|
|
|
|
স্বপ্নাদেশেই কালীপুজোর সূচনা ঘাটালের হড় বংশে |
অভিজিৎ চক্রবর্তী • ঘাটাল |
৩০০ বছর আগে পাড়ার বন্ধুদের নিয়ে বাড়ির আটচালায় কালীপুজো শুরু করেছিলেন ত্রিলোকরাম হড়। জনশ্রুতি, সেই রাতেই ত্রিলোকরামবাবু প্রতি বছর পুজো করার স্বপ্নাদেশ পান। আর সেই থেকেই ঘাটাল শহরের কোন্নগরের হড় বংশে কালীপুজো শুরু। আজও পরিবারের সদস্যরা (সপ্তম পুরুষ) নিষ্ঠাভরে কালীপুজো করেন প্রতি বছর। পুজোর খরচের জন্য কোনও জমি বা ট্রাস্ট নেই। পরিবারের সদস্যরাই পুজোর খরচ বহন করেন।
আর পাঁচটা পারিবারিক পুজোর মতো হড় বংশেও কালী পুজোর বিশেষ কিছু নিয়ম রয়েছে। ছাগবলির বদলে পুজোর রাতে চালকুমড়োর বলি হয়। বাজার থেকে কেনা নয়, বাড়ির জমিতে চাষ করা চালকুমড়ো বলি দেওয়া হয়। পরিবারের সদস্য সুজিত হড় বলেন, “খরাই হোক বা অতিবৃষ্টি, প্রতি বছর একটি হলেও কুমড়ো হবেই। আর সেই কুমড়োই পুজোর রাতে বলি দেওয়া হয়।” অন্য দিকে পুজোর তিন দিন অন্নভোগের সঙ্গে অড়হর ডালের খিচুড়ি, চিংড়ি মাছ-সহ হরেক রকমের রান্না করা পদ মাকে নিবেদন করা হয়। স্বপ্নাদেশ মেনে ভোগের সঙ্গে থাকে মূলো শাক ভাজা। এ ছাড়া পুজোর শেষ দিন গুড়পিঠে এবং দুধ-পান্তা দেওয়ার রেওয়াজ রয়েছে।কালীর জিভ সোনার। তবে প্রতিমা মাটির। প্রতি বছরই বিসর্জনের ঠিক আগে ওই সোনার জিভ খুলে নেওয়া হয়। দীর্ঘ দিন ধরে ঘাটাল শহরের শিল্পী প্রাণকৃষ্ণ দে বাড়ির এই প্রতিমা তৈরি করে আসছেন। আর প্রথম থেকেই শহরের কোন্নগরে চক্রবর্তী বাড়ির সদস্যরা পুজোর পুরোহিত। গত ষাট বছর ধরে পুজো করছেন বামাপদ চক্রবর্তী। শিলাবতী নদীর তীরে শহরের এই প্রাচীন পুজো দেখতে বহু মানুষ ভিড় জমান। পুজোর ক’দিন নরনারায়ণ সেবা হয়। গোপীনাথ হড়, শ্যামল হড়, দেবাশিস হড়েরা জানান, পরিবারের বহু সদস্য কমর্সূত্রে কলকাতা-সহ ভিন্ রাজ্যে থাকলেও পুজোর সময় সবাই বাড়িতে হাজির হন। নিজেদের মতো করে পুজোর ক’দিন নাটক, গান, আবৃত্তি-সহ বিভিন্ন রকমের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মেতে ওঠেন। বিসর্জনের দিন রং-বাহারি আলোয় সাজানো নৌকায় মাকে বসিয়ে বাদ্যযন্ত্র-সহকারে শিলাবতী নদীতে ঘোরানো হয়। তা দেখতেও নদী পাড়ে বহু মানুষ ভিড় জমান। বিসর্জনের পরেই আগামী বছরের দিন গোনা শুরু হয়ে যায়। |
|
|
|
|
|