বেরা উৎসবের পরে এ বার দীপাবলির আলোয় ভাসল লালবাগ। বারোয়ারি ও ব্যক্তিগত পুজো মিলিয়ে প্রায় শতাধিক কালীপুজোর আয়োজনে মেতে উঠেছে নবাবের শহর মুর্শিদাবাদ। তার মধ্যে প্রায় দেড় শত বর্ষের প্রাচীন পুজো যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে নতুন পুজোর সূচনা। এর পাশাপাশি লালবাগের পুজোয় অন্য মাত্রা এনেছে মহিলাদের পরিচালিত কালীপুজোও। সব মিলিয়ে বিভিন্ন পুজো মণ্ডপের পাশাপাশি আলোয় ভাসছে বাড়ির বারান্দাগুলিও।
১৪৯ বছরের লালবাগ পাঁচরাহা বাজার কালীমন্দির পুজো কমিটির কালীপুজোয় নিষ্ঠা ও আচার মেনে পূজিত হন কালীপ্রতিমা। পুজো কমিটির অন্যতম কর্তা বাসুদেব দত্ত বলেন, “তান্ত্রিক মতে আমাদের পুজো হয়ে থাকে। কালীপুজো উপলক্ষে যাঁরা উপাবাস থাকেন, তাঁরা পুজো শেষে ভোগ খেয়ে উপবাস ভঙ্গ করেন। পরের দিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মণ্ডপ চত্বর থেকে পোলাও বিতরণ করার রেওয়াজ রয়েছে।” ওই পুজোর প্রতিমা শ্যামাকালী। তবে প্রায় সার্ধশতবর্ষ আগে পুজোর প্রচলন কিভাবে হয়েছিল, তা আজ আর কারও জানা নেই। বাসুদেববাবু বলেন, “আগামী বছর পুজোর সার্ধশতবর্ষ উপলক্ষে বড় আকারে পুজোর আয়োজন করা হবে বলেই এবছর অনাড়ম্বর ভাবে পুজো করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।”
এদিকে সূচনা কালেই আড়ম্বরে লালবাগের অন্য পুজো কমিটিকে পিছনে ফেলে চমকে দিয়েছে সাহানগর ঘাট কালীপুজো কমিটি। ওই পুজো কমিটির ‘থিম’ নায়াগ্রা জলপ্রপাত। গুহার মধ্যে কালীমূর্তির অধিষ্ঠান। পাহাড়ের গা কেটে প্রায় ৩০ ফুট লম্বা ও প্রায় ৪০ ফুট চওড়া কৃত্রিম গুহা নির্মিত হয়েছে। পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে আসছে জলপ্রপাত। মণ্ডপ সজ্জায় কোনও খামতি না থাকেএজন্য সোদপুর থেকে শিল্পী নিয়ে আসা হয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছেন লালবাগের শিল্পীও। কমিটির অন্যতম পার্থপ্রতিম চট্টোপাধ্যায় ও চম্পক রায় একযোগে বলেন, “ভাগীরথীর পাড় ঘেঁষে বিশাল মণ্ডপ তৈরি করা হয়েছে। প্লাস্টার প্যারিস, মুলি বাঁশ ও সিমেন্ট দিয়ে কৃত্রিম পাহাড় তৈরি করা হয়েছে। ওই পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে আসছে জলের ধারা।” ওই পুজোর বিশেষ বৈশিষ্ট্যপুজোর আয়োজনে পাড়ার বাসিন্দাদের কাছ থেকে কোনও চাঁদা তোলা হয়নি। পুজো কমিটির সদস্যদের চাঁদায় ও বিজ্ঞাপনদাতাদের কাছ থেকে অনুদানের অর্থে ‘বিগ বাজেটের’ পুজোর সূচনা করেছে ওই পুজো কমিটি।
কুতুবপুর সোনার তরী সংঘের পুজোর মণ্ডপসজ্জায় নবাব বাহাদুর ওয়াসিফ আলি মির্জার স্মৃতি বিজড়িত ওয়াসিফ মঞ্জিলের ঘন্টা ঘরের আদল। প্রায় ৩০ ফুট লম্বা ও ১৮ ফুট চওড়া ঘন্টা ঘরের মধ্যে কালীমূর্তির প্রতিষ্ঠা করে পুজোর আয়োজন করেন পুজো উদ্যোক্তারা। ওই পুজো কমিটির সম্পাদক রথীন হাজরা বলেন, “২০ বছরের পুজো। এর আগে পাড়ায় কোনও কালীপুজো হত না। তখন পাড়ার বাসিন্দাদের চাহিদা মেনে ক্লাবের সদস্যরা কালীপুজো আয়োজনে উদ্যোগী হন। সেই শুরু। তবে সদস্যদের চাঁদা আর পাড়ার বাসিন্দারা নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী যে অনুদান দেন, তাতেই পুজোর আয়োজন হয়ে থাকে।” ওই পুজোয় পাড়ার মহিলারা সক্রিয় ভাবে অংশ নেন। রথীনবাবু বলেন, “পাড়ার মহিলাদের অংশগ্রহণ ছাড়া আমাদের পুজো অসম্পূর্ণ থাকে। মায়ের ভোগ রান্না থেকে পুজোর যাবতীয় কাজে মহিলারা অংশ নেন।” পুজো শেষে ওই রাতেই পাড়ার প্রতিটি বাড়িতে ভোগ পৌঁছে দিয়ে আসা হয়। পরের দিন সকাল থেকেও মণ্ডপ চত্বর থেকে বিতরণ করা হয় পুজোর ভোগ।
অন্য দিকে সাহানগর ওমরাহগঞ্জ দুর্গাপুজো-কালীপুজো কমিটির পুজোয় মহিলারাই সর্বেসর্বা। চাঁদা তোলা থেকে পুজোর যাবতীয় আয়োজনে রয়েছেন পাড়ার প্রায় ৫০ জন মহিলা। হেঁসেল সামলানোর মত পুজোর সব কাজ তাঁরাই সামাল দেন। পুজো কমিটির অন্যতম সুমিতা ভট্টাচার্য বলেন, “আমাদের ৩০ বছরের পুজো। যাবতীয় আচার মেনে পুজোর আয়োজন হয়ে থাকে। পুজো শেষে ওই রাতেই আমরা মহিলারা দল বেঁধে গিয়ে পাড়ার প্রতিটি বাড়িতে পুজোর ভোগ পৌঁছে দিই।” |