কালীপুজোয় মেতে উঠেছে বাঁকুড়া। বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর, খাতড়া শহরের রাস্তা আলোয় সেজেছে। বাঁকুড়া শহরের বড় কালীপুজোগুলির মধ্যে লখ্যাতড়া মহাশ্মশানের পুজো উল্লেখযোগ্য। এখানকার আলোকসজ্জা আকর্ষণীয়। মণ্ডপের আশপাশে রাস্তার দু’পাশে এ বারও আলোর বিভিন্ন কারুকার্য থাকছে। হিমবাহের আঘাতে সমুদ্রে টাইটানিক জাহাজের ডুবে যাওয়ার দৃশ্য আলোয় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এ ছাড়া মা কালী, রামকৃষ্ণদেব, সারদাদেবী, ও স্বামী বিবেকানন্দের সাজে জীবন্ত মডেল থাকছে। কচি কাঁচাদের মনোরঞ্জনের জন্য এ বারেও নানান আয়োজন থাকছে।
এ ছাড়া লোকপুর শ্মশান, পলাশতলা শ্মশান, মীনাপুর শ্মশান ও ভৈরবস্থানের পুজো দেখতেও অনেকে ভিড় করেন। ভোরে দেবীর প্রসাদ নেওয়ার জন্যে দীর্ঘ লাইন পড়ে। শ্মশানগুলি ছাড়াও কয়েকটি ক্লাব বেশ জাঁকজমকভাবে কালীপুজোর আয়োজন করে। নুনগোলা রোডের ছেলেকালী ক্লাবের এ বার ৫৫ বছরে পড়ল। এখানে আলোকসজ্জা বাড়তি আকর্ষণ। পোদ্দারপাড়া সর্বজনীন শ্যামাপুজো কমিটির মণ্ডপ মন্দিরের আদলে তৈরি হয়েছে। দোলতলা সর্বজনীন শ্যামাপুজো কমিটির মণ্ডপ বৌদ্ধ মন্দিরের আদলে। বড়জোড়া বাসস্ট্যান্ডের ‘সাইনিং স্টার’ ও রাজারবাঁধের ‘রাজ ক্লাব’ পুজোয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। |
শ্রীনিবাস আচাযের্র কাছে দীক্ষা নেওয়ার আগে বিষ্ণুপুরের মল্লরাজারা শাক্ত ছিলেন। তাই এখানে অনেক শাক্তপীঠ গড়ে উঠেছিল। রসিকগঞ্জের রক্ষাকালী, শাঁখারি বাজারের দশের কালী, পুরভবন লাগোয়া একরেতে কালী, কাকাস্থলীর পাতাছেঁড়া কালী এবং মুণ্ডমালা ঘাটের উগ্রকালী। কথিত রয়েছে, বিড়াই নদীর তীরে এই মুণ্ডমালা ঘাটে মল্লরাজাদের সঙ্গে বর্গিসর্দার ভাস্কর পণ্ডিতের লড়াইয়ে দু’পক্ষের প্রচুর সেনার মৃত্যু হয়েছিল। মৃত সৈনিকদের মুণ্ড চারদিকে ছড়িয়ে থাকায় জায়গার নাম হয়ে যায়, মুণ্ডমালার ঘাট। পরে সেখানেই তৈরি হয়ে কালী মন্দির। বড়কালী মন্দিরও প্রাচীন শক্তিপীঠ।
নতুন মহল, কালিন্দী ও ভাইপাড়ায় শ্মশানকালীর পুজো হয়। ছিন্নমস্তা কালীর পুজোতেও ভিড় হয়। কৃষ্ণগঞ্জের মলডাঙায় শিব-দুর্গার পুজো হয়। এ ছাড়া বারোয়ারি পুজোগুলির আকর্ষণ তো রয়েইছে। সোনামুখীর মাইতোকালী, খেপাকালী, বড়কালীর পুজোও খুব বিখ্যাত।
আবার খাতড়া শহরে এ বার কালীপুজোয় থিমের ছড়াছড়ি। এখানে যেন পুজো কমিটিগুলির মধ্যে একে অপরকে টেক্কা দেওয়ার লড়াই চলছে। ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৪০টি কালীপুজো হচ্ছে। তার মধ্যে স্টার ক্লাব, ভ্রাতৃ সঙ্ঘ, সিনেমা রোড, মেধাবী সঙ্ঘ, নাইন স্টার, উত্তরপল্লী, ফ্রেন্ডস ক্লাব, এবং সূর্য সঙ্ঘের পুজো উল্লেখযোগ্য। সর্দারবাঁধের জলের উপরে রাজগিরের মন্দিরের আদলে সুদৃশ্য মণ্ডপ তৈরি করেছে খাতড়া নাইস্টার ক্লাব। আলোর কারুকার্যও থাকছে।
খাতড়া স্টার ক্লাব ও ভ্রাতৃ সঙ্ঘের পুজো ৩১ বছরে পড়ল। মন্দিরের আদলে মণ্ডপ। এখানে রবীন্দ্রনাথের নানা বাণী ও কাব্যগীতি মণ্ডপের সামনে তুলে ধরা হয়েছে। বাঁশ, কাঠের উপরে কাঁচ, ঝিনুক দিয়ে দক্ষিণ ভারতীয় মন্দিরের আদলে মণ্ডপ তৈরি করেছে খাতড়া মেধাবী সঙ্ঘ। পুজোর পরের দিন সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। সিনেমা রোড সর্বজনীন এ বারেও সুউচ্চ মণ্ডপ তৈরি করেছে। পুজোর পরের দিন এলাকার বাসিন্দাদের ভোগ খাওয়ানো হয়। প্রতি বছর নতু ভাবনার ছোঁয়া থাকে খাতড়া উত্তরপল্লীর পুজোয়। এ বার তাদের আকর্ষণ নবদ্বীপের মানুষ প্রতিমা। রাজস্থানের মন্দিরের আদলের মণ্ডপ দেখা যাবে রবীন্দ্রসরণির ফ্রেন্ডস ক্লাবের পুজোয়। তবে, এ সবের ভিড় পৃথক খাতড়া শ্মশানকালীর পুজো। চোখ ধাঁধানো আলো ও আতসবাজি দেখতে ভিড় হয়। |
(সহ প্রতিবেদন: স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়, দেবব্রত দাস, রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়) |