দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ফের আক্রান্ত পুলিশ। আইন নিজেদের হাতে তুলে নিয়ে উন্মত্ত জনতা আইনের রক্ষকদেরই মারধর করল জীবনতলায়। সোমবার যে পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়েছিল কুলপি থানার পুলিশকে, এক দিন পরে বুধবার প্রায় একই অভিজ্ঞতা হল ক্যানিংয়ের জীবনতলা থানার পুলিশকর্মীদের।
একাধিক ডাকাতির মামলায় অভিযুক্ত কুতুবুদ্দিন খান ওরফে কুতুব নামে এক দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করতে বুধবার জীবনতলার কালীবাড়ি এলাকায় যান এসআই পরিমল ভদ্র এবং চার কনস্টেবল। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, কুতুব সেই সময়ে একটি বাড়িতে ভাঙচুর চালাচ্ছিল। তাকে ঘটনাস্থল থেকে ধরা হতেই বেশ কিছু মহিলা-সহ প্রায় শ’পাঁচেক গ্রামবাসী পুলিশকর্মীদের ঘিরে ফেলেন। তাঁদের মাটিতে ফেলে রড-লাঠি দিয়ে শুরু হয় বেধড়ক মার। এক পুলিশকর্মীর রাইফেল ছিনিয়ে নিয়ে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। খবর পেশে আশপাশের কয়েকটি থানা থেকে বিশাল পুলিশ বাহিনী গিয়ে যখন পরিস্থিতি সামাল দেয়, তত ক্ষণে কুতুবকে ছিনিয়ে নিয়েছে জনতা। জখম পুলিশকর্মীদের ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। মাথায় গুরুতর জখম থাকায় সুব্রত মুখোপাধ্যায় নামে এক কনস্টেবলকে ওই হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়। |
কুলপি থানায় এবং পুলিশকর্মীদের আবাসনে হামলার ঘটনায় অভিযুক্তেরা এখনও সকলে ধরা পড়েনি। চলছে পুলিশি তল্লাশি। তার মধ্যেই বুধবারের ঘটনায় নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন পুলিশকর্মীরা। দু’দিনের ঘটনার পিছনে ‘রাজনৈতিক উস্কানি’ রয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তের পরে মনে করছে পুলিশ। তবে কোন রাজনৈতিক দলের উস্কানি, তা পুলিশ স্পষ্ট করে বলেনি। বুধবার পুলিশকর্মীদের মারধরের অভিযোগে মারফত খান এবং ইমান খান নামে দু’জনকে কালীবাড়ি এলাকা থেকে ধরা হয়েছে।
কিন্তু ফের কোনও দুষ্কৃতীকে ধরতে গিয়ে পুলিশকে যদি একই পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়, তা হলে? কী ভাবছেন পুলিশকর্তারা?
এ ব্যাপারে সরাসরি কোনও মন্তব্য করতে চাননি পুলিশ সুপার লক্ষ্মীনারায়ণ মিনা। তিনি জানিয়েছেন, ক্যানিংয়ের এসডিপিও অবদেশ পাঠকের নেতৃত্বে জীবনতলার ঘটনার পরে তল্লাশি অভিযান শুরু হয়েছে। মহিলা পুলিশের একটি দলও তল্লাশিতে সামিল হয়েছে। আলিপুর থেকে অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনী পাঠানো হয়েছে জেলায়।
জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, কুতুবের বিরুদ্ধে দুই ২৪ পরগনা এবং হুগলির বিভিন্ন থানা এলাকা মিলিয়ে প্রায় ৬০টি ডাকাতির অভিযোগ রয়েছে। ক্যানিংয়ের কালীবাড়ি এলাকাতেই কুতুবের বাড়ি। বছর খানেক ধরে সে পলাতক ছিল। মাস তিনেক আগে এলাকায় ফিরে ফের নানা সমাজবিরোধীমূলক কাজ শুরু করে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওই এলাকার বাসিন্দা নুর মহম্মদ কুতুবের বিরুদ্ধে মাধধর ও প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ দায়ের করেন। এই অভিযোগের ভিত্তিতেই পুলিশ বুধবার কালীবাড়িতে যায়। |