|
|
|
|
সঙ্কটকালে নয়া রণনীতি |
কমিটি গঠনে ‘ভোটাভুটি’ এড়ানোর চেষ্টায় সিপিএম |
প্রসূন আচার্য • কলকাতা |
নিচু তলায় দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে আসন্ন সম্মেলন-পর্বে কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে ভোটাভুটি এড়ানোর মরিয়া প্রচেষ্টা চালাচ্ছে আলিমুদ্দিন।
সিপিএমে সম্মেলন-প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। বিধানসভা ভোটে বিপর্যয়ের পর কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী জেলাগুলিতে দলের সাংগঠনিক পরিস্থিতি খুবই খারাপ। এর উপরে লোকাল-জোনাল-জেলা সম্মেলনে কমিটি গঠন করতে
গিয়ে ভোটাভুটি হলে সংগঠন আরও কমজোরি হয়ে পড়তে পারে। সেই
আশঙ্কা থেকেই ভোটাভুটি ‘এড়ানো’ নিয়ে দলের নেতারা আলোচনা
শুরু করেছেন।
প্রতিবারেই সম্মেলন চলাকালীন দলের রাজ্য নেতৃত্ব ভোটাভুটি এড়িয়ে আলোচনার ভিত্তিতে ‘সর্বসম্মত’ কমিটি গঠনের উপরে জোর দেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণেই নিচু তলায় বহু জায়গাতেই ভোটাভুটি হয়। যা নিয়ে পরবর্তী কালে নেতা ও কর্মীদের মধ্যে তিক্ততার সৃষ্টি হয়। মূলত কলকাতা, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হুগলি, পশ্চিম মেদিনীপুরেই এই সমস্যা বেশি। বিধানসভা ভোটেই স্পষ্ট যে, এই জেলাগুলিতে সিপিএমের পায়ের
নীচ থেকে মাটি সরে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব কাটিয়ে ‘ঐক্যবদ্ধ’ ভাবে কমিটি গঠন করাই এখন আলিমুদ্দিনের লক্ষ্য।
ইতিমধ্যেই উত্তর ২৪ পরগনা জেলা কমিটির
বৈঠকে দলের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুর উপস্থিতিতে জেলা নেতারা ভোটাভুটি বন্ধের দাবি তুলেছেন। কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে কোথাও যাতে ভোটাভুটি
না-হয়, তা নিয়ে রাজ্য কমিটির আসন্ন বৈঠকেও আলোচনা হওয়ার কথা। আগামী রবি ও সোমবার রাজ্য কমিটির বৈঠক। ওই বৈঠকেই সম্মেলনের নির্ঘণ্ট চূড়ান্ত হওয়ার কথা।
ঐকমত্যের ভিত্তিতে কমিটি গঠনের জন্য প্রতি বারই যে চেষ্টা করা হয়, তা জানিয়ে সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য নিরুপম সেন বলেন, “এ বার পরিবর্তিত পরিস্থিতি। দীর্ঘ ৩৪ বছর বাদে আমরা আর ক্ষমতায় নেই। দলের প্রত্যককে এ কথা বুঝতে হবে। সেই কারণেই ভোটাভুটি না-করে সবাই মিলে বসে ঐকমত্যের ভিত্তিতে কমিটি গঠনের উপরে জোর দিচ্ছি।” দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, সম্মেলনে ভোটাভুটি বন্ধ করার উপরে সরাসরি ‘নিষেধাজ্ঞা’ জারি করতে পারে না আলিমুদ্দিন। কিন্তু রাজ্যের সর্বোচ্চ স্তর থেকে এ ব্যাপারে ‘ফরমান’ জারি করতে পারে সিপিএম। নিরুপমবাবু বলেন, “কোনও বারই সব জায়গায় ভোটাভুটি হয় না। তবে কিছু জায়গায় কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে ভোটাভুটি হয়। এ বার যাতে তা-ও না হয়, সেই চেষ্টাই করা হচ্ছে। কোথাও কোনও বিরোধ থাকলে সম্মেলন চলাকালীন নেতাদের বসে তা মিটিয়ে নিতে হবে।”
বিভিন্ন জেলা কমিটির বৈঠকে গিয়ে এ ব্যাপারে জেলা নেতাদের সঙ্গে
এক প্রস্ত কথা বলে এসেছেন বিমানবাবু। বুধবার, কালীপুজোর দিন কলকাতা জেলা কমিটির বৈঠক। সুভাষ চক্রবর্তী জীবিত থাকাকালীন উত্তর ২৪
পরগনা জেলা সিপিএমে সুভাষবাবুর নিজস্ব গোষ্ঠী ছিল। গোষ্ঠী-লড়াইয়ে ভোটাভুটির ঘটনা ওই জেলায় ছিল প্রায় ‘অনিবার্য’। এ বার যে দলীয় নেতৃত্ব কোনও ভাবেই ভোটাভুটি মেনে নিতে চান না, ওই জেলা থেকে রাজ্য কমিটির সদস্য অমিতাভ নন্দীর কথায় তা স্পষ্ট। তিনি বলেন, “অতীতে যা হওয়ার হয়েছে। এ বার কমিটি গঠনের সময় ভোট হবে কেন? তৃণমূলের কাছে
আমরা মার খাচ্ছি। বহু জায়গাতেই সংগঠন দুর্বল হয়ে গিয়েছে। ঘুরে দাঁড়ানোই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। সে কথা মনে রেখে সর্বত্র ঐকমত্যের ভিত্তিতে কমিটি গঠন করতে হবে।”
কলকাতা ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্ষেত্রেও একই রকম ‘বার্তা’ দিতে চান জেলার নেতারা। কলকাতা জেলার নেতা তথা রাজ্য কমিটির সদস্য মানব মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “আমাদের দলে গণতন্ত্র আছে। তাই ভোট-প্রক্রিয়াও সম্মেলনের অংশ। কিন্তু এ বার পরিস্থিতি ভিন্ন। সে ক্ষেত্রে সর্বত্রই সর্বসম্মতিক্রমে কমিটি গঠন করাই বাঞ্ছনীয়।” তাঁর মতে, “কোনও বিষয়ে বিবাদ থাকলে তা আলোচনার মাধ্যমেই মিটিয়ে নিতে হবে।” দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার সম্পাদক সুজন চক্রবর্তীরও বক্তব্য, “আমাদের মূল প্রতিপক্ষ তৃণমূল। এই পরিস্থিতিতে কমিটি গঠনের জন্য নিজেদের মধ্যে ভোটাভুটি হবে কেন?”
বিগত দু’টি সম্মেলনে হুগলি জেলায় রূপচাঁদ পাল বনাম অনিল বসুর গোষ্ঠীর লড়াই চেষ্টা করেও আলিমুদ্দিন বন্ধ করতে পারেনি। এ বার নতুন প্রশ্ন, জেলা সম্পাদক কে হবেন? এ ব্যাপারে ইতিমধ্যেই অনিলবাবুর পাশাপাশি সুনীল সরকারের নামও উঠে এসেছে। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়েও জেলার অন্যতম নেতা, আলিমুদ্দিনের ‘ঘনিষ্ঠ’ রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী সুদর্শন রায় চৌধুরী বলেন, “ঐক্যবদ্ধ ভাবে সর্বসম্মতিক্রমে কমিটি গঠন করাই আমাদের নীতি।”
শেষ পর্যন্ত ভোটাভুটি এড়ানোর চেষ্টায় আলিমুদ্দিন সফল হবে? নাকি তাতে দলে আরও বিবাদ বাড়বে? স্পষ্ট হবে সম্মেলনেই। |
|
|
|
|
|