বড় মেয়ের বয়স ৭৯ বছর। দুই মেয়ের পর ছেলে। ছেলের বয়স ৬৭। ঘর ভর্তি নাতি-নাতনি এবং তাদেরও ছেলেপুলে। তাতে কী! বেশ কয়েক বছর আগে শতবর্ষ পেরিয়ে আসা বিপত্নীক করিমগঞ্জ জেলার সাতঘরি গ্রামের আব্দুল নুর আবার করে ফেললেন বিয়ে। পাত্রী বছর ষাটেকের সমই বিবি। বিয়ে করে খুব খুশি মিয়া-বিবি দু’জনেই। তবে এঁদের থেকেও অনেক বেশি খুশি এই বিয়েতে যিনি ঘটকালি করেছেন ৪৮ বছর বয়সী সেই ঘটক আব্দুল হামিদ।
পাত্রের বয়স আসলে কত? নুর নিজে ও তাঁর বড় ছেলে আজিরউদ্দিন দাবি করেন, ১২০ বা ১২১। তবে ২০১১ সালের সংশোধিত ভোটার তালিকায় বলা হয়েছে, পাথারকান্দি বিধানসভা কেন্দ্রের আছিমগঞ্জ সাতঘরি গ্রামের ৭৭ নং গৃহের বাসিন্দা আব্দুল নুরের বয়স ১০৫ বছর। করিমগঞ্জ জেলার নির্বাচন অফিসার অরূপ পাঠকের দাবি, ভোটার তালিকার বয়সটাই যথার্থ। এ বারই তা সংশোধিত হয়েছে। আর পাত্রীর বয়স? ত্রিপুরার উত্তর ফুলবানি গ্রামের সমই বিবি বলেন, “একদম ঠিকঠাক বলা মুশকিল। তবে ৬০ পেরিয়েছে নিশ্চিত।”
নুরকে দেখে অবশ্য সত্তরের বেশি মনে হয় না। তিনি বলেন, “মা-বাবার একমাত্র সন্তান আমি। কিশোর বয়সে দু’জনকেই হারিয়ে অনাথ হয়ে পড়ি। প্রথম বিয়ে চল্লিশে। আমার বড় মেয়ে এখন ৭৯ বছরের।’’ ছেলে হাজি আজিরউদ্দিনকে দেখিয়ে বলেন, ‘‘দুই মেয়ের পর এই ছেলে। করিমগঞ্জ সিনিয়র মাদ্রাসার শিক্ষক ছিল। সাত বছর আগে অবসর নিয়েছে।’’
|
বিয়ের পর নবদম্পতি। আব্দুল মুনিম তপাদারের তোলা ছবি। |
তা এই বয়সে বিয়ে কেন? ছেলে আজিরউদ্দিনই এগিয়ে এসে বলেন,‘‘আমরাই উদ্যোগী হয়ে বাবার বিয়েটা দিলাম। মা মারা গিয়েছেন ছ’ বছর আগে। আমরা চার বোন, দুই ভাই। সবাই বিবাহিত। আমাদের ছেলেমেয়েদেরও এখন বিয়ে-থা হচ্ছে। সবাই ব্যস্ত নিজেদের চাকরি-বাকরি, কাজকর্ম নিয়ে। বাবা একেবারেই নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েছেন। তাই এই বিয়ে।’’
আর সমই বিবি? তাঁরও স্বামী মারা গিয়েছেন বহু দিন। সন্তান হয়নি বলে স্বামীর মৃত্যুর পর সতীনের সঙ্গে না-থেকে চলে আসেন ভাইয়ের বাড়ি। বিয়ের প্রস্তাবে তাই আপত্তি করেননি।
চলতি সপ্তাহের গোড়ায় এই বিয়ে হয়েছে। তার পর থেকেই পাথারকান্দি-সহ গোটা বরাক জুড়ে লোকের মুখে শুধু এই অভিনব বিয়ের কথা। কথা হচ্ছে ঘটক আব্দুল হামিদকে নিয়েও। নুর আবার সম্পর্কে এই ঘটকের দাদাশ্বশুর। উত্তর ত্রিপুরা জেলার রাজনগর বাজার এলাকার হামিদ এ পর্যন্ত এমন ১৪টি বিয়েতে ঘটকালি করেছেন। তাঁর কথায়, “২৮ জন পাত্রপাত্রীর কারও বয়স ষাটের নীচে নয়। সবাই স্বামী বা স্ত্রী হারিয়ে নিঃসঙ্গ দিন কাটাচ্ছিলেন। এই মানুষগুলির জন্য সঙ্গী জোগাড় কঠিন হলেও এ কাজ করে অন্য রকম আনন্দ পাই।” জোয়ান বয়সীদের ঘটকালিতে তেমন আগ্রহ নেই হামিদের।
শতবর্ষ পেরিয়েও বিয়ে করে বেজায় খুশি নুর। বলেই ফেললেন, “বিয়ের কথা পাকা হতেই অসুস্থতা অনেকটা কমে গিয়েছে।” বিয়েতে খুশি সমই বিবিও।
২০ হাজার মোহরানায় বউ হয়ে এসেছেন আব্দুল নুরের নাতি-নাতনিতে ভরা সংসারে। তাঁর কথায়, ‘এমন লোককে সেবার সুযোগ পেয়েছি তা কম কী! আমার বাবা-মা নেই, ভাইয়েরা ব্যস্ত নিজেদের ঘরসংসার নিয়ে। এখন একটা নিজস্ব ঠিকানা তো হল।’’ |