বারাসত, মধ্যমগ্রামের কালীপুজো নিয়ে বরাবরই সুনাম উত্তর ২৪ পরগনার। গত কয়েক বছর ধরে বেশ সুনামের সঙ্গেই সেই সুনামে ভাগ বসিয়েছে হাবরা ও অশোকনগরের পুজো। বেশ বড় বাজেটের পুজোর আয়োজনের সঙ্গে সঙ্গে পুজোকমিটিগুলির মধ্যে কি মণ্ডপসজ্জা, কি প্রতিমা, কি আলো সবেতেই একে অন্যকে ছাপিয়ে যাওয়ার প্রতিযোগিতাও শুরু হয়েছে। থিমের বৈচিত্র্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে তারাপীঠের মহাশ্মশান, কন্যাকুমারীর বিবেকানন্দ রক, কোনারকের সূর্যমন্দির কি নেই। কোথাও কাচের তৈরি প্রতিমা তো কোথাও সব্জি বীজের, কোথাও বিস্কুটের প্রতিমা তাক লাগিয়ে দেবে দর্শনার্থীদের।
হাবরার পুজোগুলির মধ্যে অন্যতম বড় পুজো শ্রীপুর ভারতী সঙ্ঘ। এ বার পুজো উদ্যোক্তাদের ভাবনায় থিম ‘পরিবর্তন’। আলোকসজ্জায় দেখতে পাওয়া যাবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক সংগ্রামের নানা দিক। রাস্তার উপরে তৈরি করা হয়েছে বিশাল মহাকরণ। তৃণমূল নেত্রী হাত নেড়ে সকলকে স্বাগত জানাচ্ছেন। প্রতিমার উচ্চতা ৫০ ফুট। ডাকের সাজ। ‘কুমোরপাড়ার গরুর গাড়ি’ এ বার পুজোর ময়দানে নেমেছে কামারথুবা নিউ নবারুণ সঙ্ঘ। মণ্ডপের সামনে দেখা যাবে স্বয়ং রবিঠাকুরকে। শ্রীপুর স্পোর্টিং ক্লাবের মণ্ডপ তৈরি হয়েছে বাঁকুড়ার টেরাকোটার মিন্দের আদলে। প্রতিমাতেও টেরাকোটার ছাপ। শ্রীপুর ওয়েস্টবেঙ্গল ক্লাব তাদের ৫৪ তম বর্ষে মণ্ডপ তৈরি করেছে রাজস্থানের একটি বৌদ্ধ মন্দিরের আদলে। মণ্ডপের গায়ে রয়েছে নানা দেবদেবীর মূর্তি।
জয়গাছির মিলন তীর্থ ক্লাবের এ বার সুবর্ণজয়ন্তী বর্ষ। ভদোদরা সূর্যমন্দিরের আদলে তৈরি মণ্ডপ। দেখা যাবে জীবন্ত প্রতিমা। দেশবন্ধু সেবাসমিতির ৪৪ তম বর্ষে গুজরাতের একটি মন্দিরের আদলে তৈরি মণ্ডপ। কাঠ দিয়ে তৈরি মণ্ডপে কালীর পাশাপাশি দেখা যাবে বশিষ্ট মুনির কাছে রাম-লক্ষ্মণ দীক্ষা নিচ্ছেন। অন্যদিকে লব-কুশ আটকে রেখেছে অশ্বমেধের ঘোড়া।
