অন্য সময় উত্তর ২৪ পরগনার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া এই জনপদটিতে কোনও বৈচিত্র্য লক্ষ্য করা না গেলেও, কালীপুজো-দীপাবলিতে বাগদা যেন কালীতীর্থ হয়ে ওঠে। জাঁকজমক, আলোর রোশনাই আর জনজোয়ারে এই সময়ের বাগদা বাগদাবাসীর কাছে যেন অচেনা হয়ে দাঁড়ায়।
কোথাও মধ্যপ্রদেশের খাজুরাহো মন্দিরের আদলে মাথা তুলেছে মণ্ডপ, কোথাও একেবারে সদ্য ঘটে যাওয়া ভূমিকম্প বিধ্বস্ত সিকিমের প্রতিচ্ছবি। কোথাও আবার সাঁইবাবার মন্দির। রাজস্থানের রানা অমর সিংহ রাঠোরের লড়াই পুতুলের সাহায্যে জীবন্ত করে তোলা হয়েছে একটি মণ্ডপে। আর এত সব রকমারি মণ্ডপ তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে পিতলের পাত, পিতলের ঝুড়ি। মণ্ডপের পাশাপাশি আলোকসজ্জাতেও পুজো কমিটিগুলির একে অন্যকে ছাপিয়ে যাওয়ার চেষ্টা। ইরাকের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের ফাঁসি থেকে রাজ্যে ক্ষমতার হাতবদল সবই বিষয় হয়ে উঠেছে আলোর। পুলিশের হিসাবে বাগদায় এ বার বড় পুজোর সংখ্যা ১০টি। সব মিলিয়ে পুজোর সংখ্যা ৭০। অন্যবছরের তুলনায় এ বার বেশ কিছু পুজো কমিটি তাদের বাজেটও বাড়িয়ে দিয়েছে।
হেলেঞ্চা দিঘিরপাড় যুবগোষ্ঠী পুজো কমিটির এ বার ২৫ বছর। ভূমিকম্প বিধ্বস্ত সিকিমই এঁদের মণ্ডপের থিম। তৈরি করা হয়েছে ৪০ ফুট উঁচু পাহাড়। পাহাড়ের উপরে উঠে মুল মন্দিরে প্রবেশ করে প্রতিমার দর্শন পাবেন দর্শনার্থীরা। রয়েছে চা বাগান, ভূমিকম্পে বেঙে যাওয়া ঘরবাড়ি। তার তলায় চাপা পড়ে আছে মানুষ। চলছে উদ্ধারকাজ।
হেলেঞ্চা স্পোর্টিং ক্লাবের পুজোর থিম খাজুরাহোর মন্দির। প্লাউউড, মাটি, ফাইবার দিয়ে তৈরি মণ্ডপের গায়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে প্রাচীন ভারতীয় চিত্রকলা। পাটকাঠি দিয়ে তৈরি হয়েছে প্রতিমা। নজর কাড়বে চন্দননগরের আলো। ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ‘নানা ভাষা, নানা মত, নানা পরিধান’।
বাগদার অন্যতম পুরনো পুজোগুলির মধ্যে অন্যতম নবারুণ সঙ্ঘের পুজো। ৩২ বছরের এই পুজোর মণ্ডপ এ বার সাঁইবাবার মন্দিরের আদলে। দেখা যাবে গণেশকে সঙ্গে নিয়ে শিবের মাথায় জল ঢালছেন মা কালী। আলোকসলজ্জার থিম ‘পরিবর্তন’। এ ছাড়াও থাকবে রেল দুর্ঘটনায় হাতির মৃত্যু।
রামকৃষ্ণ স্মৃতি সঙ্ঘের পুজো এ বার ৫৪ বছরে পা দিয়েছে। মায়াপুরের ইসকন মন্দিরের আদলে তৈরি হয়েছে মণ্ডপ। ডাকের সাজের প্রতিমা। পুজোয় এখানে মেলার আয়োজন করা হয়।
অক্ষরধাম মন্দিরের আদলে মণ্ডপ তৈরি করেছে সবুজ সঙ্ঘ। গুজরাতের একটি মন্দিরের আদলে নব উজ্জ্বল সঙ্ঘের মণ্ডপ। প্রতিমার থিম পঞ্চনাগ। হেলেঞ্চা ২ নম্বর যোগেন্দ্র স্মৃতি সঙ্ঘ ৫৩ তম বছরে ম্ডপ তৈরি করেছে কাম্বোডিয়ার আঙ্কোরভাট বিষ্ণুমন্দিরের আদলে। ৭০ ফুট উঁচু মণ্ডপ তৈরি হয়েছে কাপড়, প্লাই ও পিতলের ঝুড়ি দিয়ে। আলোয় দেখা যাবে ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের ফাঁসি।
ভবানীপুর ইয়ং ক্লাবের এ বারের থিম ’৭১-এর মুক্তি যুদ্ধ। দেখা যাবে মুজিবর রহমানকে হত্যার দৃশ্য। হেলেঞ্চা বৈচেডাঙা নেতাজি স্পোর্টিং ক্লাবের পুজো এ বার ২১ বছরে পা দিয়েছে। রাজস্থানের অমর সিংহ রাঠোরের সঙ্গে মোগল বাদশার লড়াই নয়ে তৈরি হয়েছে মণ্ডপের থিম। আলোয় থাকছে বিখ্যাত কার্টুন টম অ্যান্ড জেরি। গাঁড়াপোতার কালীপদ বিশ্বাস স্মিৃতরক্ষা কমিটির পুজোর এ বার মণ্ডপ তৈরি হয়েছে রাজস্থানের উমেদ সিংহ ভবনের আদলে। ২৬ ফুট উঁচু ঝাড়বাতি অন্যতম আকর্ষণ। এ ছাড়া উল্লেখযোগ্য পুজোগুলির মধ্যে রয়েছে বৈচেডাঙা আপনজন ক্লাব, হেলঞ্চা ইলেভেন স্টার, বিবেকানন্দ স্পোর্টিং ক্লাব, শিবশক্তি স্পোর্টিং , বকুলতলা বালক সঙ্ঘ, দক্ষিণ হেলেঞ্চা বি আর অম্বেডকর জিমন্যাসিয়াম ক্লাব ও বাগদা একাদশ। |