সিউড়ি ২ ব্লকের ইন্দ্রগাছা (স্থানীয় ভাবে ইনগাছা নামেও পরিচিত) গ্রামের প্রাচীন কালীপুজোর কথা এ রাজ্যের অনেকের পাশাপাশি দিল্লি ও মুম্বইয়ের কিছু প্রবাসী বাঙালিও জানেন। প্রায় ২৩ ফুট উচ্চতার ওই কালীকে ‘শ্যামা মা’ বলা না। ওই কালী ‘বামা কালী’ হিসাবে পরিচিত।
কালীপুজোর দুপুরে ওই গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, প্রতিমার গায়ে রংয়ের কাজ চলছে। এই পুজোর সম্পাদক যোগেশ্বর মণ্ডল জানালেন, রাত ১২টা পর্যন্ত রং করা ও ডাকের সাজ পরানোর কাজ চলবে। ঘড়ির কাঁটা রাত ১২টা ছুঁলেই কালীর চক্ষুদান হবে। এর পরে রাত ২টো নাগাদ প্রতিমা নিয়ে যাওয়া হবে মূল পাকা ও স্থায়ী মন্দিরে। তার পরে শুরু হবে পুজো। পরের দিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবার পুজোর প্রাথমিক পর্ব শেষ হওয়ার পরে সকাল ৯টা থেকে শুরু হয় বলিদান। যা চলবে দুপুর ২টো পর্যন্ত। এ রাজ্যের বহু জায়গায় পশুবলি প্রথা বন্ধ হয়ে গেলেও ইন্দ্রগাছায় আজও তা সেই রেওয়াজ চালু আছে। প্রথা অনুযায়ী এখানে প্রথমে বলি হয় ছাগল ও ভেড়া। সব শেষে একটি মহিষ শাবক বলি দেওয়া হয়। বর্তমানে মোষশাবক বলির পরে মন্দির প্রাঙ্গণে পুঁতে দেওয়া হয়।
|
যোগেশ্বরবাবু জানিয়েছেন, দূর-দূরান্তের ভক্তেরা মানত হিসাবে ছাগ ও ভেড়া বলি দিতে এখানে আসেন। গত বছর ১৮৬টি ছাগ ও ভেড়া বলি হয়েছে। বলি প্রথা কেন বন্ধ করা যায়নি, সে প্রসঙ্গে গ্রামবাসী দেবশ্বর মণ্ডল বললেন, “দীর্ঘদিনের ভক্তদের বিশ্বাস, মায়ের কাছে কোনও কিছু প্রার্থনা করে মানত করলে ফল লাভ হয়। তাই বছর বছর বলির সংখ্যা বাড়ছে। আবার প্রবাসী কিছু ভক্ত ছাগ এনেও বলি না দিয়ে প্রতিমার সামনে ছেড়ে দেন, সম্ভবত বলি দেখতে পারেন না বলে।”
ঠিক কবে থেকে বলি প্রথা চালু হয়েছে, তা অবশ্য গ্রামবাসীরা বলতে পারেননি। স্থানীয় বাসিন্দা অমরহরি মণ্ডল ইন্দ্রগাছার কালীপুজো নিয়ে একটি গ্রন্থ প্রকাশ করেছেন। তাতে উল্লেখ রয়েছে, সাধক মণিরাম গোস্বামী ৩০ বছর বয়সে এই গ্রামে এসে তপস্যা শুরু করেন। ৫২ বছর বয়সে তন্ত্রসাধনায় সিদ্ধিলাভ করে ১৬৪২ খ্রিস্টাব্দে ওই বামা কালীর পুজো শুরু করেছিলেন। ৭১ বছর বয়সে ওই সাধকের প্রয়াণের পরে মূল মন্দিরের বেদির নীচেই তাঁকে সমাধি দেওয়া হয়। মণিরামের পূজিত কালীর সামনে বলি দেওয়ারও কোনও উল্লেখ নেই। অমরহরিবাবুর অভিমত, “আমার ব্যক্তিগত ধারণা, সাধকের মৃত্যুর পরে কেউ বলি প্রথা চালু করেছিলেন। সেই থেকে বলি চলে আসছে।”
পশুবলি নিয়ে বিতর্ক যতই থাকুক না কেন, প্রাচীন এই কালীপুজোকে ঘিরে এলাকার মানুষ প্রতি বছর মেতে ওঠেন। বর্ধমান, মুর্শিদাবাদ থেকেও প্রচুর মানুষ এখানে আসেন। মেলা বসে। প্রতিমা বিসর্জন হয় ভ্রাতৃদ্বিতীয়ার পরে। |