সঙ্কটকালে নয়া রণনীতি
‘নিশানা’ হওয়া আটকাতে কিছু জেলায় ‘গোপন’ সম্মেলন
রাজ্যে ক্ষমতাচ্যুত সিপিএমকে এ বার ফিরে যেতে হচ্ছে ‘বিপ্লবী’ কমিউনিস্ট পার্টির কৌশলে!
দলের বিভিন্ন স্তরের বহু নেতা নতুন সরকারের আমলে মামলা-মোকদ্দমায় জেরবার। অনেকে ফেরার। শাসক দলের ‘আক্রমণে’ সংগঠনের কর্মসূচি চালানো মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে বহু জায়গায়। পরিস্থিতি বিচার করে বেশ কিছু জোনাল এবং লোকাল কমিটি স্তরের সম্মেলন ‘গোপনে’ সেরে ফেলার কৌশল নিতে হচ্ছে সিপিএমকে! সম্মেলন হবে, রাজনৈতিক প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হবে, নতুন কমিটিও গড়া হবে। কিন্তু কবে, কোথায় হচ্ছে সেই তথ্য প্রকাশ্যে ঘোষণা করা হবে না! এই ধরনের ঘটনা ঘটত বহু যুগ আগে, কমিউনিস্ট নেতাদের যখন ‘আত্মগোপন’ করে দলের কাজ চালাতে হত। গত সাড়ে তিন দশকে এ রাজ্যে সম্মেলনের মতো নিখাদ সাংগঠনিক প্রক্রিয়া চালাতে গিয়ে এমন সঙ্কটে পড়তে হয়নি সিপিএমকে।
রাজ্যের ১৯টি জেলায় প্রায় ২৮৭টি জোনাল কমিটি রয়েছে সিপিএমের। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ‘কাজ কমে’ যাওয়ায় এত কমিটি রাখার আর প্রয়োজন নেই বলে আগেই ঠিক করেছেন সিপিএম নেতৃত্ব। একাধিক কমিটি মিশিয়ে দিয়ে দলের কলেবর ছোট করে আনতে চান তাঁরা। বিধানসভার ভোটের ফলপ্রকাশের পর থেকে বহু জোনাল ও লোকাল কার্যালয় বন্ধ। বেশ কিছু কার্যালয় তৃণমূল ‘দখল’ করে নিয়েছে বলে সিপিএমের অভিযোগ। ‘সন্ত্রাসে’র মধ্যে ঢাক পিটিয়ে সম্মেলন করে আরও ‘আক্রমণ’ ডেকে আনতে চাইছেন না সিপিএমের জেলা নেতৃত্ব। পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বর্ধমান, বীরভূমে বেশ কিছু জোনালের কাজকর্ম বন্ধ। কলকাতার আশেপাশে হাওড়া, হুগলি, নদিয়া, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার বেশ কিছু জোনালেও একই অবস্থা। ওই সমস্ত এলাকাতেই চুপচাপ সম্মেলন সেরে ফেলার কৌশল নিতে হচ্ছে সিপিএমকে। দলের রাজ্য কমিটির এক সদস্যের কথায়, “জেলাভিত্তিক পরিস্থিতি আলাদা। কিন্তু সন্ত্রাসের মধ্যে নিজেদের রক্ষা করে ভবিষ্যতের জন্য তৈরি হওয়ার কথা ভাবতে হচ্ছে সর্বত্রই।” নন্দীগ্রামের জেলা পূর্ব মেদিনীপুরে যেমন অন্তত ৫টি জোনাল কমিটির সম্মেলন ‘গোপনে’ করা হবে বলে প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে।
