যে দিকে তাকানো যায়, শুধুই পুণ্যার্থীদের ভিড়। কচিকাঁচা থেকে বয়স্ক, কে নেই সেই ভিড়ে! সকাল থেকে পুজো দেওয়ার জন্য ঠায় দাঁড়িয়ে লোকজন। বেলা গড়াতেই বাড়ছে ভক্তদের ভিড়। কিন্তু কারও মুখে বিরক্তির লেশমাত্র নেই।
তারাপীঠের এমনই মহিমা। ফি-বছর কালীপুজোয় বীরভূমের এই পুণ্যতীর্থে কালীপুজোর সময় যে ছবিটা চোখে পড়ে, এ বারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বুধবার সকাল থেকেই মন্দির চত্বর গমগম করে উঠেছে আগত পুণ্যার্থীদের উৎসাহ-উন্মাদনায়। স্বয়ং মা তারার অবস্থান যেহেতু তারাপীঠে, তাই মন্দির সংলগ্ন এলাকায় কেউই মূর্তি গড়ে দুর্গা বা কালীর আরাধনা করেন না। বারোয়ারি প্রচলনও নেই। একমাত্র নবান্ন উৎসবের সময় কার্তিকের মূর্তি গড়ে পুজো করা হয়। কালীপুজোয় মা তারা ‘তারা অঙ্গে কালী’রূপে পূজিত হন। হাজার হাজার ভক্ত ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সমাগমে তারাপীঠ মন্দির ভরে ওঠে। সকলে আলোর উৎসবে মেতে ওঠেন। মহাশ্মশান থেকে শুরু করে মন্দির লাগোয়া লজ বা হোটেলসবই সেজে ওঠে আলোকমালায়।
|
তারাপীঠ মন্দির কমিটির সভাপতি তারাময় মুখোপাধ্যায় বলেন, “প্রতিদিনের মতোই এ দিন ভোর ৪টে সময় মা তারার স্নানপর্ব সমাপ্ত হয়েছে। স্নানের পরে মা তারাকে রাজবেশ পরিয়ে রাজেশ্বরী রূপে সাজানো হয়।” তবে এ বার কালীপুজোর দিনভর অমাবস্যার তিথি থাকায় সকাল থেকেই মা তারার পুজো দেওয়ার জন্য ভিড় উপচে পড়েছিল মন্দির চত্বরে। মন্দির কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এ বারই প্রথম স্থানীয় খরুন গ্রামের শোলা শিল্পীদের তৈরি ডাকের সাজে সন্ধ্যারতির পরে মা তারাকে সাজানো হয়েছে। তারাপীঠের খুব কাছেই উদয়পুর গ্রামে কালীপুজো উপলক্ষে তারাপীঠ মন্দিরের সেবায়েতদের বার্ষিক ও মানসিক পুজো নিবেদন করা হয়। এর জন্য উদয়পুরে কালীপুজোর পরের দিন অধিকাংশ সেবায়েত ভিড় করেন। উদয়পুরের কালীপুজো ঘিরে গ্রামীণ মেলাও বসে। সংলগ্ন দেখুড়িয়া গ্রামের কালীপুজোও অতি প্রাচীন।
নলহাটিতে নলাটেশ্বরী মন্দির ও আকালিপুর মন্দিরে কালীপুজো উপলক্ষে বিশেষ পুজোর প্রচলন আছে। নলাটেশ্বরী মন্দির কমিটির উদ্যোগে এ বার কালীপুজোর সন্ধ্যায় মন্দির প্রাঙ্গণে আলো ও ধ্বনির মাধ্যমে জীবন্ত কালী ও রামকৃষ্ণ দেখানো হয়েছে দর্শনার্থীদের। অন্য দিকে, মুরারইয়ের জাজিগ্রামে কালীপুজো ঘিরে প্রবন উৎসাহ-উন্মাদনা থাকে প্রতি বছর। বস্তুত কালীপুজোই সেখানকার প্রধান উৎসব। বীরভূমের সীমান্তে ঝাড়খণ্ডের শিকারিপাড়া থানার মলুটি গ্রামের কালীপুজো ঘিরে রামপুরহাট-সহ জেলার মানুষের উন্মাদনা লক্ষ করা যায়। রামপুরহাট শহরে এ বছর মৃন্ময়ী ক্লাবের সর্বজনীন কালীপুজোর উদ্বোধন করেন খ্যাতনামা প্রাক্তন ফুটবলার তথা বর্তমানে মোহনবাগানের টিডি সুব্রত ভট্টাচার্য। এখানে আসার আগে সুব্রতও তারাপীঠে পুজো দিয়ে এসেছেন। তাঁর কথায়, “দেড় বছর পরে এলাম। এসে খুব ভাল লাগছে। অদ্ভুত আধ্যাত্মিক পরিবেশ।” |