নির্ধারিত মূল্যের প্রায় দ্বিগুণ দামে সার বিক্রি করছেন এলাকার ব্যবসায়ীদের একাংশ। ফলে পেঁয়াজ চাষের মরশুমে সারের চাহিদা মেটাতে সেই চড়া দামেই সার কিনতে বাধ্য হচ্ছে চাষিদের। গুদামে সারের বস্তা মজুত থাকলেও অনেক ব্যবসায়ী ফিরিয়ে দিচ্ছেন চাষিদের। এই অভিযোগ তুলে মঙ্গলবার দুপুরে হাঁসখালি বাজারের একটি সারের গুদামে ঢুকে যথেচ্ছ লুঠপাট চালিয়েছেন স্থানীয় চাষিরা।
দোকান মালিক অনিল পাল হাঁসখালি থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। তিনি জানান, স্থানীয় চাষি বলে পরিচয় দিয়ে এ দিন বেশ কয়েক হাজার টাকার সার লুঠ করেছেন। আর ক্ষুব্ধ কৃষকদের অভিযোগ, প্রায় দ্বিগুণ দামে সার বিক্রি করছেন এলাকার ব্যবসায়ীরা। পেঁয়াজ এই এলাকার প্রধান ফসল। এখন পেঁয়াজ বোনার কাজ চলছে। এই পরিস্থিতিতে সারের চাহিদা বেড়েছে। ব্যবসায়ীরেদর গুদামে সার মজুত থাকলেও তা বিক্রি করা হচ্ছে না বলে চাষিদের অভিযোগ। স্থানীয় চাষি প্রদীপ ঠিকাদার, অরবিন্দ বিশ্বাসেরা বলেন, “এলাকায় সারের একটি কৃত্রিম চাহিদা তৈরি করা হয়েছে। ব্যবসায়ীরা জানেন পেঁয়াজ বোনার এই সময়ে চাষিরা যে কোনও দামেই সার কিনবেন। সেই সুযোগে নির্ধারিত দামের প্রায় দ্বিগুণ দামে সার বিক্রি করছেন তাঁরা।” মঙ্গলবার সেই কারণেই তাঁরা দোকানে হানা দেন বলে জানালেন ক্ষুব্ধ কৃষকেরা। তাঁদের অভিযোগ, অন্যান্য ব্যবসায়ীদের মতো এই গুদামেও সার মজুত করে রাখা ছিল। তবে চাষিদের ফিরিয়ে দিচ্ছিলেন দোকান মালিক। অনিলবাবুর ছেলে দীনেশ পালকে এ দিন সারের গুদামে নিয়ে গিয়ে চাষিরা তা খুলে দিতে বাধ্য করেন বলে অভিযোগ। তার পরেই বেশ কয়েক বস্তা সার লুঠ করে নিয়ে যান তাঁরা।
দীনেশবাবু অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “গুদামে হামলার কারণ বুঝতে পারছি না। আমরা কোনও দিনই বেশি দামে সার বিক্রি করি না। সার মজুত করা থাকলে চাষিদের ফিরিয়েও দিইও না। এই হামলার পিছনে অন্য কোনও চক্রান্ত আছে।” নদিয়া ডিস্ট্রিক্ট এগ্রিল ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক নরেশচন্দ্র দাস বলেন, “যে ভাবে দোকান থেকে প্রকাশ্যে সারের বস্তা লুঠ হয়েছে তাতে আমরা আতঙ্কিত। সার ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা নিয়ে সংশয় হচ্ছে।” তিনি বলেন, “বেশি দামে সার বিক্রির যে অভিযোগ উঠছে তা ঠিক নয়। কারণ এই মুহূর্তে ইউরিয়া সার ছাড়া অন্য কোনও সারের তেমন অভাব নেই।”
নদিয়া-মুর্শিদাবাদের যুগ্ম কৃষি আধিকারিক হরেন্দ্রকুমার ঘোষ বলেন, “যে পরিমাণ সার সরবরাহ করা হচ্ছে তাতে চাষিদের কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয়। ওই ব্যবসায়ী বেশি দামে সার বিক্রি করছিল বলে জানতে পেরেছি। আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” জেলাতে সার বিক্রি নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ উঠছে। এর আগেও ৬৮০টি দোকানে হানা দেওয়া হয়েছে। ৮৫ জনকে সাসপেন্ডও করা হয়েছে। ৩ জনের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। এক জন ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগও দায়ের করা হয়েছে। ১৬৯ জনকে শো-কজ করা হয়েছে। সতর্কও করা হয়েছে অনেক ব্যবসায়ীকে। |