কেউ পুজোর মধ্য দিয়ে সংস্কৃতির মেলবন্ধন ঘটাতে চায়, কেউ দীপাবলির সন্ধ্যাটা পুরনো বিবাদ মুছে মেলামেশার অভ্যাসটা ঝালিয়ে নিতে চান। আবার কেউ বা খেলার মাঠে ফেলে আসা ঝগড়াটা তুলে রেখেছেন ওই সন্ধ্যার জন্য!
প্রতি বছর পাল্লা দিয়ে তাই বাড়ছে পুজো কমিটিগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতাও। কোনও পুজো কমিটি অবশ্য জাঁকজমকের অতীত ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে জোরকদমে পুজো আয়োজনে ব্যস্ত। সেই সঙ্গে এ বছরও শহরের বিভিন্ন পুজো কমিটির আতসবাজির প্রদর্শনী দেখতে মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের ঢল নামবে বহরমপুরের কালীপুজোয়।
গুটি কয়েক দামাল যুবককে সঙ্গে নিয়ে প্রয়াত প্রভাসচন্দ্র বোস ওরফে বেনুবাবু রানিবাগান এলাকায় যে পুজোর সুচনা করেন, এ বছর সেই বাসস্ট্যান্ড ইয়ংস কর্নার পুজো কমিটির পুজো ৫০ বছরে পড়ল। পুজো কমিটির সম্পাদক তাপস দাস বলেন, “তার আগে গত ২২ অক্টোবর রবীন্দ্রনাথ ও বিবেকানন্দের পূর্ণাবয়ব প্রতিকৃতি-সহ বিশাল সমারোহে শোভাযাত্রা শহর পরিক্রমা করেছে।” মণ্ডপের ১৪টি চূড়া।
খেলার মাঠের ‘প্রতিযোগিতা’র ছোঁয়া লেগেছে হিন্দ ও ব্রজভূষণের কালীপুজোতেও। সমবায়িকা মোড়ের কাছে পাশাপাশি দু’টি ভবনে দুই ক্লাবের অবস্থান। পুজোকে ঘিরে ওই দুই ক্লাবের রেষারেষি পুরবাসীদের অজানা নয়। হিন্দ ক্লাবের কর্তা শেখর রায় বলেন, “ক্লাব ভবন সংস্কারের জন্য এ বছর পুজোয় জাঁকজমক কিছুটা হলেও কমবে। তবে আলোর গেট গিয়ে সাজানো হবে ক্লাবের সামনের রাস্তা।” ব্রজভূষণ ক্লাবের কর্তা চন্দন সরকার বলেন, “আন্তরিকতার সঙ্গে পুজোর আয়োজনে কোনও ত্রুটি থাকবে না।”
তবে জেলা জজ কোর্ট চত্বর পাঁচিল দিয়ে ঘিরে নেওয়ার পর থেকেই গোরাবাজার স্যান্টাফোকিয়া’র কালীপুজোর জৌলুষ কিছুটা কমে যায়। এ বছর অতীত ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে বদ্ধপরিতক পুজো কমিটির কর্তারা। পুজো কমিটির অন্যতম কাল্টু সিংহ বলেন, “এ বছর ফের জজ কোর্ট লাগোয়া এনসিসি ময়দানে সাংস্কৃতিক উৎসবের আয়োজন হয়েছে। থাকবে আতসবাজির প্রদর্শনী।” সাংসদ অধীর চৌধুরীর পুজো বলে পরিচিত স্যান্টিফোকিয়া কালীপুজোয় বিদ্যাসাগর মূর্তি থেকে জজ কোর্ট মোড় পর্যন্ত রাস্তা বরাবর বাহারি আলোকসজ্জা থাকছে। কমিটির সভাপতি বিশিষ্ট চিকিৎসক স্বপন রায় বলেন, “এ বছর কাল্পনিক সুবিশাল ভৌতিক বাড়ির আদলে মণ্ডপসজ্জা করা হচ্ছে।”
কৃষ্ণনাথ কলেজের পিছনে ভাগীরথীর পাড় লাগোয়া শ্রীশ্রী রক্ষাকালী থান-এর কালীপুজো প্রাচীন ও ঐতিহ্যশালী। কালীমূর্তি এক বছর রেখে দেওয়ার পরে দুর্গাপুজোর একাদশীর দিন ভাগীরথীতে বিসর্জন হয়। তার পরেই ১২ ফুট উচ্চতার কালীমূর্তি গড়ে পুজো হয়। মায়ের মাথায় ৪ ফুট উচ্চতার চাঁদির মুকুট পরানো হয়। জিভ ও দুটি চোখও সোনার তৈরি।
এ ছাড়াও বহরমপুরের উল্লেখযোগ্য পুজোগুলির মধ্যে সৈদাবাদ রাজবাড়ি মোড়ের কাউন্টি ইলেভেন ক্লাব পরিচালিত গোরাবাজার তপোবন কালীপুজো কমিটি, ২ নম্বর বানজেটিয়ার শিবাজি সংঘের, জাগরণ ক্লাবের পরিচালনায় বলরামপুর পশ্চিমগামিনী বকুলতলার কালীপুজো-সহ কাদাই ভট্টাচার্যপাড়া, লালদিঘি পাড়ায় ফ্রি অ্যান্ড ফ্রিডম কালীপুজো কমিটি, যুবসাক্ষী সেবা সমিতির পরিচালনায় শতবর্ষ প্রাচীন কাঠমাপাড়া রক্ষাকালী পুজো কমিটি, নতুন বাজার ব্যবসায়ী সমিতি, ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে বাবুলবোনা ইয়ংস কর্ণার, গির্জার মোড়ে, শক্তিমন্দির ক্লাবে, গোয়ালপাড়ায় জাঁকজমকপূর্ণ কালীপুজো হয়। |