|
|
|
|
কেন্দ্র ও রাজ্যের নিয়মে ফারাক |
দত্তক শিশুর মায়েদের জন্য আলাদা ছুটির আর্জি |
সাবেরী প্রামাণিক • কলকাতা |
পিয়ালি গঙ্গোপাধ্যায় (নাম পরিবর্তিত) উত্তর ২৪ পরগনার একটি কলেজের শিক্ষিকা। গত বছর ডিসেম্বর মাসে চার মাসের একটি শিশুকে দত্তক নেন তিনি। শিশুটির দেখভালের জন্য ১৩৫ দিনের ছুটির আবেদন জানিয়েছিলেন পিয়ালিদেবী। তাঁর ছুটি মঞ্জুর হয়। পরে কলেজে যোগ দিয়ে তিনি দেখেন, তাঁরই অর্জিত ছুটি (আর্নড লিভ) এবং মেডিক্যাল লিভ থেকে ছুটি দেওয়া হয়েছে। কারণ, দত্তক শিশুর জন্য পৃথক ছুটি দেওয়ার সংস্থান রাজ্য সরকারের নিয়মে নেই।
এ বছরই সরকারি এবং সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুল-কলেজে মাতৃত্বকালীন ছুটি ১৩৫ দিনের বদলে ১৮০ দিন করা হয়েছে। কিন্তু কোথাওই দত্তক শিশুর জন্য আলাদা ভাবে ছুটি দেওয়ার সংস্থান নেই। অথচ এ নিয়ে ২০০৯ সালে জারি করা কেন্দ্রের নির্দেশিকায় বলা হয়েছে: এক বছর বা তার কম বয়সী শিশুকে দত্তক নিলে ১৮০ দিনের ছুটি (অ্যাডপটিভ লিভ) দিতে হবে মাকে। এমনকী দত্তক শিশুর বাবাকেও ১৫ দিনের ছুটি দেওয়ার সংস্থান রয়েছে ওই নির্দেশিকায়। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নিয়ম অনুযায়ী, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকারা কেন্দ্রের নির্দেশ মেনেই ‘অ্যাডপটিভ লিভ’ পাবেন। কিন্তু রাজ্য সরকারি নির্দেশিকায় দত্তক শিশুর জন্য মাকে আলাদা ভাবে ছুটি দেওয়ার কথা বলা নেই। লেখা আছে: দত্তক শিশুর ক্ষেত্রে মাকে স্বাভাবিক নিয়ম মেনে ‘প্রাপ্য’ ছুটি দেওয়া হবে। এক জন শিক্ষিকা সর্বোচ্চ এক বছরের ছুটি পেতে পারেন। মধ্যশিক্ষা পর্ষদের নির্দেশিকার বক্তব্যও একই রকম। রাজ্য সরকারের নির্দেশে ‘স্বাভাবিক নিয়ম মেনে প্রাপ্য ছুটি’ বলতে শিক্ষিকার ক্যাজুয়াল লিভ, মেডিক্যাল লিভ ইত্যাদি ছুটি বোঝানো হয়েছে। মধ্যশিক্ষা পর্ষদের এক প্রাক্তন কর্তা বলেন, “দত্তক শিশুর দেখভালের জন্য আট জন শিক্ষিকাকে পৃথক ছুটি দিয়েছিল পর্ষদ। কিন্তু রাজ্য সরকারি নিয়মের তোয়াক্কা না করেই দত্তক শিশুর জন্য আলাদা ছুটি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ তোলেন এক শিক্ষক। তখন সরকারি নিয়মের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে পর্ষদের নির্দেশিকাটি জারি করা হয়। সেটিতে ‘অ্যাডপটিভ লিভ’-এর সংস্থান নেই।” এখন নতুন করে দত্তক শিশুর মায়েদের জন্য আলাদা ছুটির আবেদন জানিয়ে উচ্চশিক্ষা দফতরের দ্বারস্থ হয়েছেন কয়েক জন শিক্ষিকা। রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করলে বলেন, “দত্তক শিশুর জন্য মায়েদের ছুটি অবশ্যই থাকা উচিত। এ ব্যাপারে আমি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলব।”
স্বাভাবিক মায়ের ক্ষেত্রে যত দিন ছুটি দরকার, তত দিন না হলেও দত্তক শিশুর ক্ষেত্রেও মায়ের ছুটি পাওয়া অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করেন মনস্তত্ত্ববিদেরা। মনোবিদ নীলাঞ্জনা সান্যালের মতে, “সন্তান জন্ম দেওয়ার ক্ষেত্রে মায়ের শরীরের সঙ্গে সঙ্গে মনেরও পরিবর্তন হয়। শিশুটিকে নিজের জীবনে গ্রহণ করার পাশাপাশি তার জন্য যাবতীয় পরিশ্রম ও তাকে সময় দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে পারেন মা। কিন্তু দত্তক শিশুর বেলায় মায়ের মনের এই গঠনগত পরিবর্তনটা হয় না। শিশুকে পুরোপুরি গ্রহণ করার জন্য তাঁর অবশ্যই ছুটি দরকার।”
শুধু শিক্ষা ক্ষেত্রেই নয়। দত্তক শিশুর জন্য আলাদা ছুটির নিয়ম সব দফতরেই থাকা উচিত বলে মনে করে রাজ্য সরকার। নারী ও সমাজকল্যাণ দফতরের মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র বলেন, “পৃথক ছুটির সংস্থান অবশ্যই থাকা উচিত। তবে এটা শুধু সমাজকল্যাণ দফতরের পক্ষে করা সম্ভব নয়। বিষয়টি নিয়ে সকলের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে।” বাস্তবে পৃথক ছুটি তো দূরের কথা। শিশু দত্তক নিলে কার্যক্ষেত্রে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় বলেও অভিযোগ। এ ব্যাপারে এক শিক্ষিকা বলেন, “অনেক ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, সহকর্মীদের একাংশই দত্তক শিশুর জন্য মাকে ছুটি দিতে বাধা দিয়েছেন।” |
|
|
|
|
|