দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্রের ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার হওয়ার ঘটনায় উত্তপ্ত অরুণাচলের আলো। মৃত ছাত্রের পরিবার ও তার বন্ধুদের অভিযোগ, স্কুল কর্তৃপক্ষের হাতে সহপাঠীদের অপমান ও শাস্তির দায় কাঁধে নিয়েই আত্মঘাতী হয়েছে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র টামের ইয়োরপেন। এ ঘটনায় পুলিশ গ্রেফতার করেছে স্কুলের প্রধান শিক্ষককে। বাকি শিক্ষকদের গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে ছাত্ররা।
ঘটনার সূত্রপাত ১২ সেপ্টেম্বর। প্রত্যক্ষদর্শী ছাত্ররা পুলিশকে জানিয়েছে, আলোর সরকারি উচ্চ-মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রার্থনার সময় লাইনের বাইরে দাঁড়িয়েছিল দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র টামের। স্কুলের ক্যাপ্টেন, একাদশ শ্রেণির টোকেন বাগরা ওই সময় টামেরকে এ নিয়ে বকাবকি করে। নিচু ক্লাসের ছাত্রের মুখে কড়া কথা শুনে প্রতিবাদ জানায় টামের। ঘটনাটি নিয়ে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রদের কথা কাটাকাটি হয়। পরে, টামেরের সহপাঠীরা তার পক্ষ নিয়ে প্রধান শিক্ষকের ঘর ঘেরাও করে।
এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রধান শিক্ষক জোমডো লোনা ঘটনায় জড়িত ছাত্রদের শাস্তি দেওয়ার জন্য পাঁচ সদস্যের কমিটি গড়েন। কমিটি দ্বাদশ শ্রেণির দুই ছাত্র মিমার দোজি ও জনি রাগয়োরকে পুরো বছরের জন্য বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নেয়। এ ছাড়াও, টামেরের তিন বন্ধুকে এক মাস ও দুই বন্ধুকে পনেরো দিনের জন্য বহিষ্কার করা হয়।
টামেরের বাবা জানান, ঘটনার পর থেকেই মনমরা হয়ে ছিল টামের। বহিষ্কৃত বন্ধুদের কাছে, তাদের অভিভাবকদের কাছে মুখ দেখাবার অবস্থায় ছিল না সে। স্কুলেও যাচ্ছিল না। অবশেষে গত কাল আপার কলোনির বাড়িতে টামেরের নিজের ঘরে পাওয়া যায় তার ঝুলন্ত নিষ্প্রাণ দেহ।
ঘটনার কথা জানাজানি হতেই ছাত্ররা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। অভিযোগ, প্রধান শিক্ষক জোমডোর বাড়িতে চড়াও হয়ে ইটপাটকেল ছোড়ে ছাত্ররা। ভাঙচুর করা হয় জোমডোর গাড়ি। স্থানীয় গালো ছাত্র সংগঠনের অভিযোগ, স্কুলে প্রধান শিক্ষকের বক্তব্য জানতে গেলে তিনি ছাত্র সংগঠনেরর সভাপতিকে অপমান করেন। হুমকি দেন, পুলিশে এফআইআর করলে ফল ভাল হবে না। টামেরের পরিবার ঘটনাটি নিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছে। আপসুর নেতৃত্বে আটটি ছাত্র সংগঠন একজোট হয়ে প্রতিবাদ মঞ্চ গড়ে আন্দোলন চালাচ্ছে। মঞ্চের দাবি, যে কমিটির নির্দেশের এতগুলি ছাত্রের ভবিষ্যৎ নষ্ট হল, একজনের প্রাণ গেল, সেই কমিটির সব সদস্যকে জেলে পাঠাতে হবে। পুলিশ, কাল বিকেলে, প্রধান শিক্ষককে গ্রেফতার করে। তাঁর বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৬ ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে।
|