চেন্নাইয়ে চিকিৎসা করানোর পরে পুদুচেরি বেড়াতে যাওয়ার সময়ে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল চার জনের। মঙ্গলবার দুপুরে চেন্নাই থেকে প্রায় ৫৬ কিলোমিটার দূরে এই দুর্ঘটনা ঘটে। মৃত্যু হয় বিজয়া চক্রবর্তী (৫২), তাঁর ছেলে ত্রিদিব চক্রবর্তী (২১), বিজয়াদেবীর মামা শম্ভুনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় (৭৮) এবং মামিমা শ্যামলী বন্দ্যোপাধ্যায়ের (৬৯)।
পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, সিউড়ির কেঁদুয়া গ্রামের বাসিন্দা দিলীপ চক্রবর্তী স্ত্রী বিজয়া, ছেলে ত্রিদিবকে নিয়ে ১৮ অক্টোবর চেন্নাই গিয়েছিলেন। সঙ্গে গিয়েছিলেন বিজয়াদেবীর মামা, দুর্গাপুরের বিধাননগরের শম্ভুনাথবাবু ও মামিমা শ্যামলীদেবী। চেন্নাইয়ের একটি বেসরকারি হাসপাতালে শ্যামলীদেবীর হাতের পেশির যন্ত্রণা ও ত্রিদিবের চোখের সমস্যার চিকিৎসা করাতেই গিয়েছিলেন তাঁরা। ফেরার জন্য বুধবার ট্রেনে চড়ার কথা ছিল তাঁদের। সোমবার সন্ধ্যায় চিকিৎসার কাজকর্ম শেষ হয়ে যায়। তাই মঙ্গলবার সকালে তাঁরা একটি গাড়ি ভাড়া করে পুদুচেরি বেড়াতে যাচ্ছিলেন। তাঁদের পাঁচ জনের সঙ্গে যোগ দেন নৈহাটির বিজয়নগরের বাসিন্দা রাজকুমার সাহা, তাঁর স্ত্রী ডলি সাহা ও তাঁদের পাঁচ বছরের মেয়ে ডালিয়া। রাজকুমারবাবুও চিকিৎসার জন্য গত ২০ অক্টোবর চেন্নাই গিয়েছিলেন। পুদুচেরি যাওয়ার সময়ে মাঝরাস্তায় একটি বাস মুখোমুখি তাঁদের গাড়িতে ধাক্কা মারলে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় চার জনের। গুরুতর জখম অবস্থায় দিলীপবাবু, রাজকুমারবাবু ও ডলিদেবীকে চেন্নাইয়ের একটি হাসপাতালে |ভর্তি করানো হয়েছে। তবে ডালিয়া সুস্থ রয়েছে। |
চেন্নাইয়ে চিকিৎসা করাতে গিয়ে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে দুর্গাপুরের
বিধাননগরের দম্পতির। শোকস্তব্ধ পরিজনেরা। নিজস্ব চিত্র |
শ্যামলীদেবীর ভাই স্বপন মুখোপাধ্যায় জানান, দুর্ঘটনার সময়ে শম্ভুনাথবাবুর মোবাইল ফোনটি রাস্তায় পড়ে গিয়েছিল। স্থানীয় বাসিন্দারা সেটি থেকে ফোন করে খবর দেন শম্ভুনাথবাবুর আত্মীয়, দুর্গাপুরেরই বাসিন্দা পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়কে। পার্থবাবু বাড়িতে খবর দেন। তার পরেই শম্ভুনাথবাবুর ছেলে শুভেন্দু তিন জন আত্মীয়কে নিয়ে চেন্নাই
রওনা হয়ে যান। দিলীপবাবুর ভাই সৌমেন চক্রবর্তী বলেন, “দুপুর দেড়টা নাগাদ দাদার সঙ্গে ফোনে শেষ বার কথা হয়। এর পরে রাত ৮টা নাগাদ সিউড়ি থানা থেকে দুর্ঘটনার কথা জানানো হয়। তবে বিশদে কিছু জানানো হয়নি।” তিনি জানান, বুধবার সকালে আত্মীয়েরা চেন্নাই পৌঁছনোর পরে চার জনের মৃত্যুর খবর পান তাঁরা।
বুধবার বিকেলে দুর্গাপুরের বিধাননগরে শম্ভুনাথবাবুর বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, কান্নায় ভেঙে পড়েছেন পরিজনেরা। দাদু-ঠাকুমার সঙ্গে কথা বলার জন্য মোবাইল ফোন নিয়ে বায়না করছে শুভেন্দুবাবুর আড়াই বছরের মেয়ে অঙ্কিতা। খবর পেয়ে মেজিয়া থেকে চলে এসেছেন শম্ভুনাথবাবুর মেয়ে রুবি চট্টোপাধ্যায়। শ্যামলীদেবীর ভাই স্বপনবাবু বলেন, “দিদির চিকিৎসা হয়ে যাওয়ার পরে জামাইবাবু খুব খুশি ছিলেন। তাই পুদুচেরি বেড়াতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু সেটাই কাল হল।” |