চিত্র-১: সন্ধ্যা নামলেই অফিস জুড়ে দাপিয়ে বেড়ায় ধেড়ে ইঁদুর। নৈশ প্রহরায় যিনি থাকেন, তিনি কোনও রকমে বেঞ্চের উপর বিছানা পেতে শুয়ে থাকেন। রাতে ইঁদুরগুলোর দাপটে ঘুম ভেঙে যায় নৈশ প্রহরীর। মেঝেতে বড় বড় গর্ত যে কোনও মুহূর্তে সিমেন্টের মেঝে বসে যেতে পারে।
চিত্র-২: মাথার উপরের সিলিং ফেটে চৌচির। এখান-ওখান থেকে পলেস্তরা খসে পড়ছে। যে কোনও সময়ে তা ভেঙে পড়তে পারে হুড়মুড় করে।
যাঁরা এখানে দিনে আট ঘণ্টা থাকেন, তাঁরা সিলিংয়ের দিকে মুখ করে বসে থাকেন অধিকাংশ সময়ে। নতুন ফাটল দেখা দিলে নিজেরাই ভেঙে দেন সেই জায়গাটা। নিজেদের নিরাপত্তার জন্য।
কোনও অজ গ্রামের নয়, এই দুই চিত্র রাজ্যের দু’টি সরকারি দফতরের। কলকাতার একেবারে নাকের ডগায় নাগেরবাজার এবং বিরাটিতে খাদ্য দফতরের অফিসের হাল এমনই। ভাড়া বাড়িছে চলছে ওই অফিস। রাজ্য সরকার দীর্ঘদিন ভাড়া না বাড়ানোয় উচ্ছেদের নোটিস চলে এসেছে। কর্মীরা বার বার খাদ্য দফতরে অভিযোগ জানিয়েছেন, কিন্তু ফল হয়নি। সরকার পরিবর্তনের পরে পুরনো ওই ফাইল নজরে এসেছে খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের। মন্ত্রীর নির্দেশে রাজ্য জুড়ে রেশন অফিসগুলির হাল দেখতে বেরিয়ে পড়েছেন খাদ্য দফতরের অফিসারেরা। আর তাতেই কলকাতার উপকন্ঠে ওই দুই রেশন অফিসের চিত্রটা ধরা পড়েছে। |
ওই দুই রেশন অফিস ঘুরে দেখা গেল, ইঁদুরই শুধু নয়, সরকারি অফিসের দেওয়াল এমনকী নতুন কেনা কম্পিউটার টেবিলেও উইয়ের বাসা। এর মধ্যে বিরাটির রেশন অফিসের কাজের পরিধি কিন্তু বেশ বড়। উত্তর দমদম, নিউ ব্যারাকপুর পুরসভার সব রেশন দোকান এবং দক্ষিণ দমদম ও দমদম পুরসভার কয়েকটি ওয়ার্ডের রেশন দোকানের কাজকর্ম সেখান থেকে পরিচালনা করা হয়।
খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক এই পরিস্থিতি জানার পর কথা বলেছেন রাজ্যের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক স্তরে। ভাড়া বাড়িতে থাকা রেশনগুলির হাল ফেরানোর পরিকল্পনাও তৈরি করে ফেলেছেন তিনি। কী ভাবে? জ্যোতিপ্রিয়বাবু বললেন, “রাজ্যের সব ক’টি মহকুমাতেই খাদ্য দফতর নিজস্ব ভবন তৈরি করবে।” ভাড়ার টাকাই যেখানে দেওয়া যাচ্ছে না, সেখানে নতুন বাড়ি করার টাকা জোগাবে কে? মন্ত্রীর ব্যাখ্যা, “পরিকল্পনা দফতর থেকে কিছু টাকা পাওয়া যাবে। বাকিটা দেবে খাদ্য দফতর নিজেই। চলতি বছরে ৮টি মহকুমায় ৮টি নতুন ভবন তৈরি করা হবে। যেখানে বর্তমান অফিসের হাল বেশি খারাপ সেখানেই আগে কাজ শুরু হবে।” নজরদারির অভাবে অনেক জায়গাতেই খাদ্য দফতরের জমি বেদখল হয়ে গিয়েছে বলে মন্ত্রী জানাচ্ছেন। তিনি বলেন, “ওই সব জমি উদ্ধার করা হবে। প্রয়োজমে দখলদারদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।” |