|
|
|
|
|
চাল-ডাল-কাঁচা আনাজ
নিবেদন পুজোর ভোগে
কিংশুক গুপ্ত • ঝাড়গ্রাম |
|
আড়ম্বর হারিয়েছে সময়ের স্রোতে। তবে ঐতিহ্য আর আন্তরিকতায় আজও অম্লান ঝাড়গ্রামের সেনগুপ্ত বাড়ির পুজো।
ঐতিহ্য মেনেই কালীপুজোয় রান্না করা অন্নভোগ হয় না। অন্নভোগের পরিবর্তে দেবীকে নিবেদন করা হয় কাঁচা শাকসব্জি, চাল, ডাল ও মশলাপাতি। কয়েকশো বছর ধরে এই প্রথা চলে আসছে। আগে পুজোটি হত পূর্ববঙ্গের ফরিদপুরের বান্ধব-দৌলতপুর গ্রামে। সেখানেই ছিল সেনগুপ্তদের আদি ভদ্রাসন। ঐতিহ্যের পুজোর বয়স তিনশো পেরিয়েছে। তবে ১৭৫২ সালে গৃহকর্তা পেশায় প্রখ্যাত কবিরাজ রামগতি সেনগুপ্তর আমলেই ফরিদপুরের পুজোয় জৌলুস বাড়ে। দেশভাগের পর ১৯৪৮ সালে রামগতি সেনগুপ্তর উত্তরসূরিরা পূর্ববঙ্গ থেকে ঝাড়গ্রামে এসে বসবাস শুরু করেন। ঝাড়গ্রাম শহরের বাছুরডোবায় সেনগুপ্ত পরিবারের আবাসস্থল ‘রজনীকুটির’। পূর্ববঙ্গের বসতবাটি ছেড়ে এলেও ঐতিহ্যের পুজো ছাড়তে পারেননি সেনগুপ্তরা। ১৯৪৮ সাল থেকে ঝাড়গ্রামের বাড়িতে সেনগুপ্তদের পারিবারিক দুর্গা ও কালীপুজো শুরু হয়। সেনগুপ্ত পরিবারের প্রবীণ সদস্য সুব্রত সেনগুপ্ত বলেন, “এক সময় লাগাতার বর্গি হামলার জন্য আমাদের পূর্বপুরুষেরা আত্মগোপন করে পুজোর আয়োজন করতেন বলে শুনেছি। ওই অবস্থায় ভোগ রাঁধার সুযোগ হতো না। ভোগ হিসেবে কাঁচা আনাজ নিবেদন করা হত। সেই প্রথা এখনও চলে আসছে।
কাঁচা আনাজের পাশাপাশি দেবীকে ফলমূল, খই, মুড়কি ও নারকেল নাড়ুর নৈবেদ্য দেওয়া হয়। মহানিশার পুজোয় আগে ছাগবলি দেওয়া হত। পরিবারের প্রবীণা আলো সেনগুপ্ত বলেন, “পূর্ববঙ্গের পুজোয় বলির পর শেয়াল আসত। আড়াই দশক আগেও ঝাড়গ্রামে বলিদানের পর পুজো মণ্ডপের সামনে শেয়াল আসতে দেখেছি। ১৯৯২ সাল থেকে বলি বন্ধ করে দেওয়া হয়।” আলোদেবী বলেন, “বাড়ির বেশির ভাগ সদস্যই কলকাতা কিংবা বাইরে থাকেন। আমিও কলকাতায় থাকি। তবে দুর্গা পুজো ও কালীপুজোয় সবাই এখানে চলে আসি। ক’টা দিন হইচই করে কেটে যায়।” ফরিদপুরের পুজোর সময় যাত্রা, কবিগান ও উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের আসর বসত। আতসবাজির রোশনাই নজর কাড়ত আশেপাশের বহু গ্রামের মানুষের। সেই দিন আর নেই হয়তো। নেই সেই জৌলুস। কিন্তু নিষ্ঠায় ঘাটতি নেই এতটুকু। ঐতিহ্যে আজও অনন্য সেনগুপ্ত বাড়ির পুজো। |
|
|
|
|
|