কাশীপুরে একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের ‘কারেন্সি চেস্ট’-এর দুই নৈশপ্রহরীর মৃত্যুর ঘটনায় তাদের পরিবারের তরফে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তোলা হয়েছে। সেই সঙ্গে মৃতদের পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণও দাবি করা হয়েছে। সোমবার ভোররাতে ব্যাঙ্কের ‘কারেন্সি চেস্ট’-রুমের ভিতর থেকে বাসুদেব ঘোষ ও দেবপ্রসাদ বৈদ্যর মৃতদেহ উদ্ধার হয়।
বনগাঁর রামনগর রোড ধরে পাঁচপোতা যাওয়ার পথে ঝাউডাঙা বাজার থেকে ডানদিকে মাটির রাস্তা ধরে কিছুটা এগোলেই বাসুদেববাবুর বাড়ি। বাড়িতে স্ত্রী, এক মেয়ে, বাবা-মা ও দুই ভাই রয়েছেন। মেয়ে অন্তরার বয়স মাত্র সাত বছর। নিজের একটুকু বাড়ি তৈরির স্বপ্ন ছিল বাসুদেববাবুর। তাই গোবরডাঙার কালীবাড়ির কাছে আড়াই কাঠা জমি কিনেছিলেন। কালীপুজোর পরদিন ২৭ অক্টোবর জমিতে ভিতপুজো করে বাড়ি তৈরির কাজ শুরু করার কথা ছিল। কিন্তু এখন কোথা থেকে কী হবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না স্ত্রী মামণি দেবী। স্বামীর মৃত্যুসংবাদ সবকিছুই ওলটপালট করে দিয়েছে। জানালেন, “গত মার্চ মাসে সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেন। |
গত ১ অক্টোবর চুক্তির ভিত্তিতে ব্যাঙ্কের নৈশপ্রহরীর চাকরিতে যোগ দেন। রবিবার সকালে যখন বাড়ি থেকে বের হন, তখন পরদিন দুপুরের মধ্যে বাড়ি ফিরবেন বলেছিলেন।” সোমবার দুপুরে বাড়ি না ফেরায় ঘন ঘন স্বামীর মোবাইলে ফোন করতে থাকেন মামণি দেবী। কিন্তু রিং হওয়া ছাড়া কোনও উত্তর পাননি। এর আগেও এরকম হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে ফোন না ধরলেও পরে ফোন করতেন বাসুদেবাবু। এ বারও তেমনটাই ভেবেছিলেন মামণিদেবী। কিন্তু অনেকক্ষণ কেটে যাওয়ার পরেও পাল্টা ফোন না আসায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েন তিনি। সোমবার বেলা সাড়ে তিনটে নাগাদ দু’জন লোক বাড়িতে এসে জানান, তাঁরা বাসুদেববাবুর সহকর্মী। তিনি আরজিকর হাসপাতালে ভর্তি আছেন। খবর পেয়েই দুই ভাই শুকদেব ও জয়দেববাবু কয়েকজন প্রতিবেশীকে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। পরে রাস্তায় জয়দেববাবু ফের দাদার মোবাইলে ফোন করলে ফোন ধরে কাশীপুর থানার পুলিশ। সেখান থেকেই জয়দেববাবু দাদার মৃত্যুর খবর পান। বাসুদেবাবুর পরিবারের অভিযোগ, ব্যাঙ্কের তরফে কেউ তাঁদের কোনও খবর দেননি। ব্যাঙ্কের আচরণে বাসুদেববাবুর মৃত্যু নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে ঘোষ পরিবারে। ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলে কাশীপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন জয়দেববাবু। সেইসঙ্গে ক্ষতিপূরণেরও দাবিও জানিয়েছেন। গ্রামে বেশ জনপ্রিয় ছিলেন বাসুদেববাবু। সোমবার তাঁর মৃত্যুর সংবাদে পরিবারের সঙ্গে গোটা গ্রামও শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়ে। শোকার্ত গ্রামে মঙ্গলবার একটি ঘরেও উনুন জ্বলেনি। |
একসাথে সকলে মিলে খাওয়াদাওয়া হবে বলে ভাত বেড়েও বাবার সঙ্গে বসে আর খাওয়া হল না বড় মেয়ে বীণাদেবীর। কারণ ততক্ষণে বাবা দেবপ্রসাদবাবুর মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া হয়েছে মর্গে। সোমবার ভোররাতে দুঘর্টনার পর কেটে গিয়েছে কয়েক ঘণ্টা। মঙ্গলবার গ্রামে গিয়ে দেখা গেল দেবপ্রসাদবাবুর মৃত্যু নিয়ে ব্যাঙ্কের গাফিলতি নিয়ে সরব পরিবারের সদস্য থেকে গ্রামবাসী সকলেই।
হাসনাবাদ থানার চক খাঁপুর গ্রামে ডাঁসা নদীর ধারে বৈদ্যপাড়ায় বাড়ি ভুজঙ্গধরবাবুর। ওই বাড়িরই বড় ছেলে দেবপ্রসাদ। কাজ করতেন সেনাবাহিনীতে। সম্প্রতি অবসর নেন। চার মেয়ের মধ্যে তিন মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। স্বামীর মৃত্যুতে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়া ছেলে কৌশিক ও অষ্টম শ্রেণিতে পড়া মেয়ে মমতাকে নিয়ে এখন কী করবেন ভেবে কুলকিনারা করতে পারছেন না স্ত্রী সরস্বতীদেবী। তাঁদেরও অভিযোগ ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। বড় মেয়ে বীণাদেবী ও স্ত্রী সরস্বতীদেবী জানালেন, “ব্যাঙ্ক থেকে মৃত্যুর খবর জানানো হয়নি। ওই ব্যাঙ্কেরই এক কর্মীর বাড়ি বসিরহাটে। তাঁর বাড়ির লোকই দেবপ্রসাদবাবুর মৃত্যুর খবর দেন। দেবপ্রসাদবাবুর পরিবারের তরফেও ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ দায়ের করে ক্ষতিপূরণ দাবি করা হয়েছে।
|