মসলন্দপুর বয়েজ ক্লাবের এ বার চমক কোনারকের সূর্যমন্দির। মা কালী এখানে রুদ্র ভৈরবীরূপে। আলোয় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে রূপসী বাংলা এবং শ্যামা মায়ের বিবর্তন। সম্পূর্ণ প্লাইউডের তৈরি মণ্ডপ। অগ্নিবীণা তাদের মণ্ডপ তৈরি করেছে বাংলাদেশের একটি মন্দিরের আদলে। তালপাতার পাখা দিয়ে তৈরি মণ্ডপে প্রতিমা তৈরি হয়েছে সব্জি দিয়ে। অন্যতম আকর্ষণ ডিজিট্যাল ফোয়ারা। জাগরণী সঙ্ঘের মণ্ডপ তাইল্যান্ডের একটি মনাস্ট্রির আদলে। ৮০ ফুট উঁচু মণ্ডপে প্রতিমায় রয়েছে বৌদ্ধ সংস্কৃতির ছাপ। রয়েছে ড্রাগন।
বিশ্বাসহাটি নবারুণ সঙ্ঘের ২৫ তম বর্ষে থিম ধোনিবাহিনীর বিশ্বকাপ জয়। এ ছাড়াও রয়েছে ১৯১১ সালে মোহনবাগানের ঐতিহাসিক শিল্ড জয়। সংহতি আমরা সবাই ক্লাবের উপহার নৌকায় আসছেন মা কালী। আর গ্রামের মহিলারা কুলো, শাঁখ, ফুল দিয়ে তাঁকে স্বাগত জানাচ্ছেন। মা কালীর পাশে রয়েছে শিব, সারদাদেবী। গোবরডাঙা খাঁটুর উত্তরপাড়া পুজো কমিটির মণ্ডপ তৈরি হয়েছে ‘একান্ত আপন’ সিনেমার বাড়ির আদলে। এখানে বিস্কুটের প্রতিমার উচ্চতা ১২ ফুট।
অশোকনগরের অন্যতম বড় পুজো সঙ্ঘশ্রী ক্লাবের পুজো। কন্যাকুমারীর বিবেকানন্দ রকের আদলে মণ্ডপ তৈরি হয়েছে প্রায় আট বিঘা এলাকা জুড়ে। তৈরি করা হয়েছে কৃত্রিম সমুদ্র। দেখা যাবে জীবন্ত রামকৃষ্ণ ও মা সারদাদেবীকে। কচুয়ার সুভাষ সঙ্ঘ নেপালের এ কটি বৌদ্ধ মন্দিরর আদলে মণ্ডপ তৈরি করেছে। চন্দনগরের আলো। ৮ নম্বর অগ্রগূত সঙ্ঘের দেখতে হলে দর্শকদের পেরোতে হবে ঝুলন্ত সেতু। মাদুরকাঠি দিয়ে ৪৫ ফুট উঁচু কাল্পনিক মন্দির। রয়েছে বড় ফোয়ারা। ভাঙাগড়া ক্লাবের রাজবাড়ির আদলে মণ্ডপ সাজানো হয়েছে টুনির আলোয়। কচুয়ামোড় কিশোর সঙ্ঘের থিম তারাপীঠের মহাশ্মশান। দেখা যাবে সাধক বামাখ্যাপার ধ্যান ভাঙাতে তাঁকে ভয় দেখাতে ভূত পাঠাচ্ছেন মা কালী।
মেঘদূত সঙ্ঘের মণ্ডপের আদল অজন্তা-ইলোরার মতো। মা কালী এখানে দ্বিমুখী। ১/৩ পশ্চিমপল্লি সুবর্ণজয়ন্তী বর্ষে কাশ্মীরের একটি মন্দিরের আদলে তৈরি করেছে মণ্ডপ। এখানে মা কালীর চারটি রূপ। মেঠোফুল সঙ্ঘের থিমও কন্যাকুমারীর বিবেকানন্দ রক। কাচের তৈরি প্রতিমা। অশোকনগর নবীন সঙ্ঘের কাল্পনিক মন্দিরের আদলে মণ্ডপ। পিএল ক্যাম্প অধিবাসীবৃন্দও কাল্পনিক মন্দিরের থিমেই মণ্ডপ তৈরি করেছে। নজর কেড়ে নেবে গুমা রেলওয়ে হকার্স ইউনিয়নের পুজো। |