বঙ্কিমচন্দ্র, কাজি নজরুল এবং দানবীর রাজা যোগীন্দ্রনারায়ণের সঙ্গে সম্পর্ক যুক্ত লালগোলার রাজবাড়ির কালীর নীচের দু’টি হাত বন্দিদশার মতো করবদ্ধ। উপরের দু’টি হাত অবশ্য উন্মুক্ত। শৃঙ্খলিত ওই দেবীর সঙ্গে রয়েছেন লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গনেশ, জয়া-বিজয়া।
বঙ্কিমচন্দ্রের আনন্দমঠে দেবীর সঙ্গে লালগোলার রাজবাড়ির কালীর সম্পর্ক রয়েছে বলে মনে করেন কেউ কেউ। লালগোলার মহেশ নারায়ণ অ্যাকাডেমির অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক কিষাণচাঁদ ভকত জানান, ১৮৭৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর বহরমপুর ব্যারাক স্কোয়ার মাঠে ইংরেজরা খেলাধুলো করার সময়েই পালকিতে চড়ে মাঠ পার হয়েছিলেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট বঙ্কিমচন্দ্র। তাই নিয়ে ইংরেজদের সঙ্গে বঙ্কিমচন্দ্রের বিবাদ আদালত পর্যন্ত পৌঁছয়। মামলায় বঙ্কিমচন্দ্রের পক্ষে স্বাক্ষী ছিলেন লালগোলার দানবীর রাজা যোগীন্দ্রনারায়ণ রায়। ওই সূত্রে লালগোলার রাজাবাড়িতে বঙ্কিমচন্দ্রের যাতায়াত শুরু। কিষাণচাঁদ বলেন, “সেই সময় বঙ্কিমচন্দ্র সুযোগ পেলেই লালগোলায় গিয়ে ওই কালীমন্দিরে সময় কাটাতেন। আনন্দমঠ উপন্যাস ও বন্দেমাতরম সংগীতের ভিত্তিভূমি কলকলি নদীপাড়ে গভীর জঙ্গলে ঘেরা ওই মন্দির, ওই শৃঙ্খলিত কালীমূর্তি এবং নাটোরের রানী ভবানীকে ইংরেজরা বন্দি করায় কলকলি-পদ্মা-ভাগীরথী অববাহিকার সন্যাসীদের বিদ্রোহ।”
ওই কালীমূর্তি নিয়ে রাজা যোগীন্দ্রনারায়ণকে জড়িয়েও একটি মিথ রয়েছে। লালগোলার রাজবাড়ির বর্তমান বংশধর সৌরভ রায় বলেন, “রাজা যোগীন্দ্রনারায়ন রায় একদিন স্বপ্ন দেখেন, মা কালী তাঁকে বলছেন, ‘আমি আর কলকলি পাড়ের মন্দিরে থাকব না। চললাম।’ রাজামশায় পারিষদবর্গ নিয়ে মন্দিরে গিয়ে দেখেন, দেবী মন্দির ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়িয়ে সামনের দিকে ঝুঁকে রয়েছেন। পারিষদবর্গের পরামর্শে দেবীকে তখন শৃঙ্খলিত করা হয়। ওই মিথ লালগোলার মানুষের মুখে মুখে বংশ পরম্পরায় প্রচারিত হয়ে আসছে।” কিন্তু যা মিথ নয় তা হল ওই রাজবাড়ি, মন্দির ও কালীমূর্তির সঙ্গে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ও কাজি নজরুল ইসলামের নিবিড় নৈকট্য। গবেষকেরা মনে করেন, পুত্রশোকে কাতর কবি একসময় এই মন্দিরে নিয়মিত আসতেন। |