কর্মসূত্রে মুম্বইয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে জ্বরে অসুস্থ হয়ে রায়গঞ্জের শীতগ্রামের বাড়িতে ফেরার দুই সপ্তাহের মধ্যে ৩ শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার জেলা স্বাস্থ্য দফতরের চিকিৎসকদের একটি দল ওই গ্রামে যায়। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, সব মিলিয়ে ২০ জন মুম্বই থেকে অসুস্থ হয়ে ফিরেছেন। তাঁদের মধ্যে ১৭ জন জ্বরে আক্রান্ত। জরুরি ভিত্তিতে রক্ত পরীক্ষার পরে ১১ জনের শরীরে ম্যালিগন্যান্ট ম্যালেরিয়ার জীবাণু মিলেছে।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতদের নাম আশরাফুল মহম্মদ (২৫), নজরুল মহম্মদ (২৫) ও রশিদ মহম্মদ (২২)। এ দিন সকালে রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে মৃত্যু হয় নজরুলের। মঙ্গলবার মালদহ জেলা হাসপাতালে মৃত্যু হয় আশরাফুলের। রশিদের মৃত্যু হয় গত ১১ অক্টোবর রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে।
উত্তর দিনাজপুরের উপ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (২) অজয় চক্রবর্তী বলেন, “মুম্বইয়ে দিনমজুরি করতে গিয়ে ওই এলাকার ২০ জন যুবক অসুস্থ হয়ে পড়েন। ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। বাকি ১৭ জনের মধ্যে ১১ জনের রক্তে প্লাসমোডিয়াম ফ্যালসিপেরাম মিলেছে। ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েই ওই ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে সন্দেহ হচ্ছে। রোগ যাতে ছড়াতে না-পারে, সেই জন্য এলাকার বাসিন্দাদের রক্ত পরীক্ষার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
এ দিন ঘটনার খবর পেয়ে রায়গঞ্জের বিধায়ক মোহিত সেনগুপ্ত অসুস্থ ১১ জনকে রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে ভর্তি করাতে উদ্যোগী হন। মোহিতবাবু বলেন, “বাসিন্দারা যাতে অযথা আতঙ্কে না-ভোগেন, সে জন্য প্রশাসনের তরফে প্রচার শুরু হয়েছে। রায়গঞ্জ পুরসভা এবং স্বাস্থ্য দফতর অসুস্থদের চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছে।”
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, শীতগ্রামের মুসলিমপাড়ার প্রায় ৮০ জন যুবক সম্প্রতি মুম্বইয়ে কাজ করতে গিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে ২০ জন সম্প্রতি জ্বরে আক্রান্ত হন। জ্বর না-কমায় তাঁরা বাড়িতে ফিরে আসেন। তার পরেই একে একে মৃত্যুর ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। নজরুলের স্ত্রী রুকসানা বেগম বলেন, “সপ্তাহ খানেক আগেই স্বামী বাড়িতে ফেরেন। জ্বর ছিল। বাড়িতে দুই ছেলে এক মেয়ে রয়েছে। কী ভাবে দিন চলবে জানি না।” ট্রেনেই অসুস্থ হয়ে পড়ায় মালদহ জেলা হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয় আশরাফুলকে। সেখানেই মারা যান তিনি। তাঁর স্ত্রী রেহেনা খাতুন বলেন, “দ্রুত চিকিৎসার জন্য ওকে মালদহ স্টেশনে নামিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাই। তার পরেও বাঁচাতে পারলাম না।”
মৃত ও অসুস্থদের সঙ্গে কাজ করতে মুম্বইয়ে গিয়েছিলেন মোস্তাফা মহম্মদ নামে এক যুবক। এ দিন তাঁরও রক্ত পরীক্ষা হয়। তবে তাঁর রক্তে ম্যালেরিয়ার জীবাণু মেলেনি। তিনি বলেন, “দলের অনেকেই জ্বরে আক্রান্ত হওয়ায় ভয়ে সকলে মিলে ফিরে আসি। তার পরেও ৩ জনকে বাঁচানো গেল না।” এলাকার গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য আফতাব আলম বলেন, “এখনও গ্রামের অনেকে মুম্বইয়ে রয়েছেন। প্রশাসনকে সে কথা জানিয়ে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।”
|