টেলিভিশনের বিজ্ঞাপনে বলা আছে, ‘রোজ খাও আন্ডে’। সেটাই হয়তো উদ্বুদ্ধ করেছে রেল-কর্তাদের। রোজ তো বটেই, এমনকী ২৪ ঘণ্টায় একেবারে পাঁচ-পাঁচটি ডিম পরিবেশন করছেন তাঁরা। হাওড়া-যশোবন্তপুর রুটের দুরন্ত এক্সপ্রেসের স্লিপার ক্লাসের যাত্রীদের অভিজ্ঞতা তেমনই বলছে।
বেলা এগারোটায় হাওড়া থেকে ছেড়ে পরের দিন বিকেল চারটেয় যশোবন্তপুর পৌঁছয় দুরন্ত। উল্টো দিক থেকে ট্রেন ছাড়ে বেলা সওয়া এগারোটায়। হাওড়া পৌঁছয় বিকেল চারটেয়। দুরন্ত ট্রেনগুলির মধ্যে একমাত্র এই ট্রেনটিতেই এসি কোচ ছাড়াও রয়েছে স্লিপার কোচ। তার ভাড়াও কম, খাবারও এসি ক্লাসের চেয়ে অন্য রকম।
ট্রেনে চাপার ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যেই ‘লাঞ্চ’। আমিষ মেনুতে ভাত, রুটি, ডাল, আচার, একটি ডিমের ঝোল ও দই। বিকেলে চা-বিস্কুট। রাতে অবিকল দুপুরের মতোই খাদ্যতালিকা। যাত্রীদের দাবি, দুপুরের ডিমের ঝোলটিই আবার পরিবেশন করা হয় রাতে। রাত পোয়ালে ‘ব্রেকফাস্টে’ দু’পিস কাঁচা রুটির সঙ্গে এক টুকরো মাখন এবং দু’টি সিদ্ধ ডিম। সঙ্গে চা। দুপুরে আবারও আগের দিনের মেনু, মানে আবার ডিমের ঝোল। |
তার মানে ২৪ ঘণ্টায় পাঁচ-পাঁচটি ডিম? ডিম যতই সুষম খাদ্য হোক না কেন, দিনে পাঁচটা ডিম খাওয়া কি ভাল? ডায়েটিশিয়ানদের বক্তব্য, এক জন মানুষের সারা দিনে ১৮০০ থেকে ২০০০ ক্যালোরি খাবার দরকার। দুরন্তর এই মেনুতে ২৬০০ ক্যালোরি হয়ে যাচ্ছে। সুতরাং ডিম তখন আর সুষম খাদ্যের মধ্যে থাকছে না। যাত্রীদের মধ্যে অনেকের পক্ষেই পাঁচটি ডিমের কোলেস্টেরল ও ফ্যাট রীতিমতো ক্ষতিকর হতে পারে। হতে পারে অ্যালার্জিও।
কেন কেবলই ডিম? এই ট্রেনে কেটারিং-এর দায়িত্ব রেলেরই সংস্থা আইআরসিটিসি-র। তাঁদের ব্যাখ্যা, স্লিপার ক্লাসে এক-এক বারের লাঞ্চ-ডিনারের জন্য রেল বোর্ডের বরাদ্দ ৩০ টাকা। ওই টাকায় আমিষ খাওয়াতে গেলে মাটন-চিকেন দেওয়া অসম্ভব। তাই ডিম। আর, ব্রেকফাস্টে তো ডিম থাকাই স্বাভাবিক। রেলে যাত্রিভাড়া বাড়েনি আট বছর। দুরন্ত ট্রেনগুলি শুরু হয়েছে গত দু’তিন বছরের মধ্যে। ভাড়া ঠিক করার সময় টিকিটের দামের মধ্যে খাবারের জন্য বরাদ্দের অঙ্ক স্থির করে দিয়েছে রেল বোর্ড। তারাই মনে করেছে, ৩০ টাকায় আমিষ লাঞ্চ-ডিনার খাওয়ানো যায়। যাত্রীরা জানাচ্ছেন, লাঞ্চের পরে বলে রাখলে রাতে চিকেন পাওয়া যায় অবশ্য। এক টুকরো চিকেনের জন্য অতিরিক্ত ৬০ টাকা দিতে হয়। রসিদ চাইলে মেলে না।
বাকি সকলকে ২৪ ঘণ্টায় পাঁচটা ডিম খাওয়ানো কি উচিত হচ্ছে? আইআরসিটিসি-র এক কর্তার মন্তব্য, “কই কোনও অভিযোগ তো পাইনি!”
|