ছিনতাইবাজ সন্দেহে মারধর
গণপিটুনিতে দু’জেলায় ৪ জনের মৃত্যু
প্রশাসনের তরফে আবেদন-নিবেদনই সার। আইনের শাসন নিজেদের হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা কমছে না এতটুকুও।
কালীপুজোর সকাল আর তার আগের রাতে আগে এমনই ঘটনার সাক্ষী রইল বীরভূমের লাভপুর আর বর্ধমানের জামুড়িয়া। মোটরবাইক ছিনতাইয়ের অভিযোগে মঙ্গলবার রাতে লাভপুরের বগতোড় বাসস্ট্যান্ডে দুই যুবককে গণপিটুনি দিয়ে মেরে ফেলা হয়। ভোরে জামুড়িয়ার চিঁচুড়িয়া গ্রাম সংলগ্ন এলাকায় ছিনতাইবাজ সন্দেহে গণপিটুনিতে মারা যায় দুই যুবকের।
বীরভূমের পুলিশ সুপার নিশাত পারভেজ বলেন, “লাভপুরে মৃত যুবকদের মধ্যে এক জনের পরিচয় জানা গিয়েছে। শেখ সাহেব ওরফে রাহুল নামে ওই যুবকের বাড়ি বর্ধমানের কেতুগ্রাম থানার জিকরা গ্রামে। তার মা দেহ শনাক্ত করেছেন। অন্য জনের পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে।” জামুড়িয়া যে দু’জন মারা গিয়েছেন, তাঁরা হলেন সুরেশ বাউরি (২৫) ও টিঙ্কু পাসোয়ান (২৫)। প্রথম জনের বাড়ি জামুড়িয়ার খাসকেন্দায়। টিঙ্কু অন্ডালের পিওর জামবাদ এলাকার বাসিন্দা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বগতোড়ের এক বাসিন্দাকে ফোনে বলা হয় বলা হয়, লাগোয়া মুর্শিদাবাদের মারুট থেকে চার যুবক দু’টি মোটরবাইক ছিনতাই করে জুবুটিয়া-মারুট রাস্তায় বগতোড়ার দিকে যাচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দারা যেন তাদের আটকান। সেইমতো বগতোড় বাসস্ট্যান্ডে হাজির হন শতাধিক এলাকাবাসী। এই সময় দু’টি বাইকে চার জনকে আসতে দেখে তাদের আটকানোর চেষ্টা করে জনতা। কিন্তু বাইক-আরোহীরা এক জনকে ধাক্কা মেরে পালানোর চেষ্টা করতেই দু’জন বাইক থেকে ছিটকে পড়ে।
লাভপুরের এই বগতোড় বাসস্ট্যান্ডেই পিটিয়ে মারা হয়
দুই যুবককে। বুধবার সোমনাথ মুস্তাফির তোলা ছবি।
এর পরেই শুরু হয় গণপিটুনি। রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ মৃত্যু হয় দু’জনের। এ দিন সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার ধারে রক্তের দাগ শুকিয়ে গিয়েছে। গোটা এলাকা থমথমে। স্থানীয় মানুষ মুখে কুলুপ এঁটেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই ব্যবসায়ী বলেন, “সন্ধ্যায় দোকান বন্ধ করে বাড়ি গিয়েছিলাম। পরে গণ্ডগোলের খবর পেয়ে এসে দেখি, রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে ২০-২৫ বছরের দুই যুবকের নিথর দেহ।” স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এলাকায় চুরি-ছিনতাই লেগেই রয়েছে। সেই নিয়ে ক্ষোভ ছিলই। তার উপরে মোটরবাইক ছিনতাকারীদের এক জন স্থানীয় এক যুবককে ধাক্কা মেরে পালানোর চেষ্টা করায় জনতা আরও খেপে যায়। পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, ওই ঘটনায় কেউ কোনও অভিযোগ করেননি। পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে গণপ্রহারে মৃত্যুর মামলা রুজু করেছে।
অন্য দিকে, সুরেশ ও টিঙ্কুর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁরা এ দিন সকাল সাড়ে ৫টা নাগাদ চিঁচুড়িয়া-নর্থ ছোড়া রাস্তায় এক ব্যবসায়ীর মোবাইল ও নগদ টাকা কেড়ে নিয়েছিলেন। ব্যবসায়ীর চিৎকারে আশপাশের লোকজন তাদের ঘিরে ফেলে। ব্যাপক মারধর করে পুলিশে খবর দেওয়া হয়। পুলিশ দু’জনকে উদ্ধার করে আসানসোল মহকুমা হাসপাতালে পাঠানোর কিছুক্ষণ পরেই তাদের মৃত্যু হয়। সুরেশের মা কাজল বাউরি কেন্দা ফাঁড়িতে লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন, তাঁর ছেলে বন্ধুর সঙ্গে বেড়াতে বেরিয়েছিলেন। কিছু অপরিচিত লোকজন তাকে পিটিয়ে মেরেছে। পুলিশ জানায়, একটি অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা দায়ের করা হয়েছে। কেউ গ্রেফতার হয়নি। পুলিশের দাবি, সুরেশের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। আগে সে জেলেও গিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সম্প্রতি এলাকায় চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়েছে।
আসানসোলের অতিরিক্ত জেলাশাসক বিশ্বজিৎ দত্ত বলেন, “মর্মান্তিক ঘটনা। জনগণের কাছে আমাদের আবেদন, প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে আইন হাতে তুলে নেবেন না। প্রশাসনের উপরে ভরসা রাখুন।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.