বেশ কয়েক বছর ধরেই চলছিল রেওয়াজটা। কলকাতার বড় দুর্গাপুজোর থিম তুলে এনে মণ্ডপ সাজাচ্ছিলেন বারাসতের মাঝারি বাজেটের কালীপুজোর উদ্যোক্তারা। সেই প্রথা বন্ধ হয়েছে। আনকোরা থিমের মণ্ডপ ছোট-বড় প্রায় সব পুজোতেই। মঙ্গলবারের মধ্যেই হয়ে গিয়েছে উদ্বোধন। আজ, বুধবার থেকে চার দিন-রাত জনজোয়ারে ভাসবে বারাসত।
কালীপুজোর দিনগুলিতে ভিড় জমাবেন রাজ্যের লক্ষ-লক্ষ দর্শনার্থী। সতর্ক প্রশাসনও। ৩৪ ও ৩৫ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশাপাশি টাকি, ব্যারাকপুর রোডের মতো বড় রাস্তায় যান-চলাচল নিষিদ্ধ হয়েছে। বাংলাদেশ, উত্তরবঙ্গের মতো দূরপাল্লার বাসগুলির পথ-নির্দেশও দিয়ে দেওয়া হয়েছে।
একে অন্যকে টেক্কা দিতে তৈরি উদ্যোক্তারা। একশোটিরও বেশি স্তম্ভ পেরিয়ে গুজরাতের সোমনাথ মন্দিরে ইতিমধ্যেই ভিড় উপচে পড়েছে। কেএনসি রেজিমেন্টে এই পুজোর কর্তা সন্তু সিংহ বললেন, “এ বার বারাসতে কালীপুজোর ভিড় যেন আরও বেড়েছে। পুজোর পাশাপাশি গরিবদের বস্ত্র বিতরণ ও খাওয়াদাওয়া চলবে।” |
বারাসতে কালীপুজোর প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল দুর্গাপুজোর আগে থেকেই। শিল্পী অভয় পারিয়া বলেন, “চার মাস আগে উদ্যোক্তাদের নিয়ে আমরা অমৃতসর ঘুরে সমস্ত নকশা করে এনেছি। স্বর্ণমন্দিরের সেই নৈপুণ্যই দেখতে পাবেন দর্শনার্থীরা।” বিশাল জলাশয়ের মধ্যে ১৩৫ ফুট দীর্ঘ সেতু পেরিয়ে ঢুকতে হবে পায়োনিয়ার অ্যাথলেটিক ক্লাবে। জলাশয়ে গড়া হয়েছে বিশাল স্বর্ণমন্দির।
যাঁদের ছাড়া পুজো হয় না, তাঁদের নিয়েই থিম শক্তিমন্দিরে। পুরোহিত, ঢাকি, প্রতিমা-শিল্পী, ডেকরেটর্সদের ২২টি মডেলের মাধ্যমে দেখানো হবে কী ভাবে একটি পুজোমণ্ডপ সম্পূর্ণ হয়। হরিদ্বারের কঙ্খলের আদলে মণ্ডপ সেখানে। গঙ্গাকে আবাহনের বিভিন্ন রূপ থাকবে দেবীমূর্তির দু’পাশে। মুম্বইয়ের সিদ্ধিনাথ মন্দিরের আদলের মণ্ডপ রেজিমেন্টে। ত্রিকূট পাহাড়ের উপরে কলিঙ্গ মন্দিরের দেখা মিলবে শতদল সঙ্ঘের মাঠে। সুবর্ণজয়ন্তীতে বালকবৃন্দ স্পোর্টিং ক্লাবে ৩৬ রকমের সামুদ্রিক উপাদান দিয়ে তৈরি হয়েছে তামিলনাড়ুর কার্তিক মন্দির। ঝিনুকের প্রতিমা গড়েছেন শিল্পী ইন্দ্রজিৎ পোদ্দার। বারাসত সন্ধানীর থিম মায়ের অস্ত্রভাণ্ডার।
রাস্তা মুড়ে দিয়ে অনবদ্য প্রবেশদ্বার এ বার নবপল্লি সর্বজনীনে। প্লাস্টার অফ প্যারিস ও ধানের তুষ দিয়ে নেপালের গণেশ মন্দির সেখানে। নবপল্লি ব্যায়াম সমিতিতে দক্ষিণ ভারতের ১৬টি মন্দির। পুকুরপাড় সেজেছে হরিদ্বারের গঙ্গাতীরের আদলে। ১২ হাত প্রতিমা। সুবর্ণজয়ন্তীতে কৈলাসনগর মৈত্রী সঙ্ঘে দেবীর ৫১ পীঠের রূপ। রাক্ষসবধের পরে দেবীর শান্তি স্থাপনের ছবিই ফুটে উঠছে তরুছায়া পুজো কমিটিতে। জাপানের বৌদ্ধ মন্দিরের আদলে বেত-বাঁশ দিয়ে মণ্ডপ তৈরি করছে বিদ্রোহী।
পিছিয়ে নেই মধ্যমগ্রামও। মন্দিরের আদলে তৈরি হচ্ছে চণ্ডীগড় অ্যাথলেটিক ক্লাবের মণ্ডপ। রবীন্দ্রপল্লি অ্যাথলেটিক ক্লাবে এ বারের থিম তারাপীঠ। বিবেকানন্দ নগর ইউথ অ্যাসোসিয়েশনের থিম আবার তারাপীঠের শ্মশান। কাগজের ব্যাগ, ঠোঙা, মাদুর, ঝুড়ির মন্দির ইয়ং সেন্টারে। শ্রীনগরের আমরা ক’জন ক্লাবের মণ্ডপ পাহাড়ের আদলে। শ্রীনগর ২ নম্বর অধিবাসীবৃন্দের পুজোর থিম হারানো শৈশব। মণ্ডপ সাজছে ঘুড়ি, লাটাই, দাবা, লুডো, লাট্টু, কাচের গুলি দিয়ে। রবীন্দ্রপল্লি নেতাজি সঙ্ঘের থিম টাইটানিক। মন্দিরের আদলে মণ্ডপ ইয়ং অ্যাসোসিয়েশনেও। সুভাষপল্লি অধিবাসীবৃন্দে উঠে আসবে দার্জিলিং।
এ ছাড়াও, বারাসতের ইয়ং স্টার, সাম্যসঙ্ঘ, সাউথ ভাঁটরা, স্টুডেন্ট্স গ্রুপ, ছাত্রদল, ইউনাইটেড ক্লাব ও মধ্যমগ্রামে সুভাষ পল্লি, ইয়ংমেন অ্যাসোসিয়েশন, অগ্রগামী সঙ্ঘ, তরুণ সঙ্ঘ, মেঘদূত শক্তি সঙ্ঘ, আপনজন, মাইকেলনগর নেতাজি সঙ্ঘ, অগ্রদূতের মতো পুজোও বিষয়-বৈচিত্রে নজর কাড়বে বলে আশা উদ্যোক্তাদের। |