|
|
|
|
শরিকদের বৈঠকে অবশেষে হাজির থাকলেন বুদ্ধদেব |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
বিধানসভা ভোটে বিপর্যয়ের পরে প্রথম বার বামফ্রন্টের শরিক নেতৃত্বের মুখোমুখি হলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। বামফ্রন্ট সরকারের বিদায়ের পরে ফ্রন্টের জনসভায় বক্তা হয়েছেন, সিপিএমের রাজ্য কমিটির বৈঠকেও থেকেছেন। কিন্তু ফ্রন্টের
বৈঠকে শরিকদের সঙ্গে বসেননি বুদ্ধবাবু। শেষ পর্যন্ত পরাজয়ের পাঁচ মাস পরে মঙ্গলবার আলিমুদ্দিনে সিপিএমের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর মুখোমুখি হলেন আরএসপি-র
রাজ্য নেতৃত্ব।
বিপর্যয়ের কারণ নিয়ে কোনও রাজনৈতিক মতামত অবশ্য এ দিনের বৈঠকে দেননি বুদ্ধবাবু। আরএসপি-র বক্তব্যের অনেকটাই ধৈর্য ধরে শুনেছেন। তাঁর শরীর নিয়ে শরিক নেতৃত্বের সঙ্গে ‘সৌজন্যমূলক’ কথাবার্তা হয়েছে। সিওপিডি-র প্রকোপ সামলাতে বুদ্ধবাবু এখন দলের রাজ্য দফতরে সিঁড়ি ছেড়ে লিফ্ট ব্যবহার করছেন। আরএসপি নেতৃত্বকে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক তথা বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু সে কথা জানানোর পরে বুদ্ধবাবু নিজে বলেছেন, তিনি ধূমপানের অভ্যাস কমানোর চেষ্টা করছেন। তার পরে ধূমপানের অছিলাতেই বৈঠক ছেড়ে উঠে গিয়েছেন! বৈঠকের শেষ দিকে ফিরেও এসেছেন এক বার।
দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় আরএসপি নেতৃত্ব রাজ্যে বামেদের বিপর্যয়ের বিশ্লেষণ তাঁদের মতো করে পেশ করেছেন। নির্বাচন-উত্তর পরিস্থিতিতে বামেদের কর্মসূচিতে মানুষের সাড়া কেন তেমন ভাবে মিলছে না, তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। নিজেদের ব্যাখ্যাও জানিয়েছেন। বিমানবাবুরা আরএসপি-র মত শুনেছেন। নির্বাচন-উত্তর পরিস্থিতির সমস্যা মেনে নিয়েও সিপিএম নেতৃত্ব শরিক নেতাদের বলেছেন, আপাতত ঐক্যবদ্ধ ভাবে কর্মসূচি এবং আন্দোলনে অংশ নিয়ে চলাই আশু করণীয়। বস্তুত, আরএসপি-র কার্যনির্বাহী রাজ্য সম্পাদক ক্ষিতি গোস্বামী এবং রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মনোজ ভট্টাচার্যের বিপরীতে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর প্রায় একটি ‘টিম’ এ দিন হাজির ছিল! বুদ্ধবাবু, বিমানবাবু, বিনয় কোঙার, মহম্মদ সেলিম, সূর্যকান্ত মিশ্র, দীপক দাশগুপ্ত উপস্থিতিতেই স্পষ্ট, ‘পরিবর্তিত’ পরিস্থিতিতে শরিকদের মত ‘গুরুত্ব’ দিয়ে শুনতে চাইছে আলিমুদ্দিন। চলতি সপ্তাহেই আরও দুই শরিক সিপিআই এবং ফরওয়ার্ড ব্লকের সঙ্গে সিপিএমের বৈঠক হওয়ার কথা।
আলিমুদ্দিন সূত্রের খবর, আরএসপি নেতৃত্ব এ দিনের বৈঠকে বোঝাতে চেয়েছেন, ‘মাথাভারী উন্নয়নে’র যে ‘মডেল’ গত পাঁচ বছরে বামফ্রন্ট সরকার চালাতে চেয়েছিল, মানুষের কাছে তা গ্রহণযোগ্য হয়নি। বামপন্থীদের কাছে মানুষ ওই ‘মডেলে’র উন্নয়ন আশাও করেন না। বামফ্রন্টের অন্দরে সিপিএমের ‘দাদাগিরি’র ফলও যে ভাল হয়নি, সে কথাও তোলেন তাঁরা। পাশাপাশিই, তাঁদের মত ছিল, ভোটের পরে সাধারণ মানুষের দাবি-দাওয়া সংক্রান্ত আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়েও মানুষের বিশেষ সাড়া না-পাওয়ার পিছনে দু’টি কারণ থাকতে পারে। প্রথমত, যেগুলিকে মানুষের দাবি বলে তাঁরা মনে করছেন, তার বাইরেও হয়তো জনতার ‘প্রকৃত দাবি’ পড়ে থাকছে। আর দ্বিতীয়ত, যাঁরা এই দাবির কথা বলছেন, তাঁদের কথা মানুষ আর শুনতে চাইছেন না। অর্থাৎ প্রকারান্তরে বুদ্ধবাবু-বিমানবাবুদের ‘গ্রহণযোগ্যতা’ নিয়েই প্রশ্ন তোলেন ক্ষিতিবাবুরা। বুদ্ধবাবু অবশ্য সেই সময় ছিলেন না। আরএসপি-র মতামত শুনে বিমানবাবু পরামর্শ দেন, ঐক্যবদ্ধ ভাবে আন্দোলনের পথে থাকাই এখন বিরোধী শিবিরের লক্ষ্য হওয়া উচিত। |
|
|
|
|
|