শুরু মুর্শিদাবাদ থেকে
রাজ্য জুড়ে কৃষি আন্দোলন ছড়িয়ে দিতে চান অধীর
মুর্শিদাবাদের ‘ভাত-ঘর’ কান্দি থেকেই রাজ্যের কংগ্রেস কর্মীদের মুখে ‘আন্দোলন-অন্ন’ যোগাতে নামছেন অধীর চৌধুরী।
কালীপুজোর পরেই মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা বহরমপুরের সাংসদ অধীর নামছেন ‘কৃষি-আন্দোলনে’। পোশাকি নাম ‘কৃষি-আন্দোলন’ হলেও আসলে তা ‘আন্দোলন’। রাজ্য কংগ্রেস বেশ কিছু দিন ধরেই ‘আন্দোলন-বিমুখতা’য় ভুগছে। অধীর চাইছেন, এই আন্দোলনের মাধ্যমে দলকে ফের পুরনো রাস্তায় ফেরাতে।
সারের ‘অস্বাভাবিক’ মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে এবং ধান-পাটে কৃষককে সহায়ক মূল্য দেওয়ার দাবি নিয়ে মুর্শিদাবাদের কান্দি মহকুমা থেকে আন্দোলনে নামছেন অধীর। তাঁর কথায়, “কান্দি হল মুর্শিদাবাদের ভাত-ঘর। জেলার সবচেয়ে বেশি ধান উৎপাদন হয় এই মহকুমাতেই। সেখানেই ধান চাষিরা হাহাকার করছেন! লাভজনক সহায়ক মূল্য পাচ্ছেন না। চাল মালিকদের দালাল ও ফড়েদের হাতে পড়ে পড়ে মার খাচ্ছেন তাঁরা। অন্য দিকে সারের দাম আকাশ-ছোঁয়া। কালোবাজারি হচ্ছে সার নিয়ে! এই অবস্থায় আমরা চুপ করে থাকতে পারি না।”
নিজের জেলা থেকে শুরু করে ওই আন্দোলন রাজ্য জুড়ে ছড়িয়ে দিতে চান অধীর। রাজ্য-রাজনীতিতে কংগ্রেসের ‘গুরুত্ব’ আরও বাড়াতে। এআইসিসি রাজ্য নেতৃত্বকে আন্দোলন করতে বললেও সাম্প্রতিক কালে তা দেখা যায়নি। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হওয়ার পর মানস ভুঁইয়া দলকে ‘চাঙ্গা’ করতে জেলা-সফর শুরু করেছিলেন। আন্দোলনের পরিকাঠামো তৈরি করতে না-করতেই তাঁকে সভাপতির দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিতে হয়। তাঁর পরে সভাপতি হন প্রদীপ ভট্টাচার্য। অধুনা তিনি রাজ্যসভার সদস্য। ‘বিষয়ভিত্তিক আন্দোলন’ করার ব্যাপারে কোনও কার্যকর ভূমিকায় প্রদেশ নেতৃত্বকে দেখা যাচ্ছে না। উপরন্তু, সরকারের শরিক হয়ে আন্দোলন করাও কঠিন।
এই প্রেক্ষাপটে অধীর (যাঁর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘সম্পর্ক’ সুবিদিত) আন্দোলনে নামছেন। কংগ্রেসের শীর্ষ নেতাদের একাংশের মতে, এই আন্দোলন রাজ্যে দলীয় কর্মীদের মুখে যেমন ‘ভাষা’ জোগাবে, তেমনই অধীরের নিজস্ব ঘাঁটি মুর্শিদাবাদেও আধিপত্য রক্ষায় সহায়ক হবে।
এর আগে গঙ্গা-পদ্মার ভাঙন রোধে পরিকল্পনার দাবি, আর্সেনিক দূষণের হাত থেকে জেলা বাঁচাতে বা কান্দি মাস্টার প্ল্যানের দাবিতে জেলা জুড়ে অধীর পদযাত্রা করেছেন। কিন্তু এ বার তাঁর আন্দোলনের প্রকৃতি আলাদা। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামে কৃষিজমি-রক্ষা আন্দোলনের ‘রাজনৈতিক ফসল’ তুলেছে তৃণমূল। কংগ্রেসও সেই পথে হাঁটছে? অধীর বলেন, “কারও পথে-টথে নয়। রাজ্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতেই আন্দোলনে নামছি।” চাষিদের দুরবস্থার কথা জানিয়ে এবং ওই বিষয়ে ‘মনোনিবেশ’ করার আর্জি জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে একটি চিঠিও পাঠিয়েছেন অধীর।
দরিদ্র মানুষের কল্যাণে কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলির উপর ‘নজরদারি’র জন্য হাইকম্যান্ডের নির্দেশে ইতিমধ্যেই প্রদেশ কংগ্রেস ‘মনিটরিং কমিটি’ করেছে। তাঁর আন্দোলনও কি তৃণমূলের নেতৃত্বাধীন সরকারকে কোনও ‘বার্তা’ দেবে? অধীর বলেন, “আমরা আন্দোলনে নামছি জোট সরকার ভাঙতে নয়। আবার কাউকে খুশি করতেও নয়। মানুষের প্রয়োজনে, অসহায় চাষিদের পাশে দাঁড়াতেই আন্দোলন।”
প্রসঙ্গত, একই দাবিতে সিপিএম-সহ বাম কৃষক সংগঠনগুলি নভেম্বর থেকেই জেলা-মহকুমায় আইন অমান্যের ডাক দিয়েছে। চাষিদের ‘দুরবস্থা’ নিয়ে কংগ্রেসও ‘উদ্বিগ্ন’। বীরভূমের জেলা কংগ্রেস সভাপতি অসিত মাল থেকে শুরু করে জলপাইগুড়ির বিধায়ক দেবপ্রসাদ রায়ের মতো বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতারা ইতিমধ্যেই তাঁদের জেলায় সম্মেলন করে বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য ইতিমধ্যেই পাটের ক্ষেত্রে কৃষককে ১০০ টাকা করে ভর্তুকি দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। কিন্তু বাম ও কংগ্রেস নেতাদের অভিযোগ, সেই ঘোষণা এখনও কার্যকর হয়নি।
এই পরিস্থিতিতে পঞ্চায়েত ভোটের আগে অধীরের নেতৃত্বে ‘কৃষি-আন্দোলনে’র দাওয়াই কংগ্রেসকে ‘মজবুত’ জমিতে দাঁড় করাতে পারে কিনা, সেটাই দেখার।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.