থিমের পুজো আর আলোয় সেজেছে আদ্রা-পুরুলিয়াও
শারদ উৎসবের পরে আলোর উৎসবে মেতেছে আদ্রা ও পুরুলিয়া। তবে মূল্য বৃদ্ধির কারণে এ বার অবশ্য কিছুটা হলেও বিবর্ণ এই উৎসবের রং। উদ্যোক্তাদের কথায়, “বিশ্বকর্ম পুজো থেকে শুরু করে দুর্গাপুজো, তারপরে কালীপুজো- পরপর তিনটি পুজো জাঁকজমক সহকারে করতে গিয়ে এই বছর কিছু সমস্যা হচ্ছে। এর কারণ পুজোর আনুষঙ্গিক সরঞ্জামের দাম খুব বেড়ে গিয়েছে। তবে, সীমিত সামর্থ্যেও কালীপুজোয় দর্শকদের মন ভরাতে চেষ্টার ত্রুটি রাখছেন না উদ্যোক্তারা।
বস্তুত রেল শহর আদ্রায় যথেষ্ট বড় আকারেই কালীপুজো হয়। তার মধ্যে ৫-৬টি ক্লাবের পুজো উল্লেখযোগ্য। বেশ বড় আকারের পুজো হয় এখানে। মণ্ডপসজ্জা, আলোকসজ্জার মাধ্যমে চলো নীরব প্রতিযোগিতা- একে অপরকে ছাপিয়ে যাওয়ার। এ বার প্রতিবন্ধকতা থাকলেও তা কাটিয়ে উঠে আলোর উৎসবে মেতেছে রেল শহর আদ্রা।
আদ্রার হৈ চৈ ক্লাবের মণ্ডপের ছবিটি তুলেছেন প্রদীপ মাহাতো।
এখানকার দেশবন্ধু ক্লাব এ বার মণ্ডপসজ্জায় ব্যবহার করেছে মুড়ি, কুলো, বাঁশের কঞ্চি ও চট। ওই সব জিনিস দিয়ে মন্দিরের আদলে মণ্ডপ গড়েছে ওই ক্লাবটি। অন্যতম উদ্যোক্তা বিধান কালিন্দী বলেন, “সব কিছুর দাম বাড়ার ফলে এ বার বাজেট গতবারের থেকে বেশ বেড়ে গিয়েছে। ফলে বড় মাপের পুজো করতে সমস্যায় পড়ছি।” একই কথা বলেন হৈ চৈ সঙ্ঘের পুজো উদ্যোক্তা তথা রেল কর্মী সংগঠনের নেতা গৌতম মুখোপাধ্যায়।
বরাবর বড় বাজেটের পুজো করে চোখ ধাঁধানো মণ্ডপসজ্জা করে হৈ চৈ সঙ্ঘ। এ বার তাঁরা মণ্ডপ সজ্জায় ব্যবহার করছেন ছোট ঝুড়ি ও তাল পাতা। গৌতমবাবু বলেন, “আমরা নিজেরাই চাঁদা দিয়ে চেষ্টা করছি আমাদের পুজোর ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে। তবে যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছে।” অন্য দিকে এ বার থিম পুজো করছে মুক্তদল সঙ্ঘ। তাঁদের থিম ‘খাচায় বন্দি পাখি’। বাঁশের কঞ্চি ও খড় ব্যবহার করে মণ্ডপসজ্জায় তাঁরা তুলে ধরেছেন পাখির খাঁচা। কোথাও খাঁচার দরজা খোলা। কোথাও তা বন্ধ। তৈরি করা হয়েছে বিভিন্ন রঙের, বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। উদ্যোক্তাদের কথায়, “পুরো মণ্ডপটাই চিড়িয়াখানার আদলে তৈরি করা হয়েছে। আমরা চাইছি বনের পাখিকে খাঁচায় বন্দি না করে তাদের স্বাভাবিকভাবে বাঁচতে দেওয়া হোক।” কল্পতরু সঙ্ঘ, এমসিসি ক্লাব মণ্ডপ তৈরি করেছে দক্ষিণভারতীয় মন্দিরের আদলে।
আদ্রা ছাড়াও রঘুনাথপুর শহরেও আলোর উৎসব যথেষ্টই রঙিন। তবে এই পুরশহরের বাসিন্দারা মাতেন বড় কালী মন্দিরের পুজোকে ঘিরে। চার দশকের পুরনো এই মন্দিরের পুজোর অন্যতম আকর্ষণ ১৩ ফুট উচ্চতার বিশাল আকৃতির প্রতিমা। তবে রঘুনাথপুর মহকুমা তো বটেই পুরো জেলার অন্যতম বিখ্যাত পুজো মৌতোড় গ্রামের কালীপুজো। আধ্যাত্মিক মহিমা ও নানা জনশ্রুতি অন্যমাত্রা এনেছে। প্রায় আড়াইশো বছরেরও প্রাচীন এই পুজোয় রাতে বহু লোকের সমাগম হয়। ‘সাধক’ শোভারাম বন্দ্যোপাধ্যায় প্রবর্তিত ওই পুজোকে ঘিরে অনেক অলৌকিক ঘটনার জনশ্রুতি রয়েছে। বিশাল আকারের প্রতিমাকে বেঁধে রাখা হয়। সে জন্য মৌতোড় গ্রাম ‘বাঁধা মৌতোড়’ নামেও পরিচিত। মৌতোড় গ্রামের ভট্টাচার্য পরিবারের জামাই শোভারাম বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৈরি করেছিলেন পঞ্চমুণ্ডির আসন। সাপ, শেয়াল, কুকুর, নর ও বানরের মুণ্ড রয়েছে সেখানে। সেই আসনে বসেই পুরোহিত পুজাপাঠ করেন। এখানে পশুবলির প্রথা রয়েছে। উদ্যোক্তারা বলেন, “নিয়ম রীতি মেনেই পুজো করা হয়। দিন দিন ভক্তের ঢল বাড়ছে।”
রঘুনাথপুরের পাশাপাশি আলোর উৎসবে মেতেছে জেলা সদর পুরুলিয়াও। এখানকার অন্যতম বড় পুজো করে ভাগাবাঁধ পাড়ার মাতৃসেবক সঙ্ঘ। উদ্যোক্তা সমীর চন্দ জানান, মূলত চট ব্যবহার করে গ্রাম্য পুরনো মন্দিরের আদলে মণ্ডপ তৈরি করা হয়েছে। পুজোর পরের দিন, বাংলা গানের একাল ও সেকাল নিয়ে অনুষ্ঠান থাকছে। বরাবরের মতো এ বারও পুজোর খরচ বাঁচিয়ে থ্যালাসেমিয়া রোগীদের সাহায্য করবো শহরের অন্যতম পুজো ফাইট ফর পুরুলিয়ার উদ্যোক্তারা। কালীপুজোর রাতে পুরুলিয়া রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যাপীঠে আতসবাজির প্রদর্শনী দেখতে প্রচুর মানুষ ভিড় করেন।
(সহ প্রতিবেদন: প্রশান্ত পাল)



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.