হাতে একটি হ্যান্ডিক্যাম। বাবার প্রতিটি মুহূর্ত বন্দি হচ্ছে ক্যামেরায়। সে জনসভাই হোক, বা রথের ছাদ থেকে পথচলতি মানুষদের উদ্দেশে বক্তৃতা। ফাঁকতালে বাবার পাশে দাঁড়িয়ে কখনও ভিড়ের দিকে হাতও নাড়াচ্ছেন। সমর্থনও কুড়োচ্ছেন জনতার।
রথযাত্রার সঙ্গে সঙ্গেই নিঃশব্দে উন্মেষ হচ্ছে এক প্রতিভার। প্রতিভা আডবাণী। লালকৃষ্ণ আডবাণীর কন্যা।
আডবাণীর সঙ্গে সঙ্গে প্রতিভাও রথে সফর করছেন সারা ক্ষণ। এর আগের সফরগুলিতে থাকেননি, এমন নয়। কিন্তু গোটা সফর সঙ্গে কাটানো এই প্রথম। কিন্তু যে ভাবে আডবাণীর রথে সওয়ার হয়ে তিনিও প্রচারের আলোয় থাকছেন, বিজেপি শিবিরে গুঞ্জন উঠছে, “এ বার কি রাজনীতিতে অভিষেক হচ্ছে প্রতিভার? লালকৃষ্ণ আডবাণীর রথেই কি তার ক্ষেত্র প্রস্তুত হচ্ছে?”
প্রতিভা অবশ্য বলছেন, “না।” তাঁর কথায়, “আমি বাবাকে দেখাশোনা করছি মাত্র। দিল্লিতে মা একা রয়েছে। তবুও মনে হল, বাবার সঙ্গে থাকা উচিত। তার ওপর দুর্নীতি ও কালো টাকার বিষয়টি নিয়ে আমিও খুব সিরিয়াস। এর সঙ্গে রাজনীতিতে আসার কোনও সম্পর্ক নেই। আমি আমার নিজের কাজ নিয়ে যথেষ্ট সন্তুষ্ট।” |
আডবাণীর সফরসঙ্গী এক নেতার মতে, “প্রতিভা ভুল কিছু বলছেন না। রথে চড়ে সারা ক্ষণ তিনি বাবার সেবা করে যাচ্ছেন। কখন কী খেতে হবে, কোন ওষুধ কখন নিতে হবে, এ সব তো প্রতিভাই দেখছেন। পথে ক্লান্ত হলে একটু সিনেমা দেখার ব্যবস্থাও রয়েছে রথের মধ্যে। আডবাণীর পছন্দের সিনেমাগুলিও বেছে সঙ্গে এনেছেন প্রতিভা।” খোদ আডবাণীও এ বারের যাত্রায় প্রতিভাকে পাশে পেয়ে একটু স্বস্তিতে। প্রতিটি সভায় তিনি মেয়ের প্রশংসা করছেন। রথযাত্রার থিম-সং তৈরির কাজেও প্রতিভা কতটা সাহায্য করেছে, তা-ও বলছেন বড়াই করে। আডবাণীর রথ যখন মধ্যপ্রদেশের সীমান্ত পেরিয়ে মহারাষ্ট্রে প্রবেশ করছিল, তার ঠিক আগে একটি সভা হয়। সেখানে মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহাণ প্রতিভার তারিফ করে বলেন, “শেষ বয়সে ছেলে যদি বাপ-মাকে না-ও দেখে, মেয়েরা কখনওই সঙ্গ ছাড়ে না।” শিবরাজ যখন এই মন্তব্য করছিলেন, হঠাৎই চোখ ছলছলিয়ে ওঠে আডবাণীর। যাত্রার গোড়ার দিকে বারাণসীতে উমা ভারতী যখন তাঁর প্রশস্তিতে পঞ্চমুখ হয়েছিলেন, তখনও এক বার তাঁর চোখে জল এসেছিল। তার পরে এ বার। কিন্তু মেয়েকে নিয়ে
আডবাণীর প্রায় চল্লিশ দিনের রথযাত্রা দল ও সঙ্ঘের অনেকের কপালে ভাঁজ ফেলেছে।
আডবাণীর সঙ্গে সঙ্গে প্রতিভার ‘উন্মেষ’ নিয়েও যে ভাবে আলোচনা শুরু হয়েছে, তাতেও খুশি নন অনেকে। দলের এক শীর্ষ নেতা তো বলেই ফেললেন, “মনে হচ্ছে, বিজেপির নয়, এটা আডবাণীর পরিবারের কর্মসূচি। ‘বাপ-বেটির’ যাত্রা।” এক নেতার কথায়, “আডবাণীর রথ যে যে রাজ্য দিয়ে যাচ্ছে, সেখানকার নেতারা খুব স্বাভাবিক ভাবেই চাইবেন গুরুত্ব পেতে। কিন্তু আডবাণীর সঙ্গে সঙ্গে তাঁর মেয়েও যে ভাবে পাশে দাঁড়িয়ে জনতার অভিবাদন কুড়োচ্ছেন, তাতে ঢাকা পড়ে গিয়েছেন এলাকার নেতারা। সভামঞ্চেও উপস্থিত থাকছেন প্রতিভা, সেখানে তাঁর নামও ঘোষণা করা হচ্ছে। এ তো পুরোপুরি তাঁর রাজনীতিতে অভিষেকেরই ক্ষেত্র প্রস্তুতির লক্ষণ। আডবাণীর পরে প্রতিভা এ বারে গুজরাত থেকে নির্বাচনে লড়ে ফেললেই হয়!”
কিন্তু আডবাণী-ঘনিষ্ঠ শিবির অন্য কথা বলছেন। তাঁদের মতে, রাহুল গাঁধীর পরিবারতন্ত্র নিয়ে আডবাণী নিজেই সরব। ফলে তিনি কখনওই এ ভাবে মেয়েকে তুলে ধরার কৌশল নেবেন না। আডবাণীর রথযাত্রা বিফল করার জন্য দলেরই একটি অংশ গোড়া থেকে সক্রিয়। প্রতিভা রথে থাকাতে
সেই চেষ্টা কিছুটা হলেও মার খাচ্ছে। কারণ সক্রিয় রাজনীতিতে না থাকলেও রাজনীতির অঙ্গনে অনেক দিন ধরেই সক্রিয় প্রতিভা। জিন্না পর্বে সেই সময় সুষমা স্বরাজ, অরুণ জেটলির মতো আডবাণীর অনুগামীরা যখন তাঁর বিরোধিতা করেছিলেন, প্রতিভা বাবার সমর্থনে সরব হন। এ বারেও বাবাকে নিরন্তর আগলে রাখছেন তিনি।
সাংবাদিকরা জানতে চেয়েছিলেন, রোজ এতটা যাত্রার ধকল কী করে সামলাচ্ছেন? প্রতিভার জবাব, “যত ক্ষণ বাবার সঙ্গে আছি, কোনও ধকলই গায়ে লাগে না।” |