বাঁদনা ও সহরা পরবে মেতে উঠেছে বাঁকুড়া। এক দিকে কালীপুজোর মণ্ডপ ও রাস্তা আলোর রোশনাইয়ে যখন ভেসে যাচ্ছে, সেই সময় জেলার বাসিন্দাদের একাংশ এই দুই উৎসবে মেতে উঠল। প্রথা মেনে রাঢ় বাংলার এই জেলাতে কালীপুজোর দিন থেকেই এই পরব শুরু হয়ে গেল। চলবে ভাই ভোঁটার দিন পর্যন্ত।
অনেকে বলেন বন্দনা থেকে বাঁধনা শব্দটি এসেছে। এই উৎসব মূলত গরুর বন্দনা করা। বস্তুত, এই পরব মূলবাসীদের। সহরা মূলত আদিবাসীদের উৎসব। কালীপুজোর দিন গোয়াল ঘর পরিস্কার করা হয়। গোবর-মাটি দিয়ে নিকানো হয়। গরুদের স্নান করিয়ে শিংয়ে তেল মাখানো হয়। কপালে দেওয়া হয় সিঁদুরের টিপ। গোয়াল ঘরে প্রদীপ জ্বালানো হয়। আল্পনাও দেওয়া হয়। কথিত রয়েছে, মহাদেব কালীপুজোর রাতে গৃহস্থের গোয়াল পরিদর্শন করতে আসেন। রাতে হয় গরু জাগান। ঝাগড় দল গৃহস্থের গোয়ালে ঢোল, করতাল সহযোগে গান গাইতে বেরোয়। সারা রাত ধরে তাঁরা গ্রামে গ্রামে গান শোনান। তাঁদের পিঠে খেতে দেওয়ার চল রয়েছে।
পরের দিন হয় ‘গোহাল পুজো’। নতুন জামা-কাপড় পরে চাষের সরঞ্জাম লাঙল, জোয়াল, কোদাল ধুয়ে গোয়াল ঘরে রাখা হয়। বাড়ির এয়োস্ত্রীরা পুকুরে স্নান করে ভিজে কাপড়ে নতুন মালসায় ঘিয়ে ছেঁকা পিঠে তৈরি করেন। ভাই ফোঁটার দিন হয় গরু খুঁটান। গ্রামের ফাঁকা মাঠে গাছের মোটা ডাল পুঁতে সেখানে বলদ বা ষাঁড় বেঁধে রাখা হয়। তার পরে তার সামনে মরা পশুর চামড়া ঘুরিয়ে বিরক্তি তৈরি করা হয়। গোল করে ঘিরে থাকা দর্শকরা ঢাক, কাঁসর বাজান। প্রায় উন্মত্ত অবস্থায় বলদ বা ষাঁড় লাফালাফি করতে থাকে। তা দেখে খুশি হন দর্শকরা। এই সময় বাড়ির মেয়ে-জামাইকে বাড়িতে নিয়ে এসে আদর যত্ন করা হয়। জামাইকে শাশুড়ি ফোঁটা দেন। বাঁদনা ও সহরা বস্তুত এক ধরনের কৃষি উৎসব। মাঠে এই সময় পাকা ধান থাকে। ক’দিন পরেই সেই ধান গোলায় ভরা হবে। তাই তার আগে কৃষি কাজে সাহায্যকারী পশু গরুর যত্ন করা হয়। তালড্যাংরার বাসিন্দা গুরুপদ সোরেন, সিমলাপালের মহেন্দ্রনাথ সোরেন বলেন, “সারা বছর ধরে আমরা এই পরবের জন্য অপেক্ষা করে থাকি। নতুন পোশাক কেনা হয়। নাচ-গান হয়। সে জন্য বাদ্যযন্ত্র মেরামতি করে সাজিয়ে রাখা হয়।” |