|
|
|
|
হলদিয়ায় গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব |
তৃণমূল অফিসে হামলা, জখম পাঁচ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • হলদিয়া |
তৃণমূল প্রভাবিত শ্রমিক সংগঠনের কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দিল সশস্ত্র লোকজন। আহত হলেন ৭ শ্রমিক-কর্মচারী। আহতদের মধ্যে রয়েছেন নন্দীগ্রামে তৃণমূলের নেতৃত্বে জমি-রক্ষার আন্দোলনে গিয়ে ২০০৭-এর ১৪ মার্চ পুলিশের গুলিতে জখম গোকুলনগরের যুবক অভিজিৎ গিরিও। যিনি এখন হলদিয়ার একটি কারখানার ঠিকা-শ্রমিক।
বুধবার ভোরে হলদিয়া শিল্পতালুকের কসবেড়িয়া এলাকায় ইন্ডিয়া পাওয়ার কর্পোরেশন লিমিটেডের প্রকল্প এলাকায় ঘটনাটি ঘটে। ওই কারখানার দখল নিয়ে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব চলছিল। তাই অভিযোগের তির দলেরই অন্য গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান, তমলুকের তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী কসবেড়িয়া শিল্প-তালুকের ওই শ্রমিক সংগঠনটির সঙ্গে ‘দলের কোনও যোগ নেই’ বলে দাবি করেছেন। গোটা ঘটনাটিকে ‘অরাজনৈতিক’ বলেও মন্তব্য করেছেন সাংসদ। জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক মামুদ হোসেনের আবার দাবি, “হামলাকারীরা সমাজবিরোধী।” যদিও হলদিয়া শিল্পতালুকে একাধিক কারখানায় ঠিকা-শ্রমিক নিয়োগ নিয়ে তৃণমূলের বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ ক্রমেই বাড়ছে। এই নিয়ে উদ্বিগ্ন শিল্প-পরিচালকেরা অনেকে প্রশাসনিক মহলেও যোগাযোগ করেছেন। পুলিশ জানিয়েছে, বুধবারের ঘটনা নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন ভোর চারটে নাগাদ প্রকল্প এলাকার ধার ধরে জনা পঁয়ত্রিশেক সশস্ত্র লোক শ্রমিক সংগঠনের ওই কার্যালয়ে চড়াও হয়। অনেকের মুখই কালো কাপড়ে ঢাকা ছিল। হাতে পিস্তল, তরোয়াল, লোহার রড। তারা কার্যালয়ে ঢুকে ৭ কর্মী-সমর্থককে বেধড়ক মারধর করে। অভিজিৎ গিরিকে রাস্তায় টেনে নিয়ে গিয়ে চপার দিয়ে মাথায় আঘাত করা হয়। |
|
হামলার পরে কসবেড়িয়ার তৃণমূল কার্যালয়। ছবি: আরিফ ইকবাল খান। |
গুরুতর জখম অভিজিৎকে হলদিয়া মহকুমা হাসপাতাল থেকে কাঁথির একটি বেসরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অন্য আর এক আহত রফিকুল ইসলামের কথায়, ‘‘আমরা ঘুমিয়ে ছিলাম। আচমকা হামলা করলে প্রতিরোধের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলি। মার খেয়ে ছুটে পালাই। তার পর দূর থেকে দেখলাম আমাদের অফিস দাউ দাউ করে জ্বলছে।’’ জখম হয়েছেন উত্তম ভুঁইয়া, মনোরঞ্জন বেরা, প্রকাশ প্রধান নামে আরও কয়েক জন কর্মী-সমর্থক।
২০০৮ সাল থেকেই তৃণমূল পরিচালিত শ্রমিক সংগঠনটির কার্যালয় রয়েছে ইন্ডিয়া পাওয়ার কর্পোরেশন লিমিটেডের প্রকল্প এলাকায়। সভাপতি তৃণমূল নেতা আনন্দ ভুঁইয়া। বর্তমানে প্রায় ৭০০ সদস্য রয়েছে এই ইউনিটে। সম্প্রতি অন্য তৃণমূল নেতা জয়দেব গায়েন ও ছবিলাল ভুঁইয়ার নেতৃত্বে প্রকল্প এলাকার বাইরে আরও একটি কার্যালয় গড়ে উঠলে গণ্ডগোল শুরু হয়। প্রশাসনের হস্তক্ষেপে তুলে দেওয়া হয় সদ্য-নির্মিত কার্যালয়টি। সেই রাগেই তৃণমূলের ওই গোষ্ঠী এ দিন হামলা চালিয়েছে বলে অনুমান আনন্দ ভুঁইয়ার। তাঁর অভিযোগ, ‘‘আমাদেরই একটা গোষ্ঠী ভিন্ন কার্যালয় গঠন করেছিল। সেটা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রতিশোধ নিয়েছে বলে আমার ধারণা। তবে বিষয়টি তদন্তসাপেক্ষ।’’ তিনি বলেন, “‘৫০টি চেয়ার, ১০টি টেবিল, ৩টি আলমারি, টিভি, নগদ ২০ হাজার টাকা, মূল্যবান নথি-সহ প্রায় দেড় লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।”
তৃণমূলের অন্য গোষ্ঠীর তরফে অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। জয়দেব গায়েন বলেন, “সম্প্রতি ওই কার্যালয়ে বেশ কিছু অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার হয়। তার পরেই ওই সংগঠন ছেড়ে অনেকে আমাদের সংগঠনে যোগ দেয়। তাদেরই মধ্যে কারও ব্যক্তিগত রাগ থাকতে পারে আনন্দবাবুর উপরে। সংগঠনগত ভাবে আমরা এই ঘটনায় জড়িত নই।” অভিযোগ পেয়ে এ দিন ঘটনাস্থলে আসেন মহিষাদলের সার্কেল ইন্সপেক্টর শুভঙ্কর দে। তিনি বলেন, ‘‘আমরা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছি।” |
|
|
|
|
|