প্রতি বছর নতুন বেনারসি কেনা হয়। মায়ের অঙ্গে শোভা পায় সেই শাড়ি। ‘সাধক’ নিজে যা খেতে ভালবাসেন, মাকেও তাই খেতে দেওয়া হয়। কেন না, মা কালীকে নিজেদেরই একজন বলে মনে করে কোন্নগর নবগ্রাম (সি’ব্লক) অর্জুনতলার বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার।
এই পরিবারের আদি বাসস্থান ছিল বাংলাদেশের বরিশালে। সেখানে কালীপুজো হত। প্রয়াত রত্নেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায় প্রায় ছয় দশক আগে খুব ছোট বয়সে সে দেশ থেকে পাততাড়ি গুটিয়ে এ দেশে চলে আসেন। তিনি প্রথমে হাওড়ার সালকিয়ায় ভাড়া থাকতেন। তারপরে অর্জুনতলায় আসেন পাকাপাকি ভাবে। রত্নেশ্বরবাবুর ছেলে দেবাশিস পরিবারের বর্তমান কর্তা। পরিবারের লোকেরা জানান, বছর পঞ্চান্ন বছরের দেবাশিসবাবু ছোট থেকেই কালী ঠাকুরের ভক্ত। কিশোর বয়স থেকেই তিনি মেলা থেকে কালী ঠাকুরের ছবি বা মূর্তি কিনে আনতেন। সেই ছবি বা মূর্তি পুজো করা হত। ১৯৮০ সালে তিনি চাকরি পাওয়ার বছর থেকেই বড় করে পুজো আরম্ভ হয়। সেই পুজোই চলে আসছে আড়ম্বরের সঙ্গে। পুজোর কাজে হাত লাগাতেন রত্নেশ্বরবাবু-সহ বাড়ির অন্যরাও। ২০০৭ সালে রত্নেশ্বরবাবু মারা যান। |
মা বেলীদেবী, স্ত্রী চন্দ্রাণী এবং ছেলে দেবব্রতকে নিয়ে দেবাশিসবাবুর সংসার। বেশ কিছু দিন ধরে দেবাশিসবাবু স্নায়ুজনিত রোগে ভুগছেন। ভাল ভাবে হাঁটাচলা করতে পারেন না। তা সত্ত্বেও অবশ্য পুজোর আয়োজনে খামতি থাকে না। লম্বা বারান্দার এক প্রান্তে প্রতিমা বসানো হয়। প্রতিমার পিছনে দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের চিত্র। বারান্দা জুড়ে সুদৃশ্য আলপনা। প্রতিমার এক দিকে থাকেন বামাক্ষ্যাপা ও গণেশ। অন্য দিকে শ্রীরামকৃষ্ণ। চন্দ্রাণীদেবী বলেন, “বরিশালের পুজোর কথা আমরা বিশদে জানি না। শ্বশুরমশাইয়ের মুখে শুনেছি, ওখানকার পুজোয় এখনকার মতো আড়ম্বর ছিল না। তবে, পাঁঠাবলি হত। এখানে পশুবলি দেওয়া হয় না। একটা চালকুমড়ো বলি দেওয়া হয়। ওখানে শাক্তমতে পুজো হত। এখানে হয় বৈষ্ণবমতে।” চন্দ্রাণীদেবীর কথায়, “স্বামীর হাত ধরেই এখানে পুজো শুরু হয়। মা-কে আমরা নিজেদের বাড়িরই এক জন মনে করি। মায়ের জন্য নিজেরা পছন্দ করে বেনারসি কিনে আনি প্রত্যেক বছর।” দেবাশিসবাবু যা যা খেতে পছন্দ করেন মাকে তা-ই ভোগ দেওয়া হয়। এই তালিকায় থাকে খিচুরি, পাঁচ রকমের ভাজা, পোলাও, নানাবিধ তরকারি থেকে দেবাশিসবাবুর অতিপ্রিয় আলুর দম। মিষ্টান্নের মধ্যে রসগোল্লা, সন্দেশ, দই, ছানার জিলিপি, বোদে, মিহিদানা কিছুই বাদ থাকে না। দেবীকে পড়ানো হয় অলঙ্কার। বহু মানুষ আসেন এই বাড়ির ঠাকুর দেখতে। বাড়ির পুজো হলেও পুজোর নিখুঁত আয়োজনে প্রতিবেশীদের প্রতি কৃতজ্ঞতার শেষ নেই বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের সদস্যদের। তাঁরা জানান, প্রস্তুতি থেকে শেষ পর্যন্ত সব ধরনের সাহায্য করেন পড়শিরা। স্থানীয় পুকুরে বিসর্জন দেওয়া হয় প্রতিমা। সেখানেও পাড়ার কচিকাঁচা থেকে আরম্ভ করে বিভিন্ন বয়সের মানুষ সামিল হন। তাই কালীপুজো এলেই উৎসবের আঙ্গিনার চেহারা নেয় অজুর্নতলার বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ি। |