্বরের অজস্র রোগীর চিকিৎসা করেছেন তাঁরা। ডেঙ্গি আর চিকুনগুনিয়ার মতো উপসর্গ, অথচ রক্ত পরীক্ষায় কিছুই পাওয়া যাচ্ছে না।


কী করবেন, কী করবেন না
• জ্বর কমার পরে বেশ কিছু দিন বিশ্রাম নিন
• প্রথম প্রথম বেশি পরিশ্রম করবেন না
• পুষ্টিকর খাবার এবং বেশি করে ফল খান
• বৃষ্টিতে ভিজবেন না, বেশি রোদে ঘুরবেন না
• উপসর্গ যা-ই থাক, রক্ত পরীক্ষা করান
• চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাবেন না

সুব্রতবাবু আরও বলেন, “গায়ে র্যাশ আর গাঁটে অসহ্য ব্যথা থাকছে। প্রবল ব্যথা কমাতে কখনও কখনও স্টেরয়েডও প্রয়োগ করতে হচ্ছে। তার ফলে রোগী অসম্ভব দুর্বল হয়ে পড়ছেন। অনেক রোগী খেতেও পারছেন না, তাই হাসপাতালে ভর্তি করে ড্রিপ দিয়ে চিকিৎসা করতে হচ্ছে।” জীবাণু অজ্ঞাত থাকায় এই জ্বরটিকে সাধারণ ভাবে ভাইরাল জ্বরই বলছেন সুব্রতবাবুরা। চিকিৎসা হচ্ছে সেই ভাবেই।” শুধু এই জ্বরই নয়, কলকাতায় এ বার ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গি ও চিকুনগুনিয়ার আক্রমণও সমান ভাবে চলছে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। একই ব্যক্তির রক্তে মিলেছে ডেঙ্গি এবং চিকুনগুনিয়ার জীবাণু। নিরীহ প্লাসমোডিয়াম ভাইভাক্স শরীরে গিয়ে ম্যালিগন্যান্ট ম্যালেরিয়ার মতো আচরণ করছে। শেষ পর্যন্ত হাসপাতাল বা নার্সিংহোমে ঠাঁই হচ্ছে রোগীর।
তবে কলকাতা পুরসভা চিন্তিত ডেঙ্গি-চিকুনগুনিয়ার মতো উপসর্গ নিয়ে আসা অজানা ভাইরাসের আক্রমণ নিয়ে। মেয়র পারিষদ অতীন ঘোষ বলেন, “কোনও এলাকায় এ ধরনের রোগীর কথা শুনলে আমরা লোক পাঠিয়ে রক্ত নিয়ে আসছি। আমাদের ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করেছি। কোনও জীবাণু মেলেনি। বিষয়টি স্বাস্থ্য দফতরকে জানিয়েছি। স্বাস্থ্য দফতর কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছে।” কলকাতা পুরসভার সংগ্রহ করা কিছু নমুনা পুণের ‘ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজি’তে পাঠানো হয়েছে বলে জানান অতীনবাবু।
মেয়র পারিষদ বলেন, জীবাণুটা বাতাসবাহিত বলে ‘স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিন’ পুরসভাকে জানিয়েছে। আর সেই কারণেই রোগটা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। সেই জন্যই আরও উদ্বিগ্ন পুরসভা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.