সিপিএম নেতৃত্বের বক্তব্য, মূলত দক্ষিণবঙ্গের বেশ কয়েকটি জেলার বেশ কিছু অঞ্চলে দলের প্রকাশ্য কর্মসূচি কয়েক মাস ধরেই বন্ধ। তৃণমূলের ‘সন্ত্রাসে’র জন্য দলের নেতা-কর্মীরা বহু ক্ষেত্রে এলাকায় থাকতে পারছেন না। কর্মসূচি নিলে তাতে যাঁরা যোগ দিচ্ছেন, তাঁদের শাসক দলের হামলার মুখে পড়তে হচ্ছে। এমতাবস্থায় সম্মেলন প্রকাশ্যে করতে গেলে নেতা-কর্মীদের ‘চিহ্নিত’ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তাড়া করছে সিপিএমকে। সেই জন্যই ‘গোপন’ সম্মেলনের সিদ্ধান্ত। জেলা কমিটিগুলি কোন কোন জোনাল কমিটির সম্মেলন ‘গোপনে’ করতে হবে, তা ঠিক করে সংশ্লিষ্ট কমিটিগুলিকে জানিয়ে দিচ্ছে। লোকাল কমিটির ক্ষেত্রে তেমনই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার রয়েছে জোনাল নেতৃত্বের উপরে। সম্মেলন যে হেতু ‘গোপনে’ হবে, তাই ওই সংশ্লিষ্ট কমিটিগুলির বেলায় সম্মেলন উপলক্ষে জনসভার প্রশ্নই নেই।
সম্মেলনের জন্য সিপিএম সচরাচর এলাকার কোনও প্রেক্ষাগৃহ ভাড়া করে। প্রয়াত কোনও নেতার নামে সম্মেলন স্থলের নামকরণ করা হয়। লাল তোরণে এলাকা মুড়ে এক ধরনের উৎসবের চেহারা আসে। জোনাল সম্মেলনই সাধারণত এলাকায় সিপিএমের উপস্থিতি জানান দেওয়ার উপলক্ষ হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু এ বার ‘গোপন’ সম্মেলন করে কিছু বেশ জোনাল কমিটির এই ‘আনুষ্ঠানিকতা’ বন্ধ করে দিতে হচ্ছে। সিপিএমের এক রাজ্য নেতার কথায়, “সচরাচর একটা কমিটি ভাল সম্মেলন করলে পাশের কমিটি তার চেয়েও ভাল ভাবে করতে চায়। সম্মেলন প্রক্রিয়া কমিটিগুলিকে উৎসাহও দেয়। কিন্তু এ বারের যা পরিস্থিতি, কিছু জোনাল কমিটির সম্মেলন গোপনে করতে হবে।” জেলা সম্মেলনে অবশ্য এর কোনও প্রভাব পড়বে না।
আনুষ্ঠানিক ভাবে সিপিএম নেতৃত্ব তাঁদের সম্মেলন প্রক্রিয়া ব্যাহত হওয়ার জন্য শাসক দলের ‘সন্ত্রাস’কে দায়ী করলেও এ বার অন্য একটি প্রশ্ন মাথায় রাখতে হচ্ছে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলকে। বিভিন্ন মামলায় (সিপিএমের অভিযোগ, বেশির ভাগই সাজানো) দলের বিভিন্ন কমিটির বহু সদস্য ‘অভিযুক্ত’। অনেকে এলাকায় থাকছেন না। অভিযুক্ত কর্মীরা প্রকাশ্যে সম্মেলনে যোগ দিলে তা নিয়ে যেমন জনমানসে ‘ভুল বার্তা’ যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, তেমনই স্থানীয় তৃণমূল কর্মীরা ওই ঘটনাকে ‘ব্যবহার’ করে সমস্যা তৈরি করতে পারেন। এমনিতে সিপিএমের গঠনতন্ত্রে অবশ্য জেল থেকেও কমিটিতে নির্বাচিত হওয়া যায়। প্রাক্তন মন্ত্রী, কারাবন্দি সুশান্ত ঘোষের যেমন এ বারও পশ্চিম মেদিনীপুরের কমিটিতে নির্বাচন প্রায় পাকা। তবুও ‘অভিযুক্ত’ কর্মীদের নিয়ে এলাকায় নতুন করে সমস্যা তৈরি হওয়া এড়াতে চাইছেন সিপিএম নেতৃত্ব।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.