গত মাসেই সল্টলেক সেক্টর ফাইভে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের জন্য মোট ৩৮ লক্ষ বর্গফুট বহুতল অফিসবাড়ি নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছিল রাজ্য সরকার। কর্মস্থলের চাহিদা আরও বাড়বে বুঝে ফের বেশ কয়েকটি প্রকল্পের নকশার ছাড়পত্র দিতে চলেছেন নবদিগন্ত কর্তৃপক্ষ। যেগুলি গড়ে উঠলে সেক্টর ফাইভে বাড়তি ১০ থেকে ১২ লক্ষ বর্গফুট নতুন কাজের জায়গা তৈরি হবে।
নবদিগন্তের চেয়ারম্যান আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই প্রস্তাবিত ওই নির্মাণ প্রকল্পগুলির অনুমোদন দিয়ে দেওয়া হবে। ‘আইটি-পার্ক’ বা বহুতল অফিসবাড়ির নকশার অনুমোদন এখন ইঞ্জিনিয়ার এবং সব দফতরের আধিকারিকদের নিয়ে এক জায়গায় বসেই করে দেওয়া হচ্ছে। ফলে সময় লাগছে না।
রাজ্যের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পে কাজের বহর যত বাড়ছে, কর্মসংস্থান হওয়ার পাশাপাশি জায়গার চাহিদাও বাড়ছে। অনেক সংস্থা আবার জায়গার অভাবে তাদের সম্প্রসারণ পরিকল্পনাও দ্রুত শেষ করতে পারছে না। বড় সংস্থাগুলির অনেকের নিজেদের বহুতল অফিস থাকলেও, কাজের চাপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেক্টর ফাইভের মধ্যেই বিভিন্ন বাড়িতে জায়গা নিতে হয়েছে তাদের। কেউ আবার পছন্দমতো জায়গার খোঁজে রয়েছে। গত কয়েক মাসে বেশ কিছু সংস্থা জমি চেয়ে রাজ্যের তথ্যপ্রযুক্তি দফতরের দ্বারস্থ হয়েছে।
সেক্টর ফাইভের তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলির ফোরামের অন্যতম কর্তা কল্যাণ কর জানান, ১০ লক্ষ বর্গফুট নতুন কাজের জায়গা তৈরি হলে কমপক্ষে ১০ হাজার ছেলে-মেয়ের কর্মসংস্থান হবে। কারণ তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের হিসেবে এক জন কর্মীর জন্য সব মিলিয়ে ১০০ বর্গফুট জায়গা দরকার হয়।
শুধু তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পই নয়, সেক্টর ফাইভ শিল্পতালুকে আসছে বিভিন্ন ম্যানেজমেন্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হোটেল-রেস্তোরাঁ-সহ খুচরো পণ্য বিপণন সংস্থাগুলিও। কলকাতার এক বড় নির্মাণ সংস্থা সেক্টর ফাইভে ‘সৃজন টেক পার্ক’ নামে একটি বহুতল তৈরি করেছে। মূলত তথ্যপ্রযুক্তি ও টেলিকম সংস্থাগুলি ওই বাড়িতে জায়গা ভাড়া নিলেও একটি বিজনেস ম্যানেজমেন্ট স্কুলও সেখানে ৩০ হাজার বর্গফুট জায়গা নিয়েছে। আর একটি নির্মাণ সংস্থা তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের জন্য ‘ইনফিনিটি বেঞ্চমার্ক’ নামে যে বহুতল গড়েছে, সেখানেও একটি ম্যানেজমেন্ট স্কুল ২৫ হাজার বর্গফুট জায়গা ভাড়া নিয়েছে। সেক্টর ফাইভে শিল্প এবং অন্যান্য সামাজিক পরিকাঠামো একসঙ্গে গড়ে ওঠার কারণে জায়গার চাহিদাও দ্রুত বাড়ছে। এই অবস্থায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেমন যত দ্রুত সম্ভব এই শিল্পতালুকে নতুন কাজের জায়গা গড়ে তোলার নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি, রাজ্যের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের অন্যতম পরামর্শদাতা স্যাম পিত্রোদাও প্রশাসনিক কাজে সমন্বয় ও সরলীকরণ করে দ্রুত পরিকাঠামো উন্নয়নের কথা বলেছেন। যাতে সামগ্রিক ভাবে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের বিকাশ সম্ভব হয়।
প্রশাসন সূত্রে খবর, বহুতল অফিসবাড়ি প্রকল্পের জন্য আগের সরকারের আমলেই বেশ কিছু সংস্থা নবদিগন্ত কর্তৃপক্ষের অনুমোদন চেয়ে নকশা জমা দিয়েছিল। কিন্তু প্রশাসনিক নানা জটিলতা এবং কর্তৃপক্ষের ‘গয়ংগচ্ছতা’য় প্রকল্পগুলি এতদিন ফাইলবন্দি হয়েই পড়েছিল। নতুন সরকার আসার পরে প্রস্তাবিত প্রকল্পগুলির নকশা-সহ অন্যান্য কারিগরি দিকগুলি খতিয়ে দেখে দ্রুত অনুমোদন দেওয়া শুরু হয়েছে। |