|
|
|
|
শিল্পশহরেও থিমের রমরমা |
দেবমাল্য বাগচি • হলদিয়া |
শ্যামাপুজোতেও জাকজমকের দিক থেকে পিছিয়ে রইল না শিল্পশহর হলদিয়া।
তবে প্রতিবারের মতো এ বছরও দেবীর আরাধনা শহরের অদূরে সুতাহাটায় পুজোর আনন্দে মেতেছেন শিল্পশহরের বাসিন্দারা। তবে এ বার বেশ কয়েকটি বড় বাজেটের পুজোর উদ্যোক্তারা মণ্ডপসজ্জা ও প্রতিমার পাশাপাশি সামাজিক সেবামূলক কাজে বেশ কিছু টাকা ব্যয় করেছেন। সুতাহাটা থানা এলাকার নিউ তরুণ সংঘের পুজোয় মণ্ডপে থিমের ভাবনা ও প্রতিমায় মৌলিক রূপ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ৩৭ তম বর্ষের পুজোয় চাঁচ, কুলো, ঝুড়ি, পাখা সহ দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত বাঁশের সামগ্রী দিয়ে প্রায় ৪০ ফুটের মণ্ডপ তৈরি হয়েছে। মণ্ডপের ভিতরেও থাকছে নানা কারুকাজ। নন্দকুমারের প্রতিমা শিল্পী যুগলকিশোর জানা ১৪ ফুটের মূল প্রতিমা ছাড়াও ধূমাবতী ও কালীর কালরাত্রি রূপ ফুটিয়ে তুলেছেন। বুধবার পুজোর উদ্বোধন করেন ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের মহারাজ স্বামী দর্শনানন্দ। এ দিনই এলাকার ৭০০ ছাত্রকে স্কুলব্যাগ বিতরণ করা হয়। পুজো কমিটির সম্পাদক পিন্টু দাস বলেন, “আমরা ‘দীপান্বিতা উৎসব’ নামে একটি পত্রিকাও প্রতিবছর বের করি যা থেকে পুজোর কিছু খরচ উঠে আসে।” সুতাহাটা বাজারের অলস্টার, মিলন সংঘ ও অ্যাথলেটিক ক্লাবের পুজোয় অবশ্য নেই থিমের ঘনঘটা, প্রতিমার আতিশয্য। |
|
সুতাহাটা ফ্রেন্ডশিপ ওয়েলফেয়ার সোসাইটির মণ্ডপ। নিজস্ব চিত্র। |
অন্য দিকে, প্রযুক্তির অভিশাপ ও অরণ্য বিনাশের পাশাপাশি প্রাণিকুলের বিনাশ এই ভাবনাকে থেকেই আমলাট নিউ তরুণ ডেভলপমেন্ট অর্গানাইজেশন এ বার বন্যপ্রাণী ও পাখি সংরক্ষণকে তাঁদের থিম হিসেবে বেছে নিয়েছে। মাটির ময়না, টিয়া, ময়ূর, বাঘ, চড়ুইয়ের মুক্ত বিচরণক্ষেত্র হয়েছে এই মণ্ডপ। গ্রামেরই শিল্পী শোভন দাস এই ভাবনার রূপ দিয়েছেন। তবে প্রতিমা সাবেকি। সভাপতি সুতনু মাইতির কথায়, “বন্যপ্রাণী শিকার ও বৃক্ষচ্ছেদন যে আইনত অপরাধ সেই ভাবনাই তুলে ধরা হয়েছে।” তবে ৪০ ফুটের মণ্ডপ তৈরী হয়েছে মাদুর, ঝুড়ি, চাঁচ ও বাঁশের সামগ্রী দিয়ে মণ্ডপ তৈরি করলেও গ্রামের নিশান ক্লাব এ বার জোর দিয়েছে সমাজসেবামূলক কাজে। সভাপতি অংশুমান মাইতি বলেন, “আমাদের বেশিরভাগ ব্যয় হয়েছে সামাজিক কাজে। এ বছর পুজোর উদ্বোধন করবেন সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী।”
এ দিকে, সুতাহাটা রাজ্য সড়কের ওপর ফেন্ডশিপ ওয়েল ফেয়ার সোসাইটির মণ্ডপে ঢুকলেই চোখে পড়বে পাহাড়ের নানা দৃশ্য। নন্দকুমারের শঙ্কর প্রধানের হাতে চট ও থার্মোকলের ৫৫ ফুটের মণ্ডপ সেজে উঠেছে একেবারে পাহাড়ের গুহা মন্দিরের আদলে। পাহাড়ের মাথায় শিবের মূর্তি দিয়ে পড়ছে ঝরনার জল। রয়েছে মাটির জন্তু। পাহাড় কেটে তৈরি মূর্তির অনুকরণে প্রতিমা তৈরি করেছেন শিল্পী ছবিলাল মান্না। সম্পাদক দেবব্রত মহাপাত্র বলেন, “ক্লাব সদস্যেরাই ৯০ ভাগ খরচ বহন করেন। বাকিটা চাঁদার মাধ্যমে উঠে আসে।” নিজেদের পত্রিকা ‘আলোর পথে যাত্রায়’ বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আসা টাকায় পুজো করছেন সাইকো সুতাহাটা ইয়ুথ কালচারাল অর্গানাইজেশন। মণ্ডপ হয়েছে থার্মোকলের ওপর কাঠের গুঁড়ি দিয়ে। মণ্ডপের পাশেই শিক্ষামূলক প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। রয়েছে সাবমেরিন ও জাহাজের মডেল। এ ছাড়া দুঃস্থ ছেলেমেয়েদের বই-খাতা বিতরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এলাকার প্রয়াস ক্লাব এ বার পুরুলিয়ার বাঘমুন্ডির ভৈরবী কালীর মন্দিরের আদলে ৪০ ফুটের মণ্ডপ তৈরি করেছেন। গ্রামেরই শিল্পী বিধান রায় প্রতিমাতেও ভৈরবী কালীর রূপ ফুটিয়ে তুলেছেন। এ ছাড়া মহকুমার মহিষাদলের রেড স্টার ক্লাব, ক্লাসিক ক্লাব, চৈতন্যপুরের নবোদয় ক্লাবের পুজোও নজর কেড়েছে।
এ দিন নন্দীগ্রামের জোয়ারভাটা ক্লাবে কালীপুজোর উদ্বোধন করেন তমলুকের তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী। |
|
|
|
|
|