এলাকার অন্যতম পুরানো গাছ উপড়ে কুমোরটুলির দুটি কারখানার চালা ভেঙে ৭ জন মৃৎশিল্পী জখম হয়েছেন। মঙ্গলবার ভোরে শিলিগুড়ির মহানন্দা সেতু লাগোয়া রেল পুলিশ সুপারের অফিসের অদূরে ঘটনাটি ঘটেছে। শতাধিক কালী প্রতিমা ভেঙে গিয়েছে। আহতদের কারও অবস্থা অবশ্য গুরুতর নয়। স্থানীয় চিকিৎসাকেন্দ্রে চিকিৎসার পরে সকলেই ছাড়া পেয়েছেন। এই খবর পেয়ে সকালেই ঘটনাস্থলে ছুটে যান শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান তথা তৃণমূল বিধায়ক রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ির ডেপুটি মেয়র রঞ্জন শীলশর্মা, মেয়র পারিষদ (পূর্ত) কৃষ্ণ পাল, স্থানীয় কাউন্সিলর কাজল চন্দ ও সাফাই বিভাগের মেয়র পারিষদ দুলাল দত্ত। যে হেতু টিনের চালের উপরে বিদ্যুতের তার ছিল, তাই কিছুক্ষণের জন্য বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। পুর কর্মীরা গাছের ডাল কেটে কারখানা দুটির উপর থেকে সরিয়ে দেন। এসজেডিএ-র চেয়ারম্যান ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পরে বলেন, “অনেক ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে কালীপুজোর একদিন আগে এমন ঘটনার পরে মৃৎশিল্পীদের প্রচুর আর্থিক ক্ষতি হল। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে এসজেডিএ, প্রশাসন এবং পুরসভার পক্ষ থেকে যৌথ ভাবে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করার চেষ্টা হবে।” শিলিগুড়ির ডেপুটি মেয়র বলেন, “স্থানীয় কাউন্সিলর এবং মৃৎশিল্পী সমিতির কর্তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে যাতে পুজো উদ্যোক্তাদের সমস্যার কথা বুঝিয়ে অন্য প্রতিমা দিয়ে পুজোর ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়। আর্থিক ক্ষতিপূরণের ব্যাপারে পুরসভার সকলের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” |
|
|
কুমোরটুলি পরিদর্শনে শিলিগুড়ির বিধায়ক রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য। ছবিদু’টি তুলেছেন বিশ্বরূপ বসাক। |
|
মহানন্দা সেতু লাগোয়া রেল পুলিশের দফতরের পিছনের ঢালু জমিতে গড়ে উঠেছে কুমোরটুলি। গাছ ভেঙে পড়ার সময়ে বৃষ্টি হচ্ছিল। এলাকার বাসিন্দাদের সন্দেহ, বৃষ্টিতে মাটি ধুয়ে গাছটি মূল থেকে উপড়ে গিয়ে কারখানা দুটির উপরে পড়ে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকেই কালী পুজোর বিভিন্ন মণ্ডপে প্রতিমা সরবরাহ করা হবে। সেই জন্য ঘটনার সময়েও রাত জেগে দুটি কারখানার কর্মী এবং মালিকেরা শেষ মুহুর্তের কাজ সারছিলেন। কয়েকজন ঘুমিয়ে ছিলেন। মৃৎশিল্পী নিরঞ্জন পাল বলেন, “রাত ৩টে নাগাদ দুই কর্মী কার্তিক রায় এবং বাসু পালকে ঘুমোতে পাঠিয়ে দিই। আমি মায়ের চোখ আঁকছিলাম। এমন সময়ে হঠাৎ একটা শব্দ পেয়ে চমকে উঠি। তার পরেই হুড়মুড় করে গাছটা আমার কারখানার উপরে পড়ে। আমার কোমরে চোট লেগেছে। দুই কর্মীও জখম।” নিরঞ্জনবাবুর ৭০টির বেশি প্রতিমা গুঁড়িয়ে গিয়েছে। অর্ধেকই আজ উদ্যোক্তাদের হাতে তুলে দেওয়ার কথা ছিল। কোমরের যন্ত্রণার চেয়ে তাঁর বড় উদ্বেগ হয়েছে পুজো উদ্যোক্তাদের কী ভাবে সামাল দেবেন। নিরঞ্জনবাবুর কারখানার পাশেই দিলীপ পালের ভারতী শিল্পালয়। সেখানে নষ্ট হয়েছে ৩৫টি প্রতিমা। তার মধ্যে ১৭টি প্রতিমা এদিনই সরবরাহ করার কথা। তিনি বলেন, “৩ কর্মী-সহ গাছের নিচেই চাপা পড়ে গিয়েছিলাম। টিন, বেড়া সরিয়ে কোনও রকমে বার হই। প্রতিমা কী করে দেব সেটাই বুঝতে পারছি না।” কুমোরটুলি মৃৎশিল্পী সমিতির সভাপতি সত্য পাল অবশ্য বলেন, “আমরা সকলে মিলে উদ্যোক্তাদের বোঝাব। আমাদেরই উদ্বৃত্ত প্রতিমা দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেব ঠিক করেছি। এ ছাড়া তো কোনও উপায় নেই।”